গুয়ানতানামো, ২৩ বছর পরও সর্বব্যাপী এক হুমকি
Published: 13th, January 2025 GMT
৬ জানুয়ারি ১১ জন ইয়েমেনি বন্দীকে ওমানে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা গুয়ানতানামো বন্দিশালায় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁদের মুক্তির অনুমতি দিয়েছে।
এর আগে পেন্টাগন রিদাহ বিন সালেহ আল-ইয়াজিদি নামের একজনকে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়ে তিউনিসিয়ায় ফেরত পাঠায়। তিনি ২০০২ সালে গুয়ানতানামো খোলার সময় থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বন্দী ছিলেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আরও তিনজন বন্দী মুক্তি পান। তাঁদের দুজনকে মালয়েশিয়ায় এবং একজনকে কেনিয়ায় পাঠানো হয়।
গুয়ানতানামো কারাগার বানানোর ২৩ বছর পর এখন সেখানে বন্দীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। বর্তমানে সেখানে মাত্র ১৫ জন বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘নাইন–ইলেভেন ফাইভ’খ্যাত পাঁচজনও রয়েছেন।
বন্দীর সংখ্যা কমে গেলেও এই অধ্যায় শেষ হয়নি। কারণ, যাঁরা এখনো বন্দী, তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আর যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখনো গুয়ানতানামোর নির্যাতন–পরবর্তী মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে লড়াই করছেন।
গুয়ানতানামো শুধু একটি বন্দিশালা নয়; এটি সাম্রাজ্যবাদ, বৈষম্য ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক। এটি দেখায় যে ভিন্ন সম্প্রদায়কে অপরাধী সাব্যস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র কত নিচে নামতে পারে। একই সঙ্গে এটি কিউবার ভূমির ওপর মার্কিন দখলদারির কথাও মনে করিয়ে দেয়।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে গুয়ানতানামো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত, যেখানে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কারা শাস্তি পাবে আর কারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত থাকবে।
মার্কিন গবেষক অ্যামি ক্যাপলান তাঁর ‘হয়্যার ইজ গুয়ানতানামো?’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘গুয়ানতানামোকে আজকের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি জায়গাটির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এটি সাম্রাজ্যবাদের একটি উদাহরণ; যেখানে জাতীয় সীমান্তের বাইরে এবং আইনের শাসনের বাইরে রাষ্ট্রের ক্ষমতা জোর করে ব্যবহার করা হয়।’
গুয়ানতানামো দখল করেও যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, কিউবার এই এলাকার সার্বভৌমত্ব আছে। কিন্তু কিউবার এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নেই। এই সাম্রাজ্যবাদী আচরণের কারণেই গুয়ানতানামোয় এত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে যুদ্ধ করেছে, দখল করেছে এবং অনেক বন্দীকে এসব দেশ থেকে ধরে এনেছে।গুয়ানতানামো দখল করেও যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, কিউবার এই এলাকার সার্বভৌমত্ব আছে। কিন্তু কিউবার এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নেই। এই সাম্রাজ্যবাদী আচরণের কারণেই গুয়ানতানামোয় এত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে যুদ্ধ করেছে, দখল করেছে এবং অনেক বন্দীকে এসব দেশ থেকে ধরে এনেছে।
এ সহিংসতা শুধু ওই অঞ্চলে নয়, বন্দীদের শরীরেও ফুটে উঠেছে। দখল করা কিউবার মাটিতে বন্দীদের প্রতি এ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার এক নগ্ন উদাহরণ।
এ অবস্থা এখনো চলছে। অনেক বন্দীকে তাঁদের নিজের দেশ, বিশেষ করে ইয়েমেনে ফেরত পাঠানো হয়নি। কারণ, সেখানে এখনো যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চালাচ্ছে।
মিশেল ফুকো তাঁর ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ বইয়ে বলেছেন, উনিশ শতকের শুরুতে শাস্তি দেওয়ার প্রকাশ্য পদ্ধতি বদলে যায়। শারীরিক যন্ত্রণা বা প্রকাশ্য শাস্তি কমে আসে। কারণ, ক্ষমতা প্রয়োগের সূক্ষ্ম পদ্ধতি মানুষের ক্ষোভ কমিয়ে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়। কিন্তু গবেষক সোহাইল দৌলতজাই দেখিয়েছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ ক্ষেত্রে ফুকোর তত্ত্বের উল্টোটা ঘটেছে। নাইন–ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি ও নির্যাতনের একটি ‘অতিরিক্ত যুগ’ চালু করে। বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ নির্যাতন প্রকাশ্যে দেখানো হয়। এখানে যুদ্ধ জেতার প্রমাণ হিসেবে এ নির্যাতনকে প্রকাশ্যে আনা হয় এবং নির্যাতনকে ন্যায়সংগত বলে প্রচার করা হয়।
দৌলতজাই আরও বলেন, মুসলিমদের শাস্তি যেন স্বাভাবিক ও সঠিক মনে করা হয়; কারণ, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ মুসলিমদের হুমকির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২৩ বছর আগে গুয়ানতানামোয় আনা বন্দীদের একটি ছবি তোলা হয়েছিল। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছিল, বন্দীরা কমলা রঙের পোশাক পরে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন। তাঁদের চোখে চশমা ছিল। মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিল। নাইন–ইলেভেন হামলার পর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ইচ্ছা করে এ ছবি প্রকাশ করেছিল।
জেনারেল রিচার্ড মায়ার্স তখন বলেছিলেন, এই বন্দীরা এত বিপজ্জনক যে তাঁরা দাঁত দিয়ে কামড়ে বিমান ভেঙে ফেলতেও সক্ষম। ক্যাম্প এক্স-রের কমান্ডার মাইকেল লেহনার্ট তাঁদের ‘সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধী’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
এ ধরনের কথাবার্তা মুসলিম বন্দীদের শত্রু হিসেবে তুলে ধরতে এবং তাঁদের আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে সাহায্য করেছিল।
এ কারাগার যত দিন খোলা থাকবে, তত দিন এটি বন্দীদের জন্য একটি অবিচারের স্থান হিসেবে থাকবে। তাই এটি বন্ধ করা সময়ের দাবি।
● ড.
মাহা হিলাল গবেষক ও লেখক। তিনি মুসলিম কাউন্টারপাবলিকস ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক এবং উইটনেস এগেইনস্ট টর্চারের সংগঠক
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েদের সবকিছুতেই জ্বালা: রাতাশ্রী
ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী রাতাশ্রী দত্ত। ‘তুখোড়’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে বাংলাদেশেও পরিচিত। এ সিনেমার মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। গত বছর তার সংসার ভাঙার গুঞ্জন চাউর হয়। এ নিয়ে চারপাশের মানুষের আচরণ ভীষণভাবে আহত করেছে তাকে।
মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাতাশ্রী বলেন, “সমাজ, পেশাজীবন ছেড়ে দিন, নিজের পরিবারও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে। আমার বিচ্ছেদ হয়নি। কেবল গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তাতেই ঠিক এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।”
স্বামীর সঙ্গে না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে রাতাশ্রী বলেন, “আমার মা গত বছর থেকে ভীষণ অসুস্থ। তার কিডনি কাজ করছে না। টানা ডায়ালাইসিস চলেছে। বাধ্য হয়ে গত বছর থেকে মায়ের কাছে থাকি। আমার বোন ঘরের কাজে যতটা পটু, বাইরের কাজে তত নয়। স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর সঙ্গে থাকতে পারছি না। এসব থেকেই সম্ভবত গুঞ্জন ছড়ায়।”
আরো পড়ুন:
‘বন্ড সই’ দিয়ে হাসপাতাল থেকে শুটিংয়ে ফেরেন কাঞ্চন
সেই ময়ূখকে ‘গাধা’ বললেন অভিনেতা ঋত্বিক
নিজ এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাতাশ্রী বলেন, “আমি মফস্বলের মেয়ে। সেখানে এই গুঞ্জন দ্বিগুণ। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দিকে প্রশ্ন ধেয়ে এসেছিল, ‘মেয়ে বাড়ি ফিরে এলো বুঝি?’ এটা সমাজ বা পড়শিদের আচরণ। আর পেশাগত পরিস্থিতি? আমাদের মেয়েদের সবকিছুতেই জ্বালা। বিয়ে হলে বিনোদন দুনিয়ায় দর কমে যায়। বিবাহবিচ্ছেদ হলে সব কথা হবে, কেবল কাজের কথা ছাড়া।”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, “কেন বলুন তো? ঘুরে-বেড়ানো থেকে সমস্ত কিছুই তার সঙ্গে দিব্য চলবে। অথচ বিবাহবিচ্ছেদের পর মেয়েটির দায়িত্ব নিতে হবে না। সুযোগ বুঝে টুক করে ‘ঘাড়’ থেকে নামিয়ে দিলেই হলো! তার উপরে মেয়েটির রূপ থাকলে কথাই নেই। রূপ তো নয়, যেন অভিশাপ। না থাকলেও অবশ্য সমস্যা নেই। ওই যে, মেয়ে তো!”
ঢাকা/শান্ত