বাংলাদেশের জন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কতটা যৌক্তিক
Published: 24th, September 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক আলাপ যখন শুরু হয়, তখন থেকেই এর সঙ্গে আরও একটি আলাপ আমরা দেখতে পাই, সেটি হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির প্রচলন।
সাম্প্রতিক সময়ে এ আলাপ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না; বরং বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে আসে।
খুব সহজ করে বললে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ধারণা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে সংসদে প্রার্থী বা সদস্য তাঁর দলের মোট ভোটের অনুপাতে নির্বাচিত হন।
অনেক সময় ভোটের অনুপাতের বাইরেও প্রথাগত ভোট, যা ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) নামেও পরিচিত এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ধারণার যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমেও নির্বাচন করা হয় কোনো কোনো দেশে। এর মধ্যে জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ।
আরও পড়ুনআনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব: দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় প্রয়োগ করা কি সম্ভব০৮ নভেম্বর ২০২৪সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর মধ্য দিয়ে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের যথাযথ প্রতিফলন থাকে, যেখানে ভোটারের প্রতিটি ভোট প্রার্থী বা দল হেরে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে এফপিটিপি ব্যবস্থায় সেটি থাকে না। এ কারণেই ছোট দলগুলোর জন্য পিআর পদ্ধতি একটি কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। তবে এখানে প্রশ্ন হলো, এর বাস্তবায়নের জন্য যে রাষ্ট্রকাঠামো ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেই অবকাঠামো কি বাংলাদেশের আছে বা নিকট ভবিষ্যতে কি সেটি আমার অর্জন করতে পারব?
তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কার্যকর একটি পদ্ধতি। অনেক দেশেই এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এখানে আমাদের এ-ও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতায় পিআর পদ্ধতি যথাযথভাবে কাজ করবে কি না, সে বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা প্রয়োজন। তা না হলে হুট করে আবেগের বশবর্তী হয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি নামের একটি নতুন ব্যবস্থার প্রচলন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, যেমন দুর্বল নির্বাচন কমিশন এবং বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য একদমই সহায়ক নয়। যেখানে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে হঠাৎ এত স্বল্প সময়ের মধ্যে পিআরের মতো একটি নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক কাঠামো বাংলাদেশের সামনে নেই।বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, যেমন দুর্বল নির্বাচন কমিশন এবং বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য একদমই সহায়ক নয়। যেখানে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে হঠাৎ এত স্বল্প সময়ের মধ্যে পিআরের মতো একটি নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক কাঠামো বাংলাদেশের সামনে নেই।
এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক সংস্কার। আমরা যদি গত এক বছরের অধিক সময়ের রাষ্ট্র পরিচালনার দিকে তাকাই, তাহলে সংস্কার নিয়ে আমাদের খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো ইঙ্গিত মেলে না। আবার রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্য না এলে এ ধরনের একটি ব্যবস্থা আমাদের জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে দক্ষ জনবল প্রয়োজন, যা স্বল্প সময়ে তৈরি করা করাও অসম্ভব।
আরও পড়ুনসংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফেরার শঙ্কা যেখানে০৭ জুলাই ২০২৫আমাদের আরও মনে রাখতে হবে, প্রথাগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত, সেখানে আমরা দেখতে পাই যে তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো প্রার্থীদের সরাসরি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন বা করতে পছন্দ করেন। সেখানে পিআর পদ্ধতিতে একজন ভোটারের সেই স্বাধীনতা থাকে না।
এখানে ব্যক্তির পরিবর্তে দলকে ভোট দিতে হয়, যেখানে দল পরবর্তী সময়ে প্রার্থী নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায় থাকে। যদিও কোনো কোনো দেশে একটি মিশ্র পদ্ধতির প্রচলন করে আসছে, যেখানে ব্যক্তি ও দল—উভয়কেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থীর সঙ্গে জনগণের যে প্রথাগত যোগাযোগ থাকে, সেটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণ রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে আরও দূরে সরে যেতে পারে।
আমরা যদি সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। প্রস্তুতিহীন অবস্থায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রচলন সে প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ভোটারদের মধ্যে একধরনের আস্থার অভাব গড়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুনসংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা: আরও স্বৈরাচারী হবে দল ও দলপ্রধান০৭ নভেম্বর ২০২৪বিগত সময়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার যে অক্ষমতা আমরা বারবার দেখিয়েছি, সে অক্ষমতার কারণে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে এখনো আস্থার অভাব রয়েছে। আমাদের সবার আগে সে আস্থার জায়গা অর্জন করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যথাযথ সময় এখন নয়।
এর সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটারদের মধ্যে পিআর-বিষয়ক সঠিক ধারণার অভাব। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য যেমন একটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন এ বিষয়ে জনসাধারণের বোঝাপড়ার ইতিবাচক পরিবর্তন। যার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন, যা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই।
সে কারণেই অনেক গবেষক মনে করেন, একটি দুর্বল সাংবিধানিক কাঠামোতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন বিভাজিত করবে, তেমনই দেশের জনগণকেও দ্বিধাবিভক্ত করে রাখবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অন্তরায়। এখানে আমাদের প্রধান যুক্তি হতে হবে এই পদ্ধতি কি দেশের জন্য কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আসবে?
আরও পড়ুনআনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ১৮ অক্টোবর ২০২৪বিশ্বজুড়ে দুর্বল সাংবিধানিক কাঠামোযুক্ত দেশগুলোয় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি ভালোভাবে কাজ করছে না। এর প্রচলন ধাপে ধাপে শুরু করতে হবে। এ জন্য একটি লম্বা সময়ের প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে যুক্তিযুক্ত নয়।
গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাভিত্তিক নীতির সঙ্গে আমাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির সম্ভাব্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক কী হতে পরে, সে বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হবে। বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া কোনো পদ্ধতি আসলে সমাধান নয়। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও চর্চার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভবিষ্যতে একটি মিশ্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
পাশাপাশি জনপরিসরে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান রাখতে হবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, থিঙ্কট্যাংক, নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় আনা এবং তাদের মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, যা ভবিষ্যতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের আলোচনাকে একটি জনভিত্তি দেবে।
আরও পড়ুনআনুপাতিক পদ্ধতির ভোট: নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা কী বলছে১৭ অক্টোবর ২০২৪এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, একটি অস্থায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের মৌলিক পরিবর্তন জনমনে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করবে, যা পরবর্তী সময়ে আমাদেরই বয়ে বেড়াতে হবে। তাই এ সিদ্ধান্ত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গবেষণাভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে নিতে হবে, যা একটি নির্বাচিত সরকারের অধীন হওয়া অধিক জরুরি। সেটি হতে হবে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে, যে প্রক্রিয়া থেকে বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত। তাই কিছু রাজনৈতিক দলের তুষ্টি লাভের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যা একটি প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবস্থা হিসেবে রয়ে যায়।
বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত লেখকের নিজস্ব
[ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে এ লেখা ‘পিআর বাংলাদেশের জন্য কতটা যৌক্তিক পদ্ধতি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ক ব যবস থ ব যবস থ য র প রচলন আম দ র স ন দ র বল র জন য প দ শ র জন জনগণ র ন কর র জন য এ র র জন দলগ ল ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপিতে ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্যাগী, স্বচ্ছ, হামলা-মামলার শিকার ও কারাভোগকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ২৩৭টি মনোনয়ন ঘোষণা করলেও এখনও সুযোগ রয়েছে শিক্ষক সমাজকে মূল্যায়ন করার। আমরা আশা করবো বিএনপি দীর্ঘদিনের নির্যাতিত ত্যাগী শিক্ষকদের মনোনয়নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক মর্যাদা রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যজোট সবসময় প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছে। যখন গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ ছিল, তখনও আমরা থেমে থাকিনি। ‘আমরা বাংলাদেশী’ এবং ‘প্রফেশনাল মুভমেন্ট’-এর মতো নতুন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। বিগত ১৭ বছর শিক্ষক নেতাদের ওপর নির্যাতন, মামলা, হয়রানি, চাকরিচ্যুতি, হামলা ও কারাবরণ- সব কিছুই আমরা দেখেছি, সহ্য করেছি। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো থেকে পিছপা হইনি। এই ত্যাগ-তিতিক্ষা কেবল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন, ছাত্রসমাজ এবং লাখো অভিভাবকের স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে।’’
লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আর সেই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। জাতীয় সংসদে যদি সৎ, স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক, নীতিবান ও জনদরদী প্রতিনিধি না থাকেন তাহলে দেশ কখনও সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে না। শিক্ষকেরা দেশের বিবেক। শিক্ষকরা সমাজের নৈতিক ও বৌদ্ধিক নেতৃত্ব দেন। তাই জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল ইতোমধ্যেই ৩১ দফা প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মানবাধিকার, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের যে পরিকল্পনা দলটি ঘোষণা করেছে, তাতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ থাকলে নীতিনির্ধারণ আরও শক্তিশালী হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৭ বছর শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের বহু নেতা হামলার শিকার হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, দীর্ঘ কারাবাসসহ মারাত্মক হয়রানি সহ্য করেছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, পরিবারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। কিন্তু তারা আন্দোলনের পথ ছাড়েননি। আজ যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে, যখন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা সামনে, তখন এই ত্যাগী, স্বচ্ছ, নীতিবান শিক্ষক নেতাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যারা ত্যাগ করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলেছেন, তারাই নতুন রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারেন।’’
এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে তারা নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্যাগী শিক্ষককে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা/নাজমুল//