Samakal:
2025-09-17@23:43:12 GMT

শিশুর সহায়তা চেয়ে কল বেড়েছে

Published: 12th, January 2025 GMT

শিশুর সহায়তা চেয়ে কল বেড়েছে

হেল্পলাইন ১০৯৮ চালুর পর থেকে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে ২০২৪ সালে। শিশু বিষয়ে সহায়তা চেয়ে সাড়ে ৫ লাখ ফোন কল আসে গত বছর। যেখানে ২০২৩ সালে কলের সংখ্যা ছিল সোয়া ৩ লাখ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বিপদগ্রস্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন ১০৯৮ পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পাইলট প্রকল্প আকারে এটি চালু হয়। ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই হেল্পলাইনের কার্যক্রম চলছে। এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
২৪ ঘণ্টায় পালা করে টোলমুক্ত এ নম্বরে আসা কল ধরেন ২৮ জন প্রতিনিধি। বর্তমানে গড়ে ১৯৮টি কারণে শিশুর জন্য সহায়তা চেয়ে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফোনকল আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে (জুলাই-আগস্ট) বাড়ে তিন গুণ, যা করোনাকালে ছিল দ্বিগুণ। গত কয়েক বছরে শিশুদের মনোসামাজিক সহায়তা, নির্যাতন-সহিংসতা, ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের তরফ থেকেও এই নম্বরে ফোনকল বেড়েছে।

কত কল, কোথা থেকে, কী বিষয়ে
সিএসপিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শিশু সহায়তা চেয়ে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫১টি ফোনকল আসে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে সর্বাধিক ২৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম থেকে ১৫ শতাংশ, খুলনা থেকে ১৩ শতাংশ, রংপুর থেকে ১২ শতাংশ, ময়মনসিংহ থেকে ১০ শতাংশ, বরিশাল থেকে ৭ শতাংশ এবং রাজশাহী থেকে ১০ শতাংশ কল আসে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কল ছিল ১১ হাজার ৩২১টি। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত ৬ হাজার ৬৭৬ এবং পরিবার সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৩৮১টি কল ছিল।
যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৪১৪টি কল। এ ছাড়া ২০২২ সালে মোট কল এসেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য সহায়তা চেয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৯৩টি কল আসে। ২০২৪ সালের ২০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৯১৮টি কল এসেছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন গুণ।
হেল্পলাইনের তথ্য অনুযায়ী, শিশুর মনোসামাজিক সমস্যা, নিরাপত্তা, মৌলিক চাহিদা বিঘ্নিত, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতন, সাইবার ক্রাইম, পাচার, গৃহশ্রমে নিযুক্ত শিশুর নির্যাতন, অপহরণ, প্রেমের প্রতারণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিকভাবে নির্যাতন এমনকি অভিভাবকের নির্যাতন সম্পর্কিত কলও আসে এই হেল্পলাইনে।

আট মিনিটে উদ্ধার
বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ হলে নীলফামারীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর বের হয় তিন ছাত্রী। বাড়ি ফেরার জন্য তারা একটি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় ওঠে। তাদের বহনকারী রিকশা চলতে শুরু করলে তারা খেয়াল করে, দুটি ছেলে তাদের পিছু নিয়েছে। তারা জানতে পারে, পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার জন্য দুই ছেলে পিছু নিয়েছে। ওই অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে হেল্পলাইন ১০৯৮-এ ফোন করে বিষয়টি জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা থেকে বিপদগ্রস্ত ছাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে পাশের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওসি কল কনফারেন্সে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে আরেক ফোনে টহল দলকে তথ্য দেন। ৮ মিনিটের মধ্যে পুলিশের টহল দল মেয়েদের কাছে পৌঁছে যায়। ওই দুই ছেলেকে আটক করে।

পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পান মা-বাবা
রাজধানীর অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী গত বছর বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে পাচার চক্রের এক নারী সদস্য তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যৌনপল্লিতে বেচে। ১৪ বছরের সেই শিশু কৌশলে ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারে ফেরত দেয়। শিশুটি যেন নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারে এবং পরিবারও যেন এ ঘটনা নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে না থাকে, সেজন্য বাবা-মাকে কাউন্সেলিং করে ১০৯৮ কর্তৃপক্ষ।

ভোলায় ২২০ শিক্ষার্থী পেল প্রবেশপত্র
ভোলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত বছর ভুলে ২২০ শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে যায়। জেলা প্রশাসক, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলেও সমাধান হচ্ছিল না। এ সময় কোনো এক শিক্ষার্থীর বাবা ১০৯৮ নম্বরে কল করে সহযোগিতা চান। তখন ১০৯৮ টিম তথ্য সংগ্রহ করে সত্যতা পায়। স্থানীয় পর্যায় এবং পরে বোর্ডে কথা বলা হয়। জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা। এর দু’দিন পর শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পায়।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এ প্রকল্প। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে চলবে ১০৯৮। কিন্তু শিশুদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠা এ হেল্পলাইনের কার্যক্রম এখনও চলছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প শেষ হলেও নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে সহায়তা চেয়ে ৩১ হাজার ২২৬ শিশু কল করেছে।

কর্মকর্তার বক্তব্য
হেল্পলাইনের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো.

মোহায়মেন বলেন, ‘১০৯৮ নম্বরে বিপদগ্রস্ত শিশুকে উদ্ধারসহ যা প্রয়োজন, তার সব ব্যবস্থা করা হয়। এটি হোলস্টিক সাপোর্টের (সামগ্রিক সহায়তা) ভিত্তিতে কাজ করে। যেমন কোনো অভিভাবক ফোন করে বলেন, শিশুর দুধ কেনার টাকা নেই; তাকে দুধ কিনে দেওয়া হয়। কারও বই-খাতা না থাকলে তাকে তা দেওয়া হয়। অনেক শিশুদের বিদ্যালয়ের ফি দেওয়া হয়। স্কুলে নির্যাতনের শিকার হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়, আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে।’
তিনি জানান, প্রকল্প শেষ হলেও বন্ধ হবে না এই শিশু সহায়তা নম্বরটি। কারণ, এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গ্রহণযোগ্য। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় সিএসপিবি চালু রাখা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা না হলেও কার্যক্রম চলছে। আগামীতে এই প্রকল্পের আওতায় জনবল বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় যৌন নির্যাতনে অসুস্থ ছেলেশিশুটি এখন হাসপাতালে, ১ জন গ্রেপ্তার

মাস তিনেক আগে ১২ বছরের ছেলেশিশুটি ঢাকায় আসে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় ওঠে। জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের ফুটপাতে ফাস্ট ফুডের দোকান আছে ফুফাতো ভাইয়ের। সেখানে সে টুকটাক কাজ শুরু করে। ২০ দিন ধরে শিশুটিকে পাশের দোকানের দুই কর্মী যৌন নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সবশেষ গত শনিবার যৌন নির্যাতন ও মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। আজ সোমবার শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনায় এক দোকানকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ।

শিশুটি নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় তার ফুফাতো ভাই প্রথমে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশুসহায়তা হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯৮) কল করেন। শিশুটির পরিবার, পুলিশ ও ১০৯৮ নম্বরের তথ্য অনুসারে, শিশুটির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। শিশুটি টানা নির্যাতনের শিকার হলেও শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই তা জানাজানি হয়। পরে জানা যায়, পাশের ডিম ও ডাবের দোকানের দুই কর্মী হাসিবুর রহমান ও রিয়াজ নিয়মিত শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করতেন।

শিশুর ফুফাতো ভাই প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শনিবার রাতে দোকানের কেনাকাটা করতে বাজারে গিয়েছিলেন। তাঁর দোকানেও দুজন কর্মী ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাঁর ভাইকে আঘাত করা হয়েছে চোখে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আঘাত করার কারণ জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, ২০-২২ দিন ধরে হাসিবুর ও রিয়াজ হাসপাতালের পেছনে বাগানে নিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। সে বাধা দিলেও শোনেননি।

শিশুটির ভাই বলেন, নির্যাতনে তার ভাইয়ের পুরুষাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার ওই দুজন আবার তাকে বাগানে নিয়ে যেতে চাইলে সে যেতে রাজি হয়নি। এরপরই তাকে আঘাত করেন ওই দুজন। আঘাতে তার ভাইয়ের চোখ লাল হয়ে যায়। আজ তার ভাই আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চিকিৎসক দেখান এবং শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে মামলা করেন। পরে বিকেলে তার ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় হাসিবুর রহমান নামের একজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আজ দুপুরে মামলার পর আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে আসামিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর ১০ ধারায় (যৌনপীড়ন ইত্যাদির দণ্ড) বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাঁর শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দিয়ে কোনো নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন, তাহলে সেটা হবে যৌনপীড়ন। এই অপরাধে ওই ব্যক্তি সর্বনিম্ন ৩ বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮–এর সমন্বয়ক চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু মেয়েশিশু নয়, ছেলেশিশুরাও যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি ট্রমার মধ্যে পড়ে। অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা ভবিষ্যতে মা–বাবা হওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই পরিবারগুলোকে ছেলেশিশুদের দিকেও সমান নজর রাখতে হবে। তারা কোনো ধরনের নির্যাতনের কথা বললে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তিনি জানান, এই শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় ১০৯৮ নম্বরে সহায়তা জানিয়ে কল দেন শিশুটির ভাই। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন এবং এ কাজে সহায়তা দিতে একজন সমাজকর্মীকে নিয়োজিত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় যৌন নির্যাতনে অসুস্থ ছেলেশিশুটি এখন হাসপাতালে, ১ জন গ্রেপ্তার