আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ: আদালতে দীপু মনি
Published: 6th, October 2025 GMT
বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতে যান। এ সময় তিনি মুখে মাস্ক, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছিলেন।
দীপু মনিকে আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয় । তিনি মাথা নিচু করে থাকেন। পরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এর মধ্যেই দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল আদালতের এজলাসে আসেন। গাজী ফয়জাল দীপু মনির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা দীপু মনিকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন। পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীও দীপু মনিকে রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন।
পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে হানিফ উড়ালসড়কের ঢালে মনির হোসেন নামের এক আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয় । এই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি দীপু মনি। হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।’
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দীপু মনি কোনোভাবে জড়িত নন। দীপু মনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে আদালতে এবং ১০ দিন রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।’
আইনজীবী গাজী ফয়সালের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা দীপু মনি নিজেই আদালতে কথা বলার অনুমতি চান। দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমি অসুস্থ। আমাকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে নিয়ে আসা হলো আদালতে। আমাকে আবার ১০ দিন রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘গত আগস্ট মাস থেকেই আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষার জন্য একবার কারাগার থেকে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আবার আমাকে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে আজ আমাকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাচ্ছে, কাল আমাকে পরীক্ষা করতে নিয়ে যাচ্ছে, এভাবেই ঘোরানো হচ্ছে আমাকে। আমাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না।’
ক্ষোভের সঙ্গে দীপু মনি বলেন, তাঁর শারীরিক যে অবস্থা, তাতে পরীক্ষানিরীক্ষা করা জরুরি। কারাগারে কীভাবে আছেন সে ব্যাপারে দীপু মনি আদালতের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছি। ১৫ দিন পর পর আমার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাই। কিন্তু আমার আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছি, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি মাত্র তিনবার। আমার নামে ৬০টির অধিক মামলা। আমার আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা খুব জরুরি। মামলার বিষয় নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গেই পরামর্শ করতে চাই। মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি।’
এ পর্যায়ে দীপু মনির বক্তব্যের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, একজন আসামিকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীপু মনিকেও একইভাবে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর উনি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না, সেটি সঠিক নয়। কারণ, যখন ওনাদের আসামির কাঠগড়ায় আনা হয়, তখন তাঁরা তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। শুনানি শেষ হওয়ার পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
পিপির বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনি জানেন সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন মারা গেছেন। আমি জেনেছি, ওনাকে চারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। আমি বলছি, আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষার প্রয়োজন। আমার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ।’
দীপু মনিকে আজ সোমবার সকালে হাজতখানা থেকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল র স য গ র আইনজ ব শ ষ হওয পর ক ষ ম নন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যালয়ে যেনতেন পড়াশোনা, ভরসা কোচিং ও গৃহশিক্ষক
রাজধানীর ১৯০ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকদের বসার কক্ষে একজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ চলছিল (১১ সেপ্টেম্বর)। তখন ক্লাস শেষ করে এলেন আরেকজন শিক্ষক। ওই শিক্ষক বললেন, তিনি একই সময়ে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। বাংলা ও কৃষিশিক্ষার। তবে তিনি হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক। শিক্ষকসংকটের কারণেই তাঁকে আরেক বিষয়ের ক্লাস নিতে হচ্ছে।
পাশে বসে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। তিনি যোগ করলেন, তাঁকেও নিজের বিষয়ের পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষার ক্লাস নিতে হয়। দিনে পাঁচ-ছয়টি করে সপ্তাহে প্রায় ২৫টি ক্লাস নিতে গিয়ে ভালোভাবে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলটি সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলে গিয়ে জানা যায়, সেখানে দুই পালায় শিক্ষার্থী প্রায় দুই হাজার। শিক্ষক আছেন মাত্র ৩৯ জন। শিক্ষকের পদসংখ্যা ৫৩। ১৪টি খালি। গড়ে ৫১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক। শিক্ষকেরা পড়ানোর চাপে হিমশিম খান। ক্লাসে মানসম্মত পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষার্থী জানাল, তারা নিয়মিত কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। একজন বলল, সে বাসায় দুজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। খরচ মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের এ চিত্র আসলে পুরো দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিচ্ছবি; বরং কোথাও কোথাও পরিস্থিতি আরও খারাপ। শিক্ষকের অভাব, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট এবং দুর্বল পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এতে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে অনেকে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ৩৩ শতাংশ।
সচ্ছল মা-বাবা সন্তানদের বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে পড়াতে পারেন। কোচিং-বাণিজ্য রমরমা। মধ্যম আয়ের মা-বাবা সন্তানদের কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াতে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়ছেন। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না, বাসায় গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য পরিবারগুলোর নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করতে পারছে না।
অবশ্য সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের পেছনে জনগণের করের টাকা ঠিকই খরচ হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে উচ্চ হারে বেতন ও ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া এবং কোচিংয়ের এই প্রবণতা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশে মোটামুটি একই। ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান সকালে কোচিংয়ে পড়ে। তারপর বিদ্যালয়ে যায়। এরপর বিকেলে আবারও কোচিং। সন্ধ্যায় বাসায় আসেন গৃহশিক্ষক। তিনি বলেন, খরচ অনেক। কিন্তু কিছু করার নেই। ভালো পড়াশোনা তো করাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও বাদ দিয়েছে শিক্ষাকে। প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পরামর্শ দিতে শিক্ষাবিদ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদকে প্রধান করে কমিটি হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্যই।প্রথম আলো ফাইল ছবি