এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও কি ফাঁকা বুলি থাকবে
Published: 1st, October 2025 GMT
নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক অঙ্গন সরব হয়ে ওঠে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে। নির্বাচনী ইশতেহার হলো দেশের মানুষের নিকট আগামী দিনগুলোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি, যে প্রতিশ্রুতি তারা নির্বাচনে জয়ী হলে বাস্তবায়ন করবে। আমাদের দেশের বহুল প্রতীক্ষিত ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে গণমানুষের মনে যেমন প্রবল আগ্রহ ও প্রত্যাশা দৃশ্যমান, ঠিক তেমনই রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের মধ্যেও বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে আবার এখনই নানা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন নিজ দলের মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
এসব ব্যক্তিক পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নিজ দলের ইশতেহারই প্রতিফলিত হয়ে থাকে, যা মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে প্রস্তাব করা হয়। সেসব প্রতিশ্রুতি ভোটের রাজনীতিতে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, সেটা এক জরুরি প্রশ্ন হলেও ইশতেহার জাতীয়ভাবে ইতিবাচক জনমত গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে বর্তমান সময়ের ভোটার তাঁর ভোটের ব্যাপারে যে অনেক সচেতন, সেটি আমরা ইতিমধ্যে বেশ বুঝতে পারছি। এটি বোঝা যায় সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফল থেকে, যেখানে একটি বিষয়ে সব গবেষণা প্রতিবেদন কাছাকাছি ফলাফল তুলে ধরছে। সেটা হলো দেশের একটা বড় অংশের ভোটার তাঁর ভোটের সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। এটা বিগত সময় থেকে কিছুটা ভিন্ন বাস্তবতাকে নির্দেশ করে।
এসব ভোটার নিশ্চিতভাবেই বেশ ভেবেচিন্তে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, যেখানে প্রার্থীর ব্যক্তিক ক্যারিশমাকে মূল্যায়ন করার পাশাপাশি প্রার্থীর রাজনৈতিক দলের ইশতেহারকেও যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। সমাজের সচেতন ভোটার হিসেবে এর অধিকাংশই নতুন ভোটার এবং যাঁদের ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে এই তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে হলে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। বিগত সময়ের প্রথাগত ইশতেহারের ধারণা থেকে বের হয়ে যাঁরা উন্নয়নমুখী, বাস্তবায়নযোগ্য ও জনস্বার্থভিত্তিক ইশতেহার নিয়ে হাজির হবেন, তাঁদের প্রতিই এই ভোটারদের নজর থাকবে বলে মনে হয়।
এই সময়ে নির্বাচনী ইশতেহার যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে এই তরুণ ও সচেতন ভোটারদের জন্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত সময়ের ইশতেহারগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাই যে বেশির ভাগই অবাস্তবায়িত থেকে যায়, যা আদতে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।
আমরা এমনটাও দেখি যে ইশতেহার গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ না দেওয়ার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ থাকে ‘মেগা প্রজেক্ট’–এর দিকে। আর এমন নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের আড়ালে গণমানুষের স্বপ্নও ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। উন্নয়নকে মেগা প্রজেক্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার প্রবণতার কারণে আমরা দেখতে পাই, নগরের বুক চিরে গড়ে ওঠা প্রকল্পগুলো ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে উন্নয়নের তথাকথিত প্রতীক, যা আমরা বিগত আওয়ামী আমলে দেখেছি।
সেই উন্নয়ন পরবর্তী সময়ে মুখ থুবড়ে পড়লেও তা তাদের সমর্থকদের মধ্যে থেকে যায় উন্নয়নের এক ‘মেগা বয়ান’ হিসেবে। তাই হয়তো নির্বাচনী ইশতেহারে নানা রকম মুখরোচক উন্নয়নের বয়ান থাকে, যেখানে জনবান্ধব উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত থেকে যায়, যা কেবল একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থই রক্ষা করে। এর মধ্য দিয়ে শোষণমূলক একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তাই এ ধরনের শোষণমূলক ব্যবস্থা তৈরির প্রবণতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে।
এর বাইরেও নির্বাচনী ইশতেহারগুলো কেন বাস্তবতার মুখ দেখছে না, তার পেছনে বেশি কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়। যেমন প্রথম কারণটি হলো নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে যথাযথ গবেষণার অভাব। গতানুগতিক নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের চর্চা থেকে বের হয়ে তথ্য–উপাত্তনির্ভর ইশতেহার প্রণয়ন করার উদ্যোগ যদি কোনো রাজনৈতিক দল হাতে নেয়, তাহলে সেই রাজনৈতিক দল নিশ্চিত করেই নির্বাচনী প্রচারণায় অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবে। কেননা এই ইশতেহার বাস্তবসম্মত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, যা স্থানীয় সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। যার প্রতিফলন অনেক রাজনৈতিক দলে না থাকলেও বিএনপির ইশতেহারের অনেক ক্ষেত্রে আমরা তা দেখতে পাই।
টেকসই পরিকল্পনা না থাকলে উন্নয়নের রূপরেখা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকে না। স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতির চাহিদা অনুযায়ী একটি উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করার প্রচেষ্টা থাকলে স্থানীয় অধিবাসীদের চাহিদা অনুযায়ী কাজের সুযোগ তৈরি করা যায়। উন্নয়ন প্রচেষ্টায় টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ইশতেহারে থাকা জরুরি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, যা আমাদের একটি সমন্বিত উন্নয়নের স্বপ্নের অনুপস্থিতিকে নির্দেশ করে।
স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও মধ্যে একটি মতৈক্য থাকা উচিত, যা বর্তমানে অনুপস্থিত। এর কারণে আমাদের উন্নয়নের স্বপ্নও রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়ে পড়ে, যেখানে দেশের স্বার্থে চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার অভাব দৃশমান। যে কারণে আমরা দেখি, একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের স্বপ্নেরও বদল ঘটে। ফলে আমাদের উন্নয়নপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় আর আমরা জাতি হিসেবে আরও পিছিয়ে যাই। দেশের উন্নয়নের মৌলিক কিছু বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকা উচিত নয়।
ইশতেহার প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটি হলো প্রস্তাবিত প্রকল্পের বাস্তবায়নযোগ্যতা মূল্যায়ন করা। এটি না করার কারণেই অনেক প্রকল্প বিগত সময়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই আমাদের জন্য প্রয়োজন বাস্তবায়নযোগ্য, দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই উন্নয়নের প্রস্তাবনার সঙ্গে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নির্বাচনী ইশতেহারে শিল্পায়নের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার বলে মনে করি। এ সময়ে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য উদ্যোগ ও যথাযথ বাজেট বরাদ্দ থাকে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কেন্দ্র বা হাব হতে পারে না।
গতানুগতিক ইশতেহারের আরেকটি দুর্বলতা হলো এতে বাস্তবায়নের কোনো কর্মকৌশল বা দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের মনোজগতে তা খুব আলোড়ন তুলতে পারে না এবং মানুষও সেটা বোঝার কোনো চেষ্টা করে না। তাই ইশতেহার যেন জনগণের মনোজগতের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাতে পারে এবং ব্যক্তি ও সমাজজীবনে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সেটা তাদের বোঝাতে হবে। পরিষ্কার ধারণা থাকলে জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।
বিগত সময়ের মতো কেবল ভোটারদের সমবেদনা পাওয়াই যেন নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান লক্ষ্য না হয়। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উন্নয়নের জন্য ইশতেহার নয়; বরং ভোটের জন্য ইশতেহার প্রণয়নের প্রবণতা দেখে আসছি। তাই এ সংস্কৃতির বদল এখনই প্রয়োজন, যার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোরই, যেখানে তারা নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। তাই যারা গণমুখী, বাস্তবায়নযোগ্য ও টেকসই প্রতিজ্ঞা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আসবে, তারাই এবার তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণে এগিয়ে থাকবে।
বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ই র জন ত ক ইশত হ র র গণম ন ষ র ইশত হ র ন র ইশত হ র ব গত সময় প রকল প আম দ র মন য গ র জন য ত সময় ট কসই সময় র নয়ন প
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের মাধ্যমে আইনপ্রণয়ন, সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইনপ্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা তাঁরা চান না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ তাঁরা করতে দেবেন না।
দেশে একটি দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তারা চায়, এ দেশের নারীরা যেন অন্দরমহলে বন্দী থাকে। যেন বাংলাদেশে অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে। নারীর অগ্রগতি-উন্নতি যেন না হয়। সে জন্য তারা বলছে, কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।
নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক আছে। কাজেই নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে চাকরিদাতারা তাদের চাকরি দিতে চাইবে না। এতে নারীর কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। তাই যাঁরা নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য খারাপ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ তাঁরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলেন যে, নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের পুরো নারী সমাজ জেগে উঠবে। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, ‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে।’
নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তিনি বলেন, নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া, দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবে না বাইরে থাকবে, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, ‘পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই।’
যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছে বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাত্রিবেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যেকোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তাঁরা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হ্যারেস করা হয়েছে। হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে, অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, নিলুফা চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সহসভাপতি রেহানা আক্তার প্রমুখ।