ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে সারা দেশের মতো বরিশালের নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নদী-সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ থাকবে।

নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলেদের সহায়তায় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। 

আরো পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার খবরে হাঁকডাকে মুখর চাঁদপুরে ইলিশের বাজার 

পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার আলোকে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের মতামত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পরামর্শের ভিত্তিতে ২২ দিন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।’’ 

উপদেষ্টা জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন ও অমাবস্যার পরের তিন দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান–২০২৫’ চলবে। এ অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশ নেবে।

এ সময় ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে, যা মোট ১৫ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন চালের সমান।

বরিশালের মেঘনা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নৌপুলিশ ও হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে ড্রোন উড়িয়ে নজর রাখা হবে। মা ইলিশ নিধনকারীদের ধরতে মেঘনা নদীতে নজরদারির জন্য অন্তত চারটি ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোন যেখানে ইলিশ ধরার তথ্য দেবে, সেখানে দ্রুত স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালানো হবে। 

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযান পরিচালনার জন্য জেলায় ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

আরো বলা হয়েছে, বরিশাল জেলায় মোট জেলের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে ৬৬ হাজার ৫২৪ জন। কার্ডধারী জেলেদের জন্য ১ হাজার ৬৬৩ দশমিক ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেক জেলে ২৫ কেজি করে চাল পাবে।  

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করলে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। 

মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, গত বছরের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পেরেছিল। এর ফলে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা জানান, গত পাঁচ বছরে ইলিশ আহরণ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে আহরণ আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩ ও ৪৭ শতাংশ কমেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইলিশ রপ্তানি প্রবণতার তথ্যও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এক দশক আগের তুলনায় অনুমোদিত পরিমাণের বিপরীতে প্রকৃত রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অনুমোদন ছিল ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন, কিন্তু রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫৭৪ মেট্রিক টন।

উপদেষ্টা জানান, ইলিশের রপ্তানি মূল্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার। সে অনুযায়ী সম্প্রতি বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত ইলিশের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকার বেশি।

ফরিদা আখতার আরো বলেন, অভিযান চলাকালে নদীতে ড্রেজিং বন্ধ থাকবে এবং জলসীমার বাইরে থেকে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
 

ঢাকা/পলাশ/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন উপদ ষ ট বর শ ল বছর র মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা।

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর। ফলে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেল থেকে একে একে ফিশিং ট্রলারগুলো কূলে ফিরতে শুরু করেছে।

আরো পড়ুন:

পটুয়াখালীতে ৫ কেজির পোয়া মাছ ৮০ হাজারে বিক্রি

পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল

ঘাটে ফেরা জেলেরা জানান, সপ্তাহখানেক আগে তারা শেষ ট্রিপে সাগরে গিয়েছিলেন। প্রথম দিকে জাল ফেলতে পারলেও বুধবার থেকে প্রবল বাতাস শুরু হয়। এতে বাধ্য হয়ে দ্রুত জাল গুটিয়ে ঘাটে ফিরতে হয়েছে। পর্যাপ্ত মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ ট্রলারই খালি হাতে ফিরে এসেছে।

শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদার বলেন, “বড় ট্রলারগুলো এবার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিটি ট্রলারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হলেও একটিতেও আশানুরূপ মাছ উঠেনি। তবে ছোট ট্রলারগুলোতে অল্প পরিমাণে ইলিশ পাওয়া গেছে।”

শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, “এবার এমনিতেই ইলিশ তেমন পাওয়া যায়নি। আশা ছিল, নিষেধাজ্ঞার আগের শেষ ট্রিপে কিছুটা ক্ষতি পোষানো যাবে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ায় বড় ট্রলারগুলো প্রায় শূন্য হাতে ফিরেছে। এতে ট্রলার মালিক ও জেলেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।”

শরণখোলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন সরকার বলেন, “মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা আশানুরূপ মাছ আহরণ করতে পারেননি। ইতোমধ্যে অনেক ট্রলার সাগর থেকে ফিরে এসেছে।”

তিনি আরো বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আইন অমান্য করলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/শহিদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: খুলনায় জেলেদের জন্য বরাদ্দ ৭৩ মে.টন চাল
  • ইলিশের আহরণ কমায় জেলেদের হতাশা, ক্রেতার অতৃপ্তি
  • পাশ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
  • মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা