শতকোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে সাইনবোর্ড
Published: 23rd, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অধিগ্রহণ করা শতকোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে আইল তৈরির কাজও শুরু করেন।
জানা যায়, কাঁচপুর সেতু-সংলগ্ন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় গত ১৫ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় সাব্বির ভূঁইয়া এ জমির মালিকানা দাবি করে তা দখল করে নেন। খবর পেয়ে শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার লোকজন পাঠিয়ে ওই ব্যক্তির চলমান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মৌজায় ৩৫৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৩১৩ শতাংশ জমি কাঁচপুর সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা। নারায়ণগঞ্জের ডিএম রোড উকিলপাড়া এলাকার মৃত আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে সাব্বির ভূঁইয়া জমির মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। অধিগ্রহণ করা জমিটি কাঁচপুর সেতু-সংলগ্ন। জমিটি কেপিআইভুক্ত এলাকায় হওয়ায় কেউ যাতে ওই জমি অবৈধ দখল করতে না পারে সেজন্য সেখানে সওজের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার সদস্যরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত সাব্বির ভূঁইয়া বলেন, তাদের ৩৫৯ শতাংশ জমির মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৩১৩ শতাংশ অধিগ্রহণ করেছে বলে শুনেছেন। অবশিষ্ট ৪৬ শতাংশ জমি তাদের রয়ে গেছে। তাই মাটি কাটার কাজ করতে গিয়েছেন। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা প্রথমে তাদের মাটি কাটার কাজে বাধা দেন। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নারায়ণগঞ্জ দপ্তরে গিয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্ল্যাহ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের অধিগ্রহণ করা জমির কথা জানান। তারা লোকজন দিয়ে তাদের (সাব্বির) কাটা মাটি ও আইল সরিয়ে দেন। এ জমি নিয়ে ২০০৯ সালে আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলা চলমান ও নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় কী করে জমির দখল নিতে গেলেন– এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সাব্বির।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগী প্রকৌশলী আহসান উল্ল্যাহ মজুমদার বলেন, আদালতের বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞার কোনো কাগজ তারা পাননি এবং সাব্বির ভূঁইয়াও দেখাতে পারেননি। আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই তিনি জমি দখল করতে পারেন না।
সাব্বিরের জমি তাদের (সওজ) দখলে নেই দাবি করে এই প্রকৌশলী বলেন, তাদের অধিগ্রহণ করা জমি কারও দখল করার সুযোগ নেই এবং দখল করতেও দেবেন না। তিনি বলেন, সাব্বিরের জমি যদি থেকে থাকে তা সওজের জমির মধ্যে নেই। তাদের অধিগ্রহণ করা জমির সীমানার মধ্যেই তারা দখলে আছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই জমিতে থাকা এনডিআই কোম্পানির অফিস কক্ষ দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। লুট করে নেয় সব মালপত্র। সাব্বির যদি আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ দেখাতে পারেন সে ক্ষেত্রে তারা আদালতের আদেশের সম্মান অবশ্যই দেখাবেন। তারা বাধা দেওয়ার পর সাব্বির আর এ জমিতে আসেননি। জমি তাদের দখলেই রয়েছে। তবে তাঁর লাগানো সাইনবোর্ডটি এখনও রয়েছে বলে জানান তিনি।
এনডিআই কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাটের বিষয়ে সাব্বির ভূঁইয়া বলেন, আগুন ও লুটপাটের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি ওই সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন। ২০ আগস্ট তিনি দেশে এসেছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ইনব র ড চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।