ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দেওয়ার ৬০ দিন আগে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রতিস্থাপন করে নিরপেক্ষ সদস্যদের নিয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট’ গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল। এ ছাড়া ডাকসুর ভোটকেন্দ্র হল থেকে সরিয়ে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করার কথা বলেছে তারা।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মাঠে সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। এর আগে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবনা জমা দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রস্তাবে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন না দিয়ে সভাপতি পদে সরাসরি ছাত্রদের নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে ছাত্রদল। বর্তমানে উপাচার্য ক্ষমতাবলে ডাকসুর সভাপতি থাকেন। নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাহী কমিটির দুটি সহসভাপতি ও দুটি সাধারণ সম্পাদক পদ তৈরি করে একটি করে ছাত্র ও একটি করে ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দু’জন ভিপি ও দু’জন জিএস থাকবেন। 

বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ পদে উপাচার্য ক্ষমতাবলে একজনকে নিয়োগ দেন। কিন্তু অর্থ সম্পাদক পদে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটিতে নতুন ৫টি সম্পাদক পদ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে তারা। পদগুলো হলো মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, গবেষণা ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক এবং কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধিবিষয়ক সম্পাদক।

‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক’ পদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানবিষয়ক সম্পাদক’ পদে রূপান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল। একই সঙ্গে এই পদের কার্যাবলির নাম অনুযায়ী পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে তারা। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহি-জনতার বিপ্লব, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, সাম্য ও সবার জন্য সমান সুযোগের মতো আদর্শগুলোর প্রসারে এই পদে নির্বাচিত সদস্য কাজ করবেন।

বর্তমান ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে একীভূত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ ১৩টি থেকে ১৫টি করে মোট ৩৩টি পদ তৈরির প্রস্তাব রেখেছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নিয়মিত নির্বাচন নিশ্চিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এ যথাযথ সংশোধন আনা একান্ত জরুরি বলে মনে করছে ছাত্রদল।

হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উপদেষ্টা পরিষদে আহ্বায়ক থাকবেন উপাচার্য। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ, ডিনস কমিটির একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি, সিন্ডিকেটের অধ্যাপক ক্যাটেগরির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ডাকসুর নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত সহসভাপতি সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদে। হল সংসদে হলের প্রাধ্যক্ষ আহ্বায়ক থাকবেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসারে দু’জন হাউস টিউটর, সংশ্লিষ্ট হল অ্যালামনাইয়ের সভাপতি, হল সংসদের নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি (সদস্য সচিবের দায়িত্বে) থাকবেন।

গঠনতন্ত্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের একক ক্ষমতা বাদ, উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ অনুসারে বর্তমান গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সভাপতির একক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তা নির্বাহী কমিটি এবং প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ছ ত রদল ক ষমত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বারের নির্বাচন চেয়ে আইনজীবী অধিকার পরিষদের চিঠি

ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন চেয়ে চিঠি দিয়েছে আইনজীবী অধিকার পরিষদ ঢাকা বার ইউনিট।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের বরাবর এ চিঠি দেওয়া হয়। এসময় ঢাকার বার ইউনিটের আহবায়ক আইনজীবী মো. মমিনুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আইনজীবী হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। 

চিঠির বিষয়ে আইনজীবী অধিকার পরিষদ বলছে, গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর তাদের সমর্থিত আইনজীবীরা পালিয়ে যাওয়ায় এক ক্রান্তিলগ্নে অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে। যদিও ঢাকা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রে এ ধরনের অ্যাডহক কমিটির বিধান নেই। তবুও ঢাকা বারের আইনজীবীরা বৃহত্তর স্বার্থে এ অ্যাডহক কমিটির কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। কমিটির দায়িত্ব ছিল গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। পরবর্তীতে এক সাধারণ সভায় এ অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ গত ২৬ জানুয়ারি তিন মাস বাড়ানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল গঠন করার কথা। তবে ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণার শেষ দিন থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ৩২ হাজারের অধিক আইনজীবীর ভোটাধিকার প্রশ্নে কোনো ধরনের অগঠনতান্ত্রিক পদক্ষেপ বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ সমর্থন করবে না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন হিসেবে আইনজীবীদের ভোটাধিকার প্রশ্নে আপোষহীন থাকবে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠনে অ্যাডহক কমিটিকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। 

এ বিষয়ে ঢাকা বার ইউনিটের সদস্য সচিব আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা এখন চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে আমরা আইনজীবী অধিকার পরিষদ কঠোর আন্দোলন করবো।” 

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, “অফিস থেকে জানানো হয়েছে, আমার বরাবর একটা চিঠি এসেছে। তবে এখনো চিঠি পড়া হয়নি। সাধারণ আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েই আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। সেই সময় শেষ হয়নি। সাধারণ আইনজীবীরা বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা/মামুন/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে পন্থীই হোন না কেন, একাত্তর আমার ইতিহাসের অংশ: ফরহাদ মজহার
  • স্বেচ্ছাশ্রমে চট্টগ্রামে খাল খনন করছে বিএনপি
  • গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য: আলী রীয়াজ 
  • ঢাকা বারের নির্বাচন চেয়ে আইনজীবী অধিকার পরিষদের চিঠি