নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ চাইলেন রুহুল কবির
Published: 14th, January 2025 GMT
অন্তবর্তী সরকারের প্রধানের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিখ চাইলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আপনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করুন। আপনি বলুন যে এত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করি, সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সত্যিকার অর্থে একটা শক্তিশালী গণতন্ত্র আসবে, যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীন থাকবে।’
রাজশাহী নগরের ছোট বনগ্রাম এলাকায় শহীদ জিয়া শিশুপার্কের সামনে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর যুবদল আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে রুহুল কবির এসব কথা বলেন।
এ বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঘোষণা এসেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আজ শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির বলেন, ‘জাতীয়–আন্তর্জাতিক নানা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পথে হাঁটছি। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রয়োজনীয় সংস্কার, জাতীয় সংসদ, সংবিধান, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, সবকিছুর মধ্যে সংস্কার দরকার। কিন্তু এই সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করে শুধু এটা নিয়ে বাদানুবাদ, এটা নিয়ে তর্ক–বির্তক করলে আমাদের যে প্রধান অবজেক্টিভ .
রুহুল কবির বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে। উনি একজন গুণী মানুষ নিঃসন্দেহে। তিনি বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। কিন্তু তাঁকে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে যদি কেউ ফেলে, এটা তখন মানুষের মধ্যে বড় প্রশ্ন হবে। আপনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করুন। আপনি বলুন যে এত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। যদিও সেই বিষয়ে তিনি বারবার বলছেন। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা আর কোনো কথা বলতে চাই না। আমরা আশা করি, সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র আসবে, প্রতিটি মানুষ স্বাধীন থাকবে।’
আওয়ামী লীগ শাসনের সমালোচনা করে রুহুল কবির বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে আমরা কথা বলতে ভয় পেতাম। আমরা ডান–বাম দিকে তাকাতে ভয় পেতাম। কখন গোয়েন্দা পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে; সমাবেশ করতে পারব কি না। এর কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আজ অন্তত সেই নিশ্চয়তা হয়েছে। নির্ভয়ে আমরা এসে কথা বলতে পারছি। আমাদের দাবিগুলো রাখি। সুতরাং এগুলো আরও নিশ্চিত করার জন্য সত্যিকারের যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যে পরিবেশ মানুষকে আস্থাশীল করে তুলবে। এই দেশের ভালো মন্দ নির্ধারণের দায়িত্ব একমাত্র জনগণের। কোনো দেশের নয়। এ দেশ কীভাবে চলবে তার নীতিমালা নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ। অন্য কোনো দেশ করবে না।’
অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী, সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা (মামুন), রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান (রিটন), সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম (রবি) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য দেওয়ার পর রুহুল কবির শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। এরপর তিনি দুপুরে নগরের গোলজারবাগ ঈদগাহ ময়দান ও গুড়িপাড়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ করন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।