১৬ বছর পর মন্দির থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, হবে পূজাও
Published: 24th, September 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইসকনপন্থি একটি পক্ষ ও অপর একটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিহত হন মন্দিরের সেবায়েত ফুলবাবু। এরপর থেকেই দুর্গাপূজার সময় মন্দির এলাকায় জারি ছিল প্রশাসনের ১৪৪ ধারা।
দীর্ঘ ১৬ বছর পরে সেই অচলাবস্থা ভেঙে এ বছর প্রশাসনের উদ্যোগে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে অনুমতি দিয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা আয়োজনের। বর্তমানে এই মন্দির এলাকায় মূর্তি তৈরি ও মণ্ডপ সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
আরো পড়ুন:
শিশুটির পরিবারের সন্ধান চায় পুলিশ
কুষ্টিয়ায় শিশুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩
ঠাকুরগাঁও পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, এবার জেলায় মোট ৪৭৬টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব পালন করা হবে। এর মধ্যে ৩৬৬টিতে ইতোমধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাকি মণ্ডপগুলোতেও দ্রুত সিসিটিভি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। ১৬ বছর পর পূজা শুরু হওয়া রসিক রায় জিউ মন্দিরে বিশেষ নজর থাকবে পুলিশ প্রশাসনের।
মৃৎশিল্পীরা দুর্গা দেবীর প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন
স্থানীয় বাসিন্দা খগেন চন্দ্র বলেন, “১৬টা বছর আমরা বাইরে গিয়ে অন্যের মন্দিরে পূজা করতাম। নিজেদের মন্দিরে পূজা করতে না পারাটা আমাদের জন্য অনেক বড় কষ্টের ছিল। অবশেষে আমরা আমাদের মন্দিরে পূজা আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি।”
মনোযোগ দিয়ে মণ্ডপের কাজে সহযোগিতা করা অনিক রায় বলেন, “আমার বয়স এখন ২০ বছর। শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে সর্বশেষ যখন পূজা হয়, তখন আমি খুবই ছোটো। সেই পূজার কথা মনে নেই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকে শুধু বাবা-দাদার কাছে গল্প শুনেছি, এখানে অনেক বড় পূজার আয়োজন হতো। কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। খুব ইচ্ছে ছিল, আমাদের নিজেদের এই মন্দিরে একদিন পূজা হবে, আমরা পূজা করব। এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে।”
সুজলা রাণী বলেন, “বিয়ের পর থেকে আমি এখানে কখনো পূজা হতে দেখেনি। শুধু শুনেছি, এখানে অনেক বড় করে দুর্গাপূজা হতো। খুব ভালো লাগছে এবার। এখন থেকে নিজেদের মণ্ডপে পূজা করতে পারব।”
সান্তনা রাণী বলেন, “এবার পূজা আমাদের জীবনে কিছুটা আলাদাভাবে এসেছে। এবার যেনো পূজার আনন্দ কিছুটা বেশি। খুবই আমেজ নিয়ে নতুন কাপড় কেনাকাটা করেছি। পূজার দিনে কী কী করবো তার পরিকল্পনা করেছি। এবার অনেক আনন্দ হবে।”
ঠাকুরগাঁও রসিক রায় জিউ মন্দিরের সেবায়েত অপু সরকার বলেন, “প্রায় ১৬ বছর পরে এখানে পূজা হচ্ছে। তাই সবার মাঝে উচ্ছ্বাস কিছুটা বেশি। আমরা আয়োজনে কোনো কমতি রাখছি না। অনেক বড় ও জমকালো আয়োজন হবে আশা করছি।”
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, “দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রসিক রায় জিউ মন্দিরে এবারের দুর্গোৎসব হয়ে উঠেছে আনন্দ–উচ্ছ্বাসে ভরা এক মহোৎসব। প্রশাসনের সহযোগিতা ও দুই পক্ষের সমঝোতায় যে উৎসবের দ্বার খুলেছে, তা শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে।”
তিনি আরো বলেন, “জেলা প্রশাসনের একান্ত প্রচেষ্টায় দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব ১৬ বছর পর র মন দ র ১৪৪ ধ র আম দ র ঠ ক রগ
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ বছর ধরে প্রথম আলো সংরক্ষণ করে চলেছেন চুয়াডাঙ্গার এই দম্পতি
চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ায় থাকেন কামরুল আরেফিন ও সালমা খাতুন। ১ নভেম্বর সকালে তাঁদের বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে ঢুকতেই কাগজের গন্ধ পেলাম। এই কক্ষেই তাঁরা গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালা। যার বেশির ভাগজুড়ে কেবলই প্রথম আলো। দোতলায় আরেকটি কক্ষের আংশিক সারি সারি করে পত্রিকায় সাজানো। প্রথম আলোর সহযোগী প্রকাশনা ও ম্যাগাজিনগুলো আলাদাভাবে সাজানো। তাঁদের এই আর্কাইভে প্রতিবেশী ছাড়াও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী পুরোনো পত্রিকা পড়তে আসেন। কেউ কেউ গবেষণার কাজে সংগ্রহ করেন পুরোনো প্রতিবেদন। দুজনেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমাদের এই আর্কাইভ প্রথম আলোকে ভালোবেসে গড়া।’
কামরুল আরেফিন বলেন, ‘প্রথম আলো প্রকাশের আগে আমি ভোরের কাগজ–এর পাঠক ছিলাম। কাগজটির সম্পাদক মতিউর রহমান নতুন ধাঁচের একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দিলে তা বাজারে আসার আগেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। সালমা বিষয়টি আমার নজরে আনে। নতুন এই পত্রিকা সংগ্রহ করার বিষয়ে দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিই।’
১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর সকালে ক্রোড়পত্রসহ উদ্বোধনী সংখ্যা হাতে পাওয়ার পর অন্য রকম ভালো লাগায় তাঁদের মন ভরে যায়। কামরুল বলে যান, ‘প্রথম দিনেই দেশবরেণ্য লেখকদের লেখায় সমৃদ্ধ ছিল। পরবর্তী দিনগুলোতেও যার ধারাবাহিকতা দেখতে পাই। এমন ভালো লেগে যায় যে প্রথম আলোকে আর ছাড়তে পারিনি।’
সংগ্রহের একাংশ দেখাচ্ছেন কামরুল আরেফিন