সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ কেন্দ্র। নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে দলের পদধারী নেতাদের মধ্যে।

ইতোমধ্যে জেলা ও নগর বিএনপির নেতাদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিলেটের কমিটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা চলছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মামলা বাণিজ্য ও নিজেদের বিভেদই নির্বাচনে ভরাডুরির কারণ বলে উল্লেখ করছেন অনেকে।

গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে ২৬ পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা জয়ী হন। এ ছাড়া বিএনপিপন্থি ছয়জন ও জামায়াতপন্থি পাঁচজন জয় পান। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থি এবং দু’জনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি।

নির্বাচনে সব পদেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অংশ নেন। ফল প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, বিএনপিপন্থিরা আওয়ামীপন্থিদের পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি তাদের জেতাতে বিএনপি ঘরানার ভোটাররাও সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে বিএনপিপন্থি বেশির ভাগ আইনজীবী হেরে গেছেন। প্রার্থীদের ফল বিপর্যয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপির সিলেট জেলা ও নগর কমিটির শীর্ষ চার নেতাকে কারণ শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে জয়ী করার জন্য জেলা বা মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন ও নির্বিকার ভূমিকার জন্য নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটেছে। 
নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন– জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোকজের জবাব জমা দিতে বলা হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা নোটিশ পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন আবদুল কাইয়ুম ও রেজাউল হাসান।

এ বিষয়ে বুধবার আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আছি, শোকজের জবাব দিয়েছি।’ রেজাউল হাসান বলেন, ‘সময়ের মধ্যেই জবাব দিয়েছি। যারা আইনজীবী সমিতিতে আছেন, তাদের অধিকাংশই জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার পরও আমরা আমাদের মতো করে ক্যাম্পেইন করেছি।’

এদিকে নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণে গত রোববার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেটের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানানো হয়। এ ছাড়া বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

পরাজিত সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘আমাকে কৌশলে হারানো হয়েছে। আমি নিজ দলের রোষানলের শিকার। এর আগেও আমাকে পিপির আসনে বসতে দেওয়া হয়নি।’

নির্বাচনে ভরাডুবিতে তৃণমূলেও সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। ‘আমি আমার বিচার চাই’ শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট দেন মইনুল হক বুলবুল নামে এক আইনজীবী।

তিনি লিখেছেন, ‘সিলেট বারের নির্বাচনে বিএনপির বিপুল ভরাডুবি তাদের এক দিনের কর্মফল নয়। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আদালতপাড়া কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সিলেটের রাজনীতি কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, বিএনপির সে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ। এর সূত্রপাত প্রথমে রাজনৈতিক মামলা বাণিজ্য দিয়ে। আদালতে বিএনপির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমেদের অনুসারী জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রিপন আহমদ পাটওয়ারী ও দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাঈয়ীদ আহমেদের সক্রিয় প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে (পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য), যা নিয়ে সিলেট আদালতপাড়ায় বিএনপি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পর গেল বছরের অক্টোবরে পিপি-জিপি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের দ্বিতীয় কিস্তির সূত্রপাত। বিএনপিন্থি আইনজীবীদের চর দখলের আদলে দৌরাত্ম্য ও বিরোধের কাণ্ডকারখানায় সিলেট বারের সাধারণ ভোটাররা নিজেদের নিরাপত্তায় উল্টো পথ ধরেন। এসবের ফলাফল যা হওয়ার তা হয়েছে, পূর্ণ প্যানেলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। দুর্বলতা বেরিয়ে আসে বিএনপির। যারা বিএনপির ভেতরে থেকে নিজের স্বার্থের জন্য দলকে ডুবাতে পিছপা হয়নি, তাদের সরানোর মিশন শুরু।’
আনোয়ার চৌধুরী নামে আরেকজন লেখেন, ‘অতিমাত্রায় আত্মতুষ্টি এবং মামলা বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী হওয়ায় এই ফলাফল।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স র ব এনপ আইনজ ব র কম ট র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর

বানু মুশতাক বললেন, ‘মানুষ ও তার মৌলিক স্বভাব সবখানেই একই ধরনের। এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। আমার বিষয়বস্তু নারী, প্রান্তিক মানুষ, কণ্ঠহীন সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।’

বানু মুশতাকের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কোনো ছোটগল্প সংকলন বুকার জিতেছে। আবার কন্নড় ভাষাতেও এসেছে প্রথম বুকার। হার্ট ল্যাম্প ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বানু মুশতাকের প্রথম বই। তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর।

বানু মুশতাক একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও লেখক। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি গল্প লিখছেন। হার্ট ল্যাম্প তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্পের একটি সংকলন। তাঁর গল্পে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মুসলিম নারীদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কীভাবে পারিবারিক রীতির জাঁতাকলে পড়েন।

বানু মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ, মেয়েরা, আজও তারা অবহেলিত। আর ঘর থেকেই এর শুরু।’

তাঁর অনুবাদক দীপা ভাস্তি বলেন, ‘এই গল্পগুলো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও একেবারে সর্বজনীন।’

একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কাজ লেখালেখিতে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের জবাবে বানু মুশতাক বলেন, ‘কেউ যখন কোনো আইনি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, তখন তারা তাদের সব অনুভূতি ভাগ করে নিতে চায়। সেসব তাড়না আমার মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তারপর একদিন ছোটগল্পে পরিণত হয়।’

কিন্তু আইনি মামলা নাহয় সমস্যার সমাধান করতে পারে, ছোটগল্প কি পারে? ‘অবশ্যই। কারণ নীরবতা কোনো সমাধান নয়। তারা যে পাল্টা লড়াই করতে পারে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি গল্পের মাধ্যমে দিয়েছি।’

বানু মুশতাকের ‘কালো গোখরারা’ গল্পে একজন নারীকে জানানো হয়েছে, ইসলাম নারীদের শিক্ষিত হওয়ার এবং কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু সমাজ সুবিধার জন্য তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। গল্পে আমি বলেছি, নিজের অধিকারের কথা বলো।’ বলেন বানু মুশতাক।

বানু মুশতাকের গল্পে কমেডিও আছে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই স্টাইল ব্যবহারের কারণ আমি ক্ষমতাকাঠামোর মুখে সত্য বলছি। পিতৃতন্ত্র, রাজনীতি, ধর্ম—সব একসঙ্গে মিলিয়েই ক্ষমতাকাঠামো। খুব গম্ভীর সুরে কথাটি বললে এর পরিণতি যা–ই হোক না কেন, আমি দায়বদ্ধ থাকব। তাই আমি ব্যঙ্গাত্মক মোচড় দিই। সেলফ সেন্সরশিপের বদলে এই কৌশল ব্যবহার করি।’ 

অনুবাদক ভাস্তি বলেন, ‘নারীরা যে পুরুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, রসিকতা করে এই গল্পে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’

বানু মুশতাক বান্দায়া সাহিত্যের (কন্নড়ের প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলন) ঐতিহ্যে লিখেছেন। ১৯৭০–এর দশকে লেখকেরা ছিলেন ‘বেশির ভাগ পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের’। সে আন্দোলনের স্লোগান ছিল, ‘লেখক হলে আপনিও একজন যোদ্ধা’। এটি নারী ও সংখ্যালঘু লেখকদের নিজস্ব পরিচয়ে লিখতে উত্সাহিত করেছিল।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ 

রবিউল কমল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির ১৬ সদস্যকে অব্যাহতি
  • এক যুগ আগের ভাঙচুরের মামলা থেকে খালাস পেলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ বিএনপির ৯ নেতা-কর্মী
  • লক্ষ্মীপুরে আইনজীবী-কর্মচারী হাতাহাতির ঘটনায় মামলা, পরোয়ানা জারি
  • দুদকের মামলায় যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সাত্তার কারাগারে
  • চট্টগ্রামে বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময়কে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
  • বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
  • জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর