আর্থিক সংস্কারের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ দরকার: গভর্নর
Published: 11th, January 2025 GMT
বাস্তবসম্মত আর্থিক সংস্কারের জন্য দরকার দক্ষ মানবসম্পদ। সেই মানবসম্পদ তৈরিতে ফিন্যান্স বিভাগের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এ কথা বলেন। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গভর্নরের পাশাপাশি বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ। আর সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
ফিন্যান্স বিভাগ এবং ফিন্যান্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ এই আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান এইচ এম মোশারফ হোসেন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। তবে একটি বাণী পাঠিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ফিন্যান্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ ওসমান ইমাম পাঁচ দশকে বিভাগের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন।
মেধা দিয়ে দেশ গড়ার জন্য ফিন্যান্স বিভাগের সব শিক্ষার্থীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, প্রতিযোগিতামূলক ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আর্থিক বাজার এবং পুঁজিবাজারে প্রশিক্ষিত পারদর্শী কর্মী বাহিনী জোগান দেওয়ার অন্যতম উৎস হচ্ছে এই বিভাগ।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘ফিন্যান্স বিভাগের ৫০ বছর একটা অর্থবহ মিলনমেলা। আমি জানি, অ্যালামনাইরা অনেক বড় কাজ করতে পারে। যেমন বড় তহবিলের উৎস হচ্ছে হার্ভার্ড অ্যালামনাই তহবিল, ভারতীয় আইআইটি অ্যালামনাই তহবিল ইত্যাদি। ভবিষ্যতে ফিন্যান্স অ্যালামনাইরাও আন্তসম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক বড় কাজ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বাণীতে বলেন, দেশের চলমান আর্থিক খাতের সংস্কারে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা চালিকাশক্তির ভূমিকায় রয়েছেন। আর্থিক খাতের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ব্যবসায় শিক্ষার উৎকর্ষের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ের মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের প্রতি গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ফিন্যান্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন ধারণা এবং উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীসহ তিন হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীদের র্যালি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আয়োজনে ছিল সংগীতানুষ্ঠানও।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।