সিদ্ধিরগঞ্জে যমুনা লাইমসের ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া ২০ টন চুনা ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমস। রহস্যজনক কারনে মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে ট্রেজারি জমা দিয়ে চুনা ভর্তি ট্রাকটি ছাড়িয়ে নেন মালিকপক্ষ। 

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের দিকে ঢাকা-মেট্রো- ট ১৬-৫২৭৫ চুনা ভর্তি ট্রাকটি রওনা দিলে ট্রাকটি আটক করা হয়। ট্রাকে চুনার চালান অনুযায়ী ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মালামালসহ জব্দ করা হয়।

পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের এসির নির্দেশ অনুযায়ী ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। 

যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষ যদি উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কাস্টমস কর্মকর্তা আলিমের যোগসাজশে জরিমানাসহ নামমাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক জমা দিয়ে চুনা গাড়ীটি নিয়ে যায়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুনা কারখানার কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের আলীমের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এই ঝামেলা মিটিয়েছেন যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষকে মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে এ টাকা আদায় করে। 

কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আলিম বিভিন্ন চুনা কারখানার মালিকদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করছে। শুধু কাস্টমস কর্মকর্তা আলীমই নয় কাস্টমসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

এসব কাস্টমস কর্মকর্তারা কখনো কাস্টমসের এসি আবার কখনো কমিশনারের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। 

যমুনা লাইমসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যমুনা লাইমসের ভ্যাট ফাঁকি দেওযার দায়ে জরিমানাসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট জমা দেওয়া হয়েছে।

আপনাদের প্রতিষ্ঠান যমুনা লাইমস সবসময় ভ্যাট ফাঁকি দেন প্রমানিত হলো এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম আমতা আমতা করতে থাকেন। এতে করে সরকার শুধু মাত্র চুনা কারখানাগুলোতেই প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। 

এলাকাবাসী জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জে ১৬ টি চুনা কারখানা রয়েছে। যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ চুনা ব্যবসা করে আসছে। এতদিন যে পরিমান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন ৩০ বছরের হিসেবে তিনি সরকারের ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

কাস্টমস সঠিক তদন্ত না করেই শুধু মাত্র অল্প কিছু টাকা রাজস্ব দিয়েই ছাড় পেয়েই গেলো যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম। এসব দুর্নীতিবাজ কাস্টমসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সচেতন মহলের দাবি, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনলে দেশে অনেক দুর্নীতি কমবে। 

সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের বিভাগীয় সরকারী কর্মকর্তা কাজী ফারুক ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে বলেন, ভ্যাট ফাঁকির দায়ে চুনা কারখানা যমুনা লাইমসকে ৫ গুন জরিমানাসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট আরোপ ও আদায় করা হয়।  
 

.

উৎস: Narayanganj Times

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ