‘সাড়া বাড়িতে স্প্রে (চেতনানাশক) করিছিল ডাকাতরা। সগলেই (সবাই) বেহুস হয়ে পড়েছিলাম। সেই সুযোগে ডাকাতরা ঘরের তে টাকা, সোনা নিয়ে গেছে। এহন সাঁঝ লাগলি চিন্তায় গাঁ হাত পাও টালা (ঠান্ডা) হয়ে যায়। সহাল সহাল (সকাল) শুয়ে পড়ি। জানের মায়াতো সগলেরই আছে।’ চোখে মুখে হতাশা আর আতঙ্কের ছাপ রেখে সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন লতিকা রাণী বিশ্বাস (৫৫)। 

তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ঘোষপাড়া এলাকার বিমল ঘোষের স্ত্রী। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে তাদের বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে প্রায় এক লাখ নগদ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। লতিকা রাণীর ভাষ্য, ৫ আগস্ট্রের পর পুলিশের তৎপরতা নেই। সেজন্য এলাকায় প্রায় দিনই চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। 

এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্ট্রের পরে পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে। সেজন্য প্রায় দিনই এলাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সেজন্য নিজের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে প্রতি রাতে ১৬ জন করে পাহাড়া দিচ্ছেন তারা। সবাই সতর্ক করতে পাহাড়ার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে। 

জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি রাতে একই এলাকার বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম রিপনের বাড়িতে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল ৮-১০ জনের একদল ডাকাত। তাদের উপস্থিতি স্থানীয়রা টের পেলে তারা দ্রুত চলে যায়। রিপন কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

রিপনের ছেলে তানভির আহমেদ বলেন, “জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিলাম। সেসময় বাড়ির ভেতর থেকে জানালায় শব্দ হচ্ছিল। সেসময় জানালার কাছে আসলে একজন ডাকাত বাইরে থেকে হাত ধরে ফেলে। উঠানে আরো ৮-৯ জন ছিল। তাদের হাতে পিস্তল, চাইনিস কুড়াল ছিল। তখন রাত ২টা বাজে। ডাকাতরা প্রায় এক ঘণ্টা হাত চেপে ধরে রাখে। অনেক চেষ্টার পর হাত ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েকজনকে ফোন দিলে সবাই বাড়িতে আলো জ্বালায়। তারপরে ডাকাতরা গেট খুলে চলে যায়।” 

কয়া স্কুলপাড়ার আব্দুল মজিদের স্ত্রী রাফেজা খাতুন বলেন, “২৭ ডিসেম্বর আমার বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রহাতে ৪-৫ জন ডাকাত ঢুকেছিল। তারা প্রথমে বড় ছেলেকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। পরে সবাইকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা এবং সাত থেকে আট ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।” 

লতিকা রাণীর ছেলে কাজল ঘোষ বলেন, “ডাকাতদের স্প্রের কারণে বাড়ির সকলেই অচেতন হয়েছিল। ঘটনার পরদিন কেউ হাসপাতালে কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনো সবার ঝিমধরা কাটেনি।” 

কয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো.

আকাশ বলেন, “কয়া গ্রামে ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রামবাসী একত্রিত হয়েছে। প্রতিরাতে পাহাড়ার মহড়া চলছে।” 

নরসুন্দরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “১৫ বছর পরে ফের গ্রাম পাহাড়া চালু হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাহাড়া দিয়েছি।”
 
কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন, “ডাকাত ও চোরের উপদ্রব ঠেকাতে নিজেরাই রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।” 

কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা একদম ভেঙে পড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

এদিকে গ্রামবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা আরো জোড়দার করা হবে। অপরাধ নির্মূলে সকলের সহযোগীতা দরকার।”

ঢাকা/কাঞ্চন/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের ছুটিতে ৯৯৯-এ মারামারির অভিযোগ ছিল ৪ হাজার ১০২টি

১৫ হাজার ৬১৯ জন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন জরুরি সহায়তা দেয় পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস। তবে এ সময় সবচেয়ে বেশি ছিল মারামারির অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে এই সংখ্যা ৪ হাজার ১০২টি। 

রোববার পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে ৫ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৯৯৯-এ আসা কলের ভিত্তিতে জরুরি পুলিশি সহায়তা দেয় ১৩ হাজার ৮৩১ জনকে। একই সময়ে ৯৯৩ জনকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও ৭৯৫ জনকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা দেওয়া হয়।

এবারের কোরবানি ঈদে দেশজুড়ে যত্রতত্র পশুর হাট, রাস্তা ও নৌপথে পশু পরিবহন, পশু জবাই ও জনসমাগমের কারণে নানা বিশৃঙ্খলার শঙ্কা ছিল। তবে ৯৯৯-এ কলের ভিত্তিতে কার্যকর মনিটরিং ও তৎপরতায় এসব সংকট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। 

ঈদে যেসব অপরাধ বা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পশুর হাট ও রাস্তায় চাঁদাবাজি, জোর করে পশু অন্য হাটে নিয়ে যাওয়া, অজ্ঞান/মলম পার্টির তৎপরতা এবং অতিমাত্রার শব্দদূষণ। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা পান ১ হাজার ২৭১ জন।  
তাছাড়া কাউকে আটকে রাখা-সংক্রান্ত অভিযোগে সাড়া দেওয়া হয় ১ হাজার ২১৪ জনকে। পাশাপাশি জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পান ১ হাজার ৬২ জন ও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে সহায়তা দেওয়া হয় ৯৯২ জনকে।

৯৯৯ সেবা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদে মানুষের চলাচল, পশু কেনাবেচা, বড় আকারের জনসমাগম—সবকিছু মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে যাচাই করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিশেষ করে ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি চালানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
  • ভারতে আবারও বিমান বিপর্যয়, পাইলটের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন ২৫০ হজযাত্রী
  • ঈদের ছুটিতে ৯৯৯-এ মারামারির অভিযোগ ছিল ৪ হাজার ১০২টি