নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অধিগ্রহণ করা শতকোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে আইল তৈরির কাজও শুরু করেন। 

জানা যায়, কাঁচপুর সেতু-সংলগ্ন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় গত ১৫ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় সাব্বির ভূঁইয়া এ জমির মালিকানা দাবি করে তা দখল করে নেন। খবর পেয়ে শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ  মজুমদার লোকজন পাঠিয়ে ওই ব্যক্তির চলমান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। 

নারায়ণগঞ্জ সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মৌজায় ৩৫৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৩১৩ শতাংশ জমি কাঁচপুর সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা। নারায়ণগঞ্জের ডিএম রোড উকিলপাড়া এলাকার মৃত আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে সাব্বির ভূঁইয়া জমির মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। অধিগ্রহণ করা জমিটি কাঁচপুর সেতু-সংলগ্ন। জমিটি কেপিআইভুক্ত এলাকায় হওয়ায় কেউ যাতে ওই জমি অবৈধ দখল করতে না পারে সেজন্য সেখানে সওজের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার সদস্যরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।  

অভিযুক্ত সাব্বির ভূঁইয়া বলেন, তাদের ৩৫৯ শতাংশ জমির মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৩১৩ শতাংশ অধিগ্রহণ করেছে বলে শুনেছেন। অবশিষ্ট ৪৬ শতাংশ জমি তাদের রয়ে গেছে। তাই মাটি কাটার কাজ করতে গিয়েছেন। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা প্রথমে তাদের মাটি কাটার কাজে বাধা দেন। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নারায়ণগঞ্জ দপ্তরে গিয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্ল্যাহ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের অধিগ্রহণ করা জমির কথা জানান। তারা লোকজন দিয়ে তাদের (সাব্বির) কাটা মাটি ও আইল সরিয়ে দেন। এ জমি নিয়ে ২০০৯ সালে আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

মামলা চলমান ও নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় কী করে জমির দখল নিতে গেলেন– এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সাব্বির। 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগী প্রকৌশলী আহসান উল্ল্যাহ মজুমদার বলেন, আদালতের বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞার কোনো কাগজ তারা পাননি এবং সাব্বির ভূঁইয়াও দেখাতে পারেননি। আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই তিনি জমি দখল করতে পারেন না। 

সাব্বিরের জমি তাদের (সওজ) দখলে নেই দাবি করে এই প্রকৌশলী বলেন, তাদের অধিগ্রহণ করা জমি কারও দখল করার সুযোগ নেই এবং দখল করতেও দেবেন না। তিনি বলেন, সাব্বিরের জমি যদি থেকে থাকে তা সওজের জমির মধ্যে নেই। তাদের অধিগ্রহণ করা জমির সীমানার মধ্যেই তারা দখলে আছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই জমিতে থাকা এনডিআই কোম্পানির অফিস কক্ষ দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। লুট করে নেয় সব মালপত্র। সাব্বির যদি আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ দেখাতে পারেন সে ক্ষেত্রে তারা আদালতের আদেশের সম্মান অবশ্যই দেখাবেন। তারা বাধা দেওয়ার পর সাব্বির আর এ জমিতে আসেননি। জমি তাদের দখলেই রয়েছে। তবে তাঁর লাগানো সাইনবোর্ডটি এখনও রয়েছে বলে জানান তিনি।

এনডিআই কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাটের বিষয়ে সাব্বির ভূঁইয়া বলেন, আগুন ও লুটপাটের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি ওই সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন। ২০ আগস্ট তিনি দেশে এসেছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ইনব র ড চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ