প্রতিষ্ঠার দেড় যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নেই একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট। অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যের বেশ অভাব রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

এদিকে, নতুন ওয়েবসাইটের কাজ চলমান রয়েছে, আগামী ১ মাসের মধ্যে চালু হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, বিভাগ ও অনুষদ ভিত্তিক শিক্ষকদের তালিকা থাকলেও শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথ্যগুলো হালনাগাদ করা নয়। রিসার্চ সেলের সেকশনে তাদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এছাড়াও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত  শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন- ভর্তি নির্দেশিকা, ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার ফলাফল ও নোটিশ। এসব যথাসময়ে আপডেট না হওয়ায় ও গবেষণার পরিপূর্ণ তথ্য না থাকায় শিক্ষার্থীরা বারবার ভোগান্তিতে পড়ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তথ্য, প্রশাসনিক কার্যক্রম, অনুষদের তালিকা, গবেষণার তথ্য ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় অনেক ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ বা পুরোনো। ওয়েবসাইট তথ্যসমৃদ্ধ না হওয়া ও প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো আধুনিক যুগেও তাদের পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকেই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।

নোবিপ্রবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিচয়ও বহন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট না থাকা হতাশাজনক। আমাদের পরীক্ষার সময়সূচি বা নোটিশের জন্য নির্ভর করতে হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ম্যানুয়ালি জানার ওপর। এতে সময় নষ্ট হয় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস হয়ে যায়। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এ বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া।”

ওয়েবসাইটে তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, “আমরা প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাই যদি দুর্বল হয়, তাহলে সেটি কতটা বাস্তবসম্মত? নোবিপ্রবির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আধুনিক, স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক। এটি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের কাজ সহজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটালাইজেশনের অভাব আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। আমি আশা করি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি সাইবার সেন্টারের পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ তৌহিদ বলেন, “নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য আসার পর থেকে এটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। ২ মাস আগে থেকে আমরা অফিসিয়ালি কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি, আগামী মাসে পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও আধুনিক ডিজাইন ডেটা চালু করতে পারব।”

নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক বলেন, “ওয়েবসাইট নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ প্রায় শেষ। আগামী ১ মাসের মধ্যেই আমরা উদ্বোধন করবো।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ