বিদেশে পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার বিকেলে নগরের কালুরঘাট এলাকায় সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসি কার্যালয়ের ড্রয়ার ও ভল্ট থেকে এই টাকা জব্দ করা হয়। এর আগে দুদক আরামিটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে। তিনিই ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তুলেছিলেন সম্প্রতি। দুদক বলছে, টাকাগুলো নগদ করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের জন্য রাখা হয়েছিল।

দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সই করা চেকগুলোর আসল কপিসহ (মুড়ি) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকেলে ব্যাংক থেকে তোলা ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুদক।

দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আটক জাহাঙ্গীর টাকাগুলোর বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি। টাকাগুলো নগদ করে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে আসছেন। আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়। এর আগে অর্থ পাচার মামলায় দুদকের হাতে গ্রেপ্তার আরামিটের দুই কর্মকর্তার আইনি লড়াইয়ের খরচ বহনের জন্য এ টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন আরামিট পিএলসির দুই এজিএম মো.

আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল। ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচারের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে দুদক মনে করছে, নতুন করে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলনের সঙ্গেও আত্মসাৎ বা পাচারের যোগসূত্র রয়েছে।

গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন। মামলায় জাবেদ, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাই-বোন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর কর্মকর্তা উৎপল পালের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ এবং উৎপল পাল দুদকের কাছে অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আটক৪ ঘণ্টা আগে

তদন্তে জানা গেছে, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকের চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। পরে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। দুদক বলছে, জালিয়াতি ও আত্মসাতের এই ঘটনা ঘটে ২০১৯-২০ সালে। তখন জাবেদ ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যান। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় একাধিক সম্পদ রয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ ও তাঁর পরিবার। এভাবে বহু দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত ৭৬ ল খ ট ক প চ র কর ব দ কর আর ম ট মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে রাঙামাটির কাউখালী থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তার বিপি নম্বর ৯৪১৪১৭১২০৯।

অভিযুক্ত তুহিন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

আরো পড়ুন:

৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ

মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তুহিনের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদানের সময় তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে নিজেকে ওই মুক্তিযোদ্ধার দৌহিত্র পরিচয় দেন। পরে সেই নকল হলফনামা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় পুলিশে চাকরি নেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক বলেন, ‘‘তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। হলফনামায় দেওয়া স্বাক্ষরও আমার নয়। কে বা কারা প্রতারণা করেছেন, তাদের শাস্তি চাই।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে মোহনগঞ্জেই, সুনামগঞ্জে নয়।’’

অভিযোগকারী হোসনা বেগম বলেন, ‘‘তুহিন প্রতারণা করে আমার অজান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হকের সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন। তিনি আমার নানা নন।’’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তুহিন দাবি করেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মনজুরুল হক আমার নানা, তার সনদেই চাকরি নিয়েছি। প্রতারণা করে থাকলে এতদিন চাকরিতে থাকা সম্ভব হতো না।’’

ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিসম্মত হলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/ইবাদ/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • না’গঞ্জে জেলা পর্যায়ে প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত 
  • সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আটক
  • বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা
  • রাজশাহীতে খাদ্য বিভাগে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন
  • বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি
  • সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অর্থপাচার: ২ সহযোগীর আদালতে জবানবন্দি
  • কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলার ঘটনায় আরও দুজন গ্রেপ্তার
  • কুমিল্লায় চার মাজারে হামলার তিন দিন পর গ্রেপ্তার ২