গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রক্তিমা’। এ উৎসবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহারি পিঠার সমাহার দেখা যায়।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় দিনব্যাপী শীতকালীন এ পিঠা উৎসব আয়োজন করে সংগঠনটি।
উৎসবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ স্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুম মুনিরা, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উৎসবে শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তৈরি প্রায় ৩০ ধরনের পিঠার পসরা সাজিয়েছেন। উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকেই বটতলা প্রাঙ্গণ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। অনেকেই বাহারি পিঠার স্বাদ নিতে এসেছেন উৎসব স্থলে। কেউ আবার আগ্রহ নিয়ে দেখছেন হরেক রকমের বাহারি পিঠা।
এসব পিঠার মধ্যে সুইচ রোল পুলি, সুজির মালাই চাপ, ম্যারা পিঠা, নারকেলপুলি, দুধ চিতই, ভাপা পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, সেমাই পিঠা, কেক, গোলাপ পিঠা, ডালের পিঠা, পুডিং, দুধমালাই রিং, দুধ সন্দেশ, নারকেল চমচম, তেলের পিঠা, নারকেল পাকন ও পাটিসাপটা অন্যতম।
উৎসবে আসা আল-ফিকাহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, “অনেকদিন পরে ক্যাম্পাসে পিঠা উৎসব দেখে অনেক ভালো লাগছে। আমরা উৎসবস্থল ঘুরেছি, পিঠা খেয়েছি। এখানে এসে গ্রামের পিঠা খাওয়ার স্মৃতি ফিরে পেলাম।”
পিঠা উৎসবের আয়োজক ও রক্তিমার সভাপতি সিরাজুম মুনিরা বলেন, “রক্তদান কর্মসূচির পাশাপাশি রক্তিমা একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে থাকে। শীতকালীন ছুটিতে অনেকেই বাড়িতে যায়নি। মূলত তাদের সঙ্গে উৎসব ভাগ করে নেওয়ার জন্যই এ আয়োজন। রক্তিমার সব সদস্য মিলে এ স্টল দাঁড় করানো হয়েছে।”
উৎসবে স্থল পরিদর্শন শেষে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.
২০১৭ সাল থেকে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে আসছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'রক্তিমা'। বিনামূল্যে রক্তদান ছাড়াও থ্যালাসেমিয়া, ডেঙ্গু, রক্তদান সম্পর্কিত সচেতনতামূলক সেমিনার এবং মাতৃত্বকালীন সমস্যা সম্পর্কে মেয়েদের সচেতন করার পাশাপাশি নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে সারা দেশে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হবে আন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল।
তিনটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে বাফুফের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে দেবে ১০ কোটি টাকা, যা বাফুফে আগামী সপ্তাহ থেকে পেতে পারে। বাকি অর্থ স্পনসরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে বাফুফে। মাঠ সংস্কার, দলগুলোর অংশগ্রহণ ফি, পুরস্কারসহ নানা খাতে এ অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্পটি এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেছে বাফুফে।
সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট, যেখানে দেশের ৬৪টি জেলা অংশ নেবে। বাফুফে সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি জেলা খেলবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। প্রথম রাউন্ডে দলগুলোকে আটটি ‘পটে’ ভাগ করা হবে। প্রতি ‘পটে’ থাকবে আটটি করে দল। প্রথম রাউন্ডের জয়ী দলগুলো যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও থাকবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে টুর্নামেন্ট।
চতুর্থ রাউন্ডের খেলা হবে নকআউট ভিত্তিতে। আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ২৫ থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা বাফুফের। প্রায় চার মাসের এই মেগা টুর্নামেন্টে ফাইনাল হবে ঢাকায়।
বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে।১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া শেরেবাংলা কাপ আন্তজেলা ফুটবল একটানা হয়েছিল ১৯৮৬ পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ সময় নানা বিরতির মধ্য দিয়ে চলেছে এর যাত্রা। ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১–০৩, ২০০৫ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ ১৩ বছর বিরতি পড়ে শেরেবাংলা কাপে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টুর্নামেন্টটি আবার মাঠ ফেরে। তবে সেটি শেরেবাংলা কাপ নামে নয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডেও জেলাগুলোকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। শুরুর দিকে খেলা হয়েছে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। আটটি অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন দল উঠেছিল মূল পর্বে।
আরও পড়ুনটিকিট বিক্রির ‘ডিজিটাল স্বাদ’ নিতে গিয়ে লেজেগোবরে বাফুফে২৭ মে ২০২৫বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে শেরেবাংলা কাপ স্মরণীয় হয়েই আছে। সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলও। এই দুই আয়োজন ছিল তৃণমূলে প্রতিভা খুঁজে বের করার অন্যতম প্রধান মঞ্চ। এই দুই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসে অনেক ফুটবলারই গায়ে তুলেছেন জাতীয় দলের জার্সি।
সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ যুব ফুটবল আজ শুধুই স্মৃতি। তবে বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। এরপর মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট, যা হবে নকআউট–ভিত্তিক।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজারদর কার কত২০ জানুয়ারি ২০২৫বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এগুলো তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে করা হবে। এই প্যাকেজের জন্য আমাদের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পেরেছি। বাকি টাকা স্পনসরের মাধ্যমে সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে টুর্নামেন্টগুলো শুরুর সময় ঠিক করা হবে।’
বড় পরিসরে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্ভাবনার কথা প্রথম শোনা যায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘জেলা থেকে খেলাধুলা শুরু হওয়া উচিত। আশা করছি, ২-৩ মাসের মধ্যেই জেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারব।’
গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তারুণ্যের উৎসব এখনো চলমান। এই উৎসবের অংশ হিসেবেই বাফুফে সারা দেশে অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, যার চূড়ান্ত পর্ব এখনো বাকি।