সেরিব্রাল পালসি একটি স্নায়বিক সমস্যা। শিশুর মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশের আগেই তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শারীরিক স্বাভাবিক ক্রমবিকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার নাম সেরিব্রাল পালসি। ২০২০-এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ৪টি শিশু সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। বিশ্বে এই হার ২ দশমিক ৯৫।

সেরিব্রাল পালসি কোনো অভিশাপ বা সংক্রামক রোগ নয়। এ নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কার আছে। এই রোগ হলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার কথাবার্তা, চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়।

সেরিব্রাল পালসি একটি স্নায়বিক সমস্যা। এতে শিশুর কথাবার্তা, চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে।

কীভাবে বুঝবেন

একটি শিশু সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত কি না, তা বুঝতে অভিভাবকদের শিশুটির বিকাশ ও বৃদ্ধির দিকে নজর রাখতে হবে। যে বিষয়গুলো সেরিব্রাল পালসি নির্দেশ করে তা হলো:

বিকাশজনিত সমস্যা: স্বাভাবিক সময়ে বিকাশজনিত লক্ষণগুলো দেখতে না পাওয়া যেমন বসা, দাঁড়ানো বা হাঁটতে দেরি হওয়া।

পেশির স্থিতিস্থাপকতা বা নমনীয়তায় সমস্যা: মাংসপেশি হয় বেশি শক্ত কিংবা বেশি ঢিলে মনে হওয়া।

অস্বাভাবিক চলাফেরা: হঠাৎ কাঁপুনি, ঝাঁকুনি, অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার দিকে খেয়াল করতে হবে।

ভারসাম্যে সমস্যা: শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা, যার কারণে ঠিকমতো শিশু হাঁটতে পারে না।

অস্বাভাবিক দেহভঙ্গি: পোশ্চার বা দেহভঙ্গিতে সমস্যা দেখা দেওয়া।

এ ছাড়া সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুর খাবার খেতে, কোনো কিছু শিখতে বা উচ্চারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

মাংসপেশির অস্বাভাবিক টান ও অনমনীয়তার ওপর নির্ভর করে সেরিব্রাল পালসি চার রকমের হয়ে থাকে। সেরিব্রাল পালসি শিশুর সমস্যা আলাদা আলাদা হতে পারে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট প্রতিটি শিশুকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে তাদের মূল সমস্যা উদ্‌ঘাটন করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেন। শিশুর বয়স অনুযায়ী মাংসপেশির টান নিয়ন্ত্রণ, সন্ধিগুলো সচল করা, শ্বাসযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা, উপযুক্ত সহায়ক সামগ্রী ব্যবহার করতে শেখা, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা ও শিশুর স্বাভাবিক ক্রমবিকাশ যেমন বসা, দাঁড়ানো, হাঁটাচলাকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চালানো হয়।

রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া

রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসন এমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, চিকিৎসার দ্বারা একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে দৈনন্দিন সব কাজে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সর্বোচ্চ সক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট শিশুটিকে তার বয়স অনুযায়ী সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন।

জান্নাতুল মাওয়া, কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ, সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি), সাভার, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র ব র ল প লস সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় দুইজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

আরো পড়ুন:

সখীপুরে মেয়েকে হত্যার পর নিজেকে শেষ করলেন মা

নেত্রকোণায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই

সাক্ষীরা হলেন, জবি শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন এবং সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদুর রহমান। সৈকত নিহত জোবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই এবং ডা. ওয়াহিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বর্ষার মামা।

‎মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন।

‎জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, “আমি জবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জোবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে বর্ষা আমার নাম্বার জোবায়েদ ভাই থেকে নেয়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ হাই, হ্যালো কথাবার্তা হত। ২-৩ মাস আগে বর্ষা আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন থেকে বর্ষার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জোবায়েদ ভাই প্রায় ১ বছর ধরে বর্ষাকে বাসায় টিউশন পড়াত।”

‎তিনি বলেন, “ভার্সিটি এলাকায় থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বর্ষা তাকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দেয়, ‘ভাইয়া কই তুমি?’ আমি জানাই ক্যাম্পাসে। বর্ষা বলে, ‘স্যারের আম্মুর নাম্বার আছে?’ কারণ জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘লাগবে।’ ভাইয়ের কিছু হয়ছে কি না জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘ভাইরে (জোবায়দে) কে জানি মাইরা ফেলছে।’ আমি বলি, মাইরা ফেলছে বলতে? বর্ষা বলে, ‘খুন করে ফেলছে।’ তখন বর্ষাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর বিষয়টি বড় ভাইদের জানাই।”

‎ডা. ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, “গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক নৈশ্যকালীন ডিউটি থাকায় বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার চাচাতো ভাই ফোন করে জানায়, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখি সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”

তিনি বলেন, “তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড় হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয় যে, আমার ভাগ্নি বর্ষার প্রাইভেট টিউটর জুবায়েদের মরদেহ। তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করি।”

বর্ষার মামা জানান, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নি বর্ষার সঙ্গে মাহির নামক এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জোবায়েদ মাস্টারের সঙ্গেও বর্ষার প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে মাহির রহমান, জোবায়েদ মাস্টারকে হত্যা করে ঘটনার দিন দৌড়ে পালিয়ে যায়।

‎মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পড়ানোর জন্য যান।

সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, “জোবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে। কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ৭টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যটি জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।

‎ঘটনার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জোবায়েদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে।

‎মামলায় বর্ষা, তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান, মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ফেনীতে পৃথক ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু
  • কামাল সিদ্দিকী: আমলাতন্ত্রের ঘেরাটোপ ভাঙা একজন দেশপ্রেমী
  • চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু
  • গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি আসলে কারা চালাচ্ছে
  • যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব, জমি ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে
  • এলোমেলো শিক্ষা খাত, বাড়ছে সংকট
  • সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো
  • সলিলের গানের ভেতরেই ছিল মিছিলের স্লোগান
  • জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ