জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, সেটা জোরালো ও তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘের মতো সর্বোচ্চ বৈশ্বিক ফোরামে দাঁড়িয়ে তিনি যখন ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আসেন, তখন এ নিয়ে সংশয়ের আর কোনো অবকাশ থাকার সুযোগ নেই। ভাষণে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ ও সংস্কার উদ্যোগ, রোহিঙ্গা সংকট, বাণিজ্যযুদ্ধ, জলবায়ু সংকট, গাজা যুদ্ধসহ আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন, সংকট উত্তরণের উপায় নিয়েও পরামর্শ দেন।

শুক্রবার রাতে সাধারণ পরিষদে অধ্যাপক ইউনূসের ভাষণকালে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজির বিরল। এটা বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। গতবারের ভাষণে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশের গণমানুষ, বিশেষ করে তরুণসমাজের অফুরান শক্তি কীভাবে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এবারের ভাষণে তিনি রূপান্তর–যাত্রায় বাংলাদেশ কতটা অগ্রসর হতে পেরেছে, সংক্ষেপে সেই খতিয়ান তুলে ধরেন।

সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধীরগতি কেন, তার একটা ব্যাখ্যা মেলে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। সরকারপ্রধানের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে সংস্কার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশের মতো ‘সহজ’ পথে না গিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে এমন একটি কঠিন পথ বেছে নিয়েছে, যেন সেটা টেকসই হয়। সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন এবং কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে ৩২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের যে দীর্ঘ সংস্কার ও ঐক্য প্রচেষ্টা, সেটা সত্যিই এক ঐতিহাসিক এবং কঠিনতম যাত্রা।

বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রত্যাবর্তনের পথ যাতে বন্ধ হয়, সেটাই প্রত্যাশা করেন নাগরিকেরা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি মনে করেন, আগামী নির্বাচনে যে দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে আর কোনো অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না। আমরা মনে করি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সংস্কার বাস্তবায়ন করাটাই তাদের মূল দায়িত্ব হবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে সম্পদ পাচার যে একটি বড় আন্তর্জাতিক সমস্যা, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে সেটা স্পষ্ট করেছেন। যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের পাচার করা সম্পদ গচ্ছিত আছে, সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। উন্নয়নশীল দেশ থেকে পাচার বন্ধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধিবিধান প্রণয়নের যে প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা রোহিঙ্গা সংকটের মাত্রা ও বিস্তৃতি কতটা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ কতটা ভুক্তভোগী হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের ভাষণে সেটা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। রাখাইনের সমস্যাগুলোর রাজনৈতিক সমাধান যে অপরিহার্য, সেটা তিনি বিশ্বনেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তহবিল–সংকটের কারণে রোহিঙ্গা শিবিরের মানবিক সংকট নিরাপত্তাঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে জানিয়ে তিনি দাতাদের সাহায্য বাড়াতে ও নতুন দাতাদের অনুদান প্রদানের আহ্বান জানান।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে এখনই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই ফিলিস্তিন সমস্যার একমাত্র সমাধান।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে দেশবাসী ও বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে স্পষ্ট একটা বার্তা পেয়েছে বলেই আমরা মনে করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা

কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।

সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ