উটপাখি ও তার বন্ধুরা কেন উড়তে ভুলে গেছে
Published: 24th, September 2025 GMT
কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত রহস্যের সমাধান খুঁজেছেন। উটপাখি, এমু, ক্যাসুয়ারি, কিউই ও রিয়ার মতো উড়তে অক্ষম পাখিরা ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে অবস্থান করছে। এই পাখিরা প্যালিওগন্যাথ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এদের বেশির ভাগই উড়তে পারে না। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে এসব পাখির বিস্তার নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বেশ বিভ্রান্তি তৈরি করছে এসব পাখি। এদের মধ্যে কেবল টিনামু পাখিকে ব্যতিক্রম বলা হয়। এটি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার একটি লাজুক পাখি। সাধারণত শিকারিদের কাছ থেকে পালানোর জন্য অল্প সময়ের জন্য উড়তে পারে। এসব পাখি সারা বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশ বিভ্রান্ত বলা যায়।
গবেষকেরা একসময় মনে করতেন, প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা মহাদেশ ভেঙে যাওয়ার সময় পাখিদের পূর্বপুরুষেরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই ভাঙনের ফলে আজকের দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন মহাদেশ গঠিত হয়েছে। এক জেনেটিক গবেষণা একটি ভিন্ন সময়কালকে নির্দেশ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরির গবেষক ক্লারা উইডরিগ বলেন, প্যালিওগন্যাথ প্রজাতির মধ্যে বিবর্তনীয় বিভাজন ঘটেছে বিভিন্ন মহাদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার অনেক পরে। লিথোর্নিথিডস নামক একটি গোষ্ঠীর জীবাশ্ম পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানা গেছে। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন প্যালিওগন্যাথ। সেসব পাখির ওড়ার ক্ষমতা ছিল। লিথোর্নিথিডসরা ৬ কোটি ৬০ লাখ থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ বছর আগের প্যালিওজিন যুগে বাস করত। লিথোর্নিস প্রমিসকুয়াস বেশ গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিংয়ে পাওয়া যায়। প্রায় অক্ষত অবস্থায় সেই জীবাশ্মের দেখা মেলে।
বিজ্ঞানী উইডরিগ বলেন, পাখিদের হাড় সাধারণত নরম হয় বলে জীবাশ্ম প্রক্রিয়াকরণের সময় প্রায়ই ভেঙে যায়। লিথোর্নিস প্রমিসকুয়াস জীবাশ্মের হাড় ভাঙেনি। জীবাশ্মটি তার আসল আকৃতি বজায় রেখেছে। ভালো অবস্থায় থাকার কারণে এর বুকের হাড় স্ক্যান করা গেছে। ওড়ার পেশির সংযুক্ত স্থানকে পর্যবেক্ষণ করা গেছে। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, লিথোর্নিস প্রমিসকুয়াস উড়তে পারত। অবিরাম ডানা ঝাপটিয়ে হোক বা দীর্ঘ সময় ধরে ডানা ভাসিয়ে উড়তে পারত।
লিথোর্নিসের কঙ্কালে অ্যারোবিক ফ্লায়ারের মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সম্ভবত এরা দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে পারত। এর স্টারনাম বা বুকের হাড়ের আকৃতি এমন পাখিদের সঙ্গে মিলে যায়, যারা দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার জন্য অবিরাম ডানা ঝাপটানো বা ডানা ভাসিয়ে উড়তে সক্ষম। লিথোর্নিস আসলে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে পারত। দূরবর্তী এলাকায় তাদের উপনিবেশ ছিল। প্যালিওগন্যাথরা ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে ওড়ার ক্ষমতা হারানোর আগে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধরা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পাখিরা সাধারণত দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ হলে ওড়ার ক্ষমতা হারাতে থাকে। খাদ্য মাটিতে পাওয়ার সুযোগ থাকলে ও হুমকি দেওয়ার মতো কোনো শিকারি প্রাণী না থাকলে পাখিরা উড়তে চায় না।
জীবাশ্মের তথ্য বলছে, লিথোর্নিথিডসের ঠোঁটে বিশেষ হাড় ছিল। যার মাধ্যমে তারা পোকামাকড় ধরতে পারদর্শী ছিল। ধীরে ধীরে বিবর্তনের ধারায় কেউ কেউ উটপাখি ও রিয়ার মতো দ্রুত দৌড়বিদ হয়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ ক্যাসুয়ারির মতো বিশাল প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়। এরা শক্তিশালী ও বিপজ্জনক লাথির জন্য পরিচিতি লাভ করে।
বৃহত্তর বিবর্তনীয় তত্ত্বকে সমর্থন করে এসব পাখি গতিশীল পূর্বপুরুষের বর্তমান প্রজাতি হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে। এসব উত্তরসূরি পরে আরও স্থিতিশীল বা উড়তে অক্ষম রূপে বিবর্তিত হয়। প্যালিওগন্যাথদের ক্ষেত্রে লিথোর্নিসের মতো উড়ন্ত পূর্বপুরুষেরা দূরবর্তী ভূমিতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। এরপর তাদের উত্তরসূরিরা স্থানীয়ভাবে মানিয়ে নেয়। আর ধীরে ধীরে ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিছু আধুনিক বক ও ইগ্রেটের মধ্যে এমন বিস্তারের ধরন দেখা যায়। রয়্যাল সোসাইটির বায়োলজি লেটার্স জার্নালে এসব পাখির ছড়িয়ে পড়ার গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ক ষমত এসব প খ ব বর ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় বাড়ির পাশে খেলা করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. তাকরিম (৩) ও মো. আদনান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কুট্টাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত মো. তাকরিম (৩) সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া উত্তর এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে ও একই উপজেলার উচালিয়াপাড়া এলাকার মো. আরাফাত মিয়ার ছেলে মো. আদনান (৫)।
আরো পড়ুন:
‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ আহত ৮
আদনান কিছু দিন আগে উত্তর কুট্টপাড়া এলাকায় তার নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। সকালে তার মামাত ভাই তাকরিমের সঙ্গে বাড়ির পুকুরের পাশে খেলা করছিল। খেলার এক পর্যায়ে দুই শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা শিশুদের বাড়ির পাশে না দেখে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাদের সন্ধান পায়নি।
দুপুরে স্থানীয়রা বাড়ির পাশে পুকুরে দুই শিশুটিকে ভাসতে দেখেন। পরে তাদের পুকুর থেকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/পলাশ/বকুল