সেই আব্দুস সালামকেই ঢাকা ওয়াসায় এমডি নিয়োগ দেওয়া হলো
Published: 13th, November 2025 GMT
বিতর্ক, শর্ত বদল ও অনিয়মের অভিযোগ উপেক্ষা করে অবশেষে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁকে তিন বছরের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনুবিভাগ থেকে আজ দুপুরে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য আব্দুস সালামকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অবিলম্বে জারিকৃত এই আদেশ কার্যকর হবে।
এদিকে নিয়োগের এই সিদ্ধান্তে ওয়াসার ভেতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুরো প্রক্রিয়াই ছিল পরিকল্পিত। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বসানোর জন্য আট মাস ধরে ধাপে ধাপে নিয়ম ভেঙে পথ তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ২১ মার্চ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা শিথিলযোগ্য হবে অর্থাৎ ৬০ বছরের বেশি বয়স হলেও আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি আবেদনকারীদের ন্যূনতম তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হতে হবে। কিন্তু সেই সময় আব্দুস সালাম ছিলেন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা অর্থাৎ তিনি আবেদন করার যোগ্য ছিলেন না।
মাত্র তিন দিনের মাথায়, ২৩ মার্চ ওয়াসা আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বয়সসীমা শিথিলের বিধান বাদ দিয়ে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে আবেদন করা যাবে না। ওয়াসার অভ্যন্তরীণ সূত্রের ভাষ্য, এই পরিবর্তন আনা হয় একমাত্র আব্দুস সালামকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। কারণ, বয়স শিথিলযোগ্য থাকলে তাঁর চেয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থী অনেকেই আবেদন করতেন।
এরপর নিয়োগের প্রক্রিয়া হঠাৎ স্থগিত রাখা হয়। এরই মধ্যে আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং তাঁকে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) পদ দেওয়া হয়। এরপর তৃতীয়বারের মতো নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় গত ১৫ জুলাই। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যোগ্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান জানানো হবে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, এমডি পদে ৩৭ জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পানিসম্পদ বিষয়ে পিএইচডিধারী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। কিন্তু ওয়াসা তাঁদের কাউকেই সাক্ষাৎকারে ডাকেনি।
এর পরিবর্তে ওয়াসার ‘কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি’ সরাসরি তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই তালিকায় আব্দুস সালামকে রাখা হয় প্রথমে, ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে দ্বিতীয় স্থানে ও এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হককে তৃতীয় স্থানে। পরে মন্ত্রণালয় সেই তালিকাই হুবহু প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠায়।
ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে চার বছর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা আব্দুস সালামকে নানা কায়দায় এমডি বানানোর প্রস্তুতি চলছে, এমন খবর আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এখন সেটিই বাস্তব হয়েছে।
আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগ ছিল, এখন তাঁকে এমডি করতে ‘ছল বল কৌশল’০৯ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র জন য সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
সেই আব্দুস সালামকেই ঢাকা ওয়াসায় এমডি নিয়োগ দেওয়া হলো
বিতর্ক, শর্ত বদল ও অনিয়মের অভিযোগ উপেক্ষা করে অবশেষে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁকে তিন বছরের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনুবিভাগ থেকে আজ দুপুরে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য আব্দুস সালামকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অবিলম্বে জারিকৃত এই আদেশ কার্যকর হবে।
এদিকে নিয়োগের এই সিদ্ধান্তে ওয়াসার ভেতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুরো প্রক্রিয়াই ছিল পরিকল্পিত। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বসানোর জন্য আট মাস ধরে ধাপে ধাপে নিয়ম ভেঙে পথ তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ২১ মার্চ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা শিথিলযোগ্য হবে অর্থাৎ ৬০ বছরের বেশি বয়স হলেও আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি আবেদনকারীদের ন্যূনতম তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হতে হবে। কিন্তু সেই সময় আব্দুস সালাম ছিলেন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা অর্থাৎ তিনি আবেদন করার যোগ্য ছিলেন না।
মাত্র তিন দিনের মাথায়, ২৩ মার্চ ওয়াসা আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বয়সসীমা শিথিলের বিধান বাদ দিয়ে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে আবেদন করা যাবে না। ওয়াসার অভ্যন্তরীণ সূত্রের ভাষ্য, এই পরিবর্তন আনা হয় একমাত্র আব্দুস সালামকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। কারণ, বয়স শিথিলযোগ্য থাকলে তাঁর চেয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থী অনেকেই আবেদন করতেন।
এরপর নিয়োগের প্রক্রিয়া হঠাৎ স্থগিত রাখা হয়। এরই মধ্যে আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং তাঁকে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) পদ দেওয়া হয়। এরপর তৃতীয়বারের মতো নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় গত ১৫ জুলাই। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যোগ্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান জানানো হবে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, এমডি পদে ৩৭ জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পানিসম্পদ বিষয়ে পিএইচডিধারী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। কিন্তু ওয়াসা তাঁদের কাউকেই সাক্ষাৎকারে ডাকেনি।
এর পরিবর্তে ওয়াসার ‘কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি’ সরাসরি তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই তালিকায় আব্দুস সালামকে রাখা হয় প্রথমে, ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে দ্বিতীয় স্থানে ও এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হককে তৃতীয় স্থানে। পরে মন্ত্রণালয় সেই তালিকাই হুবহু প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠায়।
ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে চার বছর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা আব্দুস সালামকে নানা কায়দায় এমডি বানানোর প্রস্তুতি চলছে, এমন খবর আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এখন সেটিই বাস্তব হয়েছে।
আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগ ছিল, এখন তাঁকে এমডি করতে ‘ছল বল কৌশল’০৯ নভেম্বর ২০২৫