অপহরণ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে খামারি ও বাগান মালিকদের। কাজে গেলেই হানা দেয় অস্ত্রধারীরা। ধরে নিয়ে যায় বাগান মালিক-শ্রমিকদের। এমন অবস্থা চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায়। গত আট মাসে তারা প্রায় ৫০ জনকে অপহরণ করার পর মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়।

ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা হলেই ভারী অস্ত্র নিয়ে লোকালয়ে আসে অপহরণকারীরা। ক্ষেতখামার, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের ধরে নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়। তাই পাহাড়ি এলাকায় কাজে যেতে ভয় পান খামারি ও শ্রমিকরা।
গত সোমবার পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও-পাহাড়ের পূর্ব পাশে শসা ক্ষেতে কাজ করার সময় সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী লোকজন খামারি ও শ্রমিকদের ঘিরে ফেলে। কৌশলে কয়েকজন পালিয়ে যেতে পারলেও হাইদগাঁও ২ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ শেখ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবকে ধরে ফেলে। তাদের ধরে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় নিয়ে গেলে কৌশলে পালিয়ে আসেন মুজিব। তবে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান হামিদ।

কেলিশহর খীল্লাপাড়া-দারোগাহাট এলাকার মনছুর আলম ও মো.

নাছের, উপজেলার মৌলভী বাজারের পূর্ব পাশে পাগলীর মুখ এলাকায় খামার ও লেবু বাগানে কাজ করার সময় দু’জনকে ধরে 
নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। তাদের রাঙামাটির রাজস্থলী নিয়ে যাওয়ার পর মনছুরের থেকে ৮০ হাজার এবং নাছির থেকে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়।
৩ জানুয়ারি লেবু বাগানে কাজ করতে যান বোয়ালখালী কড়লডেঙ্গা এলাকার বাগান মালিক রুবেল ও তাঁর ৪ জন শ্রমিক। বিকেল ৫টার দিকে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। পাঁচজনের থেকে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে রাতে ছেড়ে দেয়।
১১ জানুয়ারি বিকাল ৫টার দিকে চন্দনাইশের হাশিমপুর ও কাঞ্চননগর এলাকার পেয়ারা বাগান থেকে ফেরার পথে আহমদ হোসেন, মোহাম্মদ রহিম, রবিউল আলম, মোহাম্মদ কামাল, জুনাইদকে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তারা।

গত বছরের জুনে পটিয়া-চন্দনাইশের সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচজন, ২০ মে কাঞ্চননগর থেকে ৯ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন থেকে চার দিন পরে মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। 
গত বছর চট্টগ্রাম নগরীর সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলমের কেয়ারটেকার নূরুল আলমের বাবা আবদুছ ছাত্তারকে অপহরণ করা হয়। চার দিন পর ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় তাঁকে। 
বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা পেকুয়াপাড়া, চেমিপাকা, মীরের খীল এলাকার কিছু সন্ত্রাসী অপহরণ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে কল্লাকাটা কামালের নেতৃত্বে একটি চক্র। রাঙামাটির চাকমাদের একটি পক্ষ, বান্দরবানের মারমা গ্রুপ, ত্রিপুরার একটি চক্রও সক্রিয়। অপহরণকারীরা ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহাড়ি লোকজনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে। বাড়িতে খবর দিয়ে দালালের মাধ্যমে টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেয়।

মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া হামিদ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে বাগান মালিক হামিদের বড় ছেলে মোহাম্মদ কায়সার সমকালকে বলেন, শ্রীমাই পাহাড়ে তাদের একটি বাগান রয়েছে। বাগানে ৪০ বছর ধরে লেবু, নানা জাতের সবজি, শসার চাষ করেন তারা। রয়েছে মাছের খামারও। গত সোমবার সকাল তাঁর বাবা আবদুল হামিদ, ছোট ভাই মো. দিদার ও আরও দুই শ্রমিক বাগান থেকে শসা ও লেবু তুলতে যান। তাঁর বাবা ও ছোট ভাইয়ের তথ্যমতে, ১১ থেকে ১২ জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাদের অপহরণ করে। এ সময় দুই শ্রমিক ও ছোট ভাইকে ছেড়ে দিয়ে তাঁর বাবাকে আটকে রাখে সন্ত্রাসীরা। ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাঁর বাবাকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। পরে মুঠোফোনে বেলা ১টার দিকে ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর পর সন্ধ্যার আগে তাঁকে ছেড়ে দেয়।
অপহরণের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসন-রাজনীতিবিদদেরও। অপহরণ থামাতে কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।
পটিয়ার বনকর্মী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পাহাড়ে বন বিভাগের কাজ করছি। আগের তুলনায় পাহাড়ে অপহরণের ঘটনা বেড়েছে।  কাজ করতে গেলে সব সময় আতঙ্কে থাকি।’
হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল গণি জানান, অপহরণ আতঙ্কে রয়েছেন পাহাড়ি এলাকার বাগান মালিকরা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পটিয়া বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাসিক সভায় আমরা বলেছি শক্ত হাতে অপহরণকারীদের দমন করতে হবে। অপহরণ বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে পাহাড়ি এলাকায় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান দরকার।
ইউএনও ফারহানুর রহমানের ভাষ্য, অপহরণসহ যে কোনো ধরনের অপরাধ দমনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপহরণের ঘটনাগুলো কোন কোন স্থানে, সেটি নির্ধারণ করে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের 
ভারী অস্ত্র রয়েছে। তাদের সঙ্গে পুলিশের একা লড়া সম্ভব না। যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণক র ক জ কর এল ক য় এল ক র আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ