দেশ নারী ও শিশুদের জন্য আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে: সিপিবি
Published: 27th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণসহ সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির নেতারা বলেছেন, সরকারের চরম উদাসীনতায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমতল পর্যন্ত গোটা দেশ নারী, এমনকি শিশুদের জন্যও আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে।
আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিপিবি এসব কথা বলেছে। বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন অবিলম্বে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের আটক ও নির্যাতনের প্রতিবাদও জানিয়েছেন তাঁরা।
সিপিবি নেতারা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তাদের শপথ রক্ষা করবে ও পেশাদারত্ব বজায় রাখবে—এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। তাই প্রতিবাদ দমনের পরিবর্তে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকারের।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ মে বান্দরবানে একজন খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। গত কয়েক মাসে ওই ঘটনার বিচারে তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। ফলে বিচারহীনতার চলমান বাস্তবতা একের পর এক বর্বরতা ও অপরাধের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকার মুখে মুখে অনেক পরিবর্তনের কথা বললেও বাস্তবতার সামান্য পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়নি।
অব্যাহত ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে এবং নারীর নিরাপত্তা ও স্বচ্ছন্দ জীবনের অধিকার প্রসঙ্গে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নীরব থাকারও সমালোচনা করেন সিপিবির নেতারা। তাঁরা বলেন, ডানপন্থী দলগুলো রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসনকাঠামোর প্রতি শর্তহীন আনুগত্য থেকে নীরবতার ভূমিকা গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে তাদের ক্ষমতার সিঁড়ি আরোহণের হিসাব-নিকাশ ও তাগাদা নানাভাবে সামাজিক অপরাধীদের মদদ যোগাচ্ছে।
নারী-পুরুষ, পাহাড়ি-বাঙালিনির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ জীবনের নিশ্চয়তা অর্জনে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে এবং সমাজের সর্বত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিপিবির নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।
২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।
৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।
৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫