সিদ্ধিরগঞ্জে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া চুনা ভর্তি ট্রাক আটক, ৫ লাখ টাকায় রফা
Published: 14th, January 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে যমুনা লাইমসের ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া ২০ টন চুনা ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমস। রহস্যজনক কারনে মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে ট্রেজারি জমা দিয়ে চুনা ভর্তি ট্রাকটি ছাড়িয়ে নেন মালিকপক্ষ।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের দিকে ঢাকা-মেট্রো- ট ১৬-৫২৭৫ চুনা ভর্তি ট্রাকটি রওনা দিলে ট্রাকটি আটক করা হয়। ট্রাকে চুনার চালান অনুযায়ী ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মালামালসহ জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের এসির নির্দেশ অনুযায়ী ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষ যদি উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কাস্টমস কর্মকর্তা আলিমের যোগসাজশে জরিমানাসহ নামমাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক জমা দিয়ে চুনা গাড়ীটি নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুনা কারখানার কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের আলীমের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এই ঝামেলা মিটিয়েছেন যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস যমুনা লাইমস কর্তৃপক্ষকে মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে এ টাকা আদায় করে।
কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আলিম বিভিন্ন চুনা কারখানার মালিকদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করছে। শুধু কাস্টমস কর্মকর্তা আলীমই নয় কাস্টমসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।
এসব কাস্টমস কর্মকর্তারা কখনো কাস্টমসের এসি আবার কখনো কমিশনারের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি।
যমুনা লাইমসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যমুনা লাইমসের ভ্যাট ফাঁকি দেওযার দায়ে জরিমানাসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট জমা দেওয়া হয়েছে।
আপনাদের প্রতিষ্ঠান যমুনা লাইমস সবসময় ভ্যাট ফাঁকি দেন প্রমানিত হলো এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম আমতা আমতা করতে থাকেন। এতে করে সরকার শুধু মাত্র চুনা কারখানাগুলোতেই প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জে ১৬ টি চুনা কারখানা রয়েছে। যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ চুনা ব্যবসা করে আসছে। এতদিন যে পরিমান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন ৩০ বছরের হিসেবে তিনি সরকারের ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
কাস্টমস সঠিক তদন্ত না করেই শুধু মাত্র অল্প কিছু টাকা রাজস্ব দিয়েই ছাড় পেয়েই গেলো যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম। এসব দুর্নীতিবাজ কাস্টমসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সচেতন মহলের দাবি, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনলে দেশে অনেক দুর্নীতি কমবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের বিভাগীয় সরকারী কর্মকর্তা কাজী ফারুক ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে বলেন, ভ্যাট ফাঁকির দায়ে চুনা কারখানা যমুনা লাইমসকে ৫ গুন জরিমানাসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট আরোপ ও আদায় করা হয়।
উৎস: Narayanganj Times
এছাড়াও পড়ুন:
সমুদ্র বাণিজ্যে অশনিসংকেত
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত তীব্র হতে থাকায় সমুদ্র বাণিজ্যের আকাশে মেঘ জমেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তালিকাভুক্ত তেলবাহী ট্যাঙ্কার কোম্পানি ‘ফ্রন্টলাইন’ হরমুজ প্রণালি দিয়ে উপসাগরে নতুন করে জাহাজ পাঠানোর চুক্তি থেকে সরে আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় জাহাজ মালিকরা হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে চলতে চাইছেন।
আবার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাতে গার্মেন্ট পণ্য পাঠাতে জাহাজগুলোকেও ব্যবহার করতে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বোঝাই করে এতদিন এই পথে চলাচল করলেও এখন বাধার মুখে পড়ছে তারাও। বাধার মুখোমুখি বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের জাহাজগুলোও। বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলের জোগান এবং এক-তৃতীয়াংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়েই বহন করা হয়। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরকেন্দ্রিক কনটেইনার জাহাজ চলাচলেও ব্যবহৃত হয় এই পথ। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠায়।
ফ্রন্টলাইনের প্রধান নির্বাহী লার্স বারস্টাড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে ঢোকার জন্য এখন খুবই কমসংখ্যক মালিক চার্টার নিচ্ছেন, আমরাও না। আমরা নতুন করে উপসাগরে ঢোকার চুক্তি করছি না, এটা এখন আর হচ্ছে না।’ বারস্টাড জানান, ফ্রন্টলাইন কোম্পানির যেসব ট্যাঙ্কার আগে থেকে উপসাগরে অবস্থান করছিল সেগুলো নিরাপত্তা জোরদার করে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর নিরাপত্তা বহরের সঙ্গে হরমুজ প্রণালি থেকে বের হয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক বোর্ড সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে অনেক জাহাজ এই পথ ধরে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায়। সংঘাতের প্রভাবে এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই যাত্রা। এটির প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। আর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রভাব পড়লে এর ব্যাপকতা ছড়াবে পুরো দেশে।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তা পুরো সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য হবে অশনিসংকেত। পণ্য পরিবহন খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে বীমার পরিমাণও।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। গত বছরও এই দুটি দেশে আগের চেয়ে ৪০ শতাংশ পোশাক বেশি রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
শিপিং মালিকরা খুঁজছেন বিকল্প পথ
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প পথ হিসেবে লোহিত সাগর ও আরব সাগরের কথা চিন্তা করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। তখন জাহাজ ভাড়া অনেক বাড়বে। বেড়ে যাবে বীমা খরচও। কারণ লোহিত সাগরপথও ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, ২০২৩ সালের শেষ দিকে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা শুরু হলে অনেক বড় শিপিং কোম্পানি এশিয়া-ইউরোপের প্রচলিত সুয়েজ খালপথ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার
উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে বিকল্প পথে যাওয়া শুরু করে। এ জন্য লোহিত সাগর হয়ে মালপত্র পরিবহনের বীমা খরচ তখন ২০ শতাংশ
বেড়ে যায়। হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, জলদস্যুতা ও অন্যান্য ঝুঁকির কারণে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য বীমা খরচ তখন এতটাই বাড়ে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সেটা আরও বাড়বে।
‘বিপদ’ দেখাচ্ছে অতীত
সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালিতে এক ধরনের ‘অঘোষিত অবরোধ’ আরোপ করতে পারে। কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে উত্তেজনা চলাকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ‘এমএসসি এরিয়াস’ নামে একটি কনটেইনার জাহাজ আটক করে তা ইরানের জলসীমায় নিয়ে যায়। জাহাজটি ছিল ইসরায়েলের ওফার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত জোডিয়াক মেরিটাইমের সঙ্গে সংযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোরটাল শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ
ইরান-ইসরায়েলে পাল্টাপাল্টি হামলায় বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দেশ দুটির সশস্ত্র হামলার জেরে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ অনেক দূর ঘুরে বিকল্প পথে আসতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। বাংলাদেশের এই খরচটা বাড়বে ব্যাপকহারে। কারণ আমাদের গার্মেন্ট পণ্য সমুদ্রপথে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায় হরমুজ প্রণালি ধরে।’
তেলের দাম বাড়তে পারে
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে দেশেও। লিটার প্রতি দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা রয়েছে তা তিনি এখনই স্পষ্ট করেননি। বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিবেচনায় এনে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করি আমরা। এ জন্য প্রতি মাসে গড় করে মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। এখন যে
হারে দাম বাড়ছে তাতে নতুন দর ঠিক করতে হবে। তবে কত টাকা বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ বিশ্ব বাণিজ্যের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসের দাম ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়। এটি গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।