‘ভোরের কাগজে’র কার্যালয় খুলে দেওয়া, পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখাসহ বকেয়া পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলে কর্ণফুলী গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এইচআর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে তাদের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারাও অংশ নিয়ে ‘ভোরের কাগজে’র বন্ধ কার্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় পত্রিকার মালিক সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে তার অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
‘ভোরের কাগজ’ কর্ণফুলী গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর মালিবাগে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এক নোটিশ টানিয়ে ৩৩ বছরের পুরনো এ সংবাদপত্রটির বন্ধ ঘোষণা করা হয় গত সোমবার।
আরো পড়ুন:
টিসিজেএ ইনডোর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
ফরিদপুরে সাংবাদিকের বাসার গ্রিল কেটে চুরি
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১২ ধারা অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা ২০-০১-২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।’
পরের দিন মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন দাবি মেনে নিতে মালিকপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় মালিকপক্ষের অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ঘোষণা অনুয়ায়ী আজ (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে এইচআর ভবনের সামনে অবস্থান নেন সংবাদপত্রটির কর্মীরা।
সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের সংবাদকর্মীরা ‘ন্যায্য পাওনাসহ' ভোরের কাগজ বন্ধের পেছনের ‘ষড়যন্ত্রকারীদের' আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।
এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, “ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, অন্যায় তো অনেক করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে আপনারা যে অন্যায় করছেন, আমরা সেগুলো টেনে আনতে চাই না। জুলাই আন্দোলন বিপ্লবীদের আপনারা সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা সেই কথাগুলো ভুলে যেতে চেয়েছিলাম।”
“আমরা চেয়েছিলাম নতুন বিপ্লবী সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আদর্শ গণমাধ্যম হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনারা সাংবাদিকদের পাওনা না বুঝিয়ে দিয়ে অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রত্যেকটা গণমাধ্যম থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরিয়ে দিন। সেই কাজটি না করে সাবের হোসেন পত্রিকার প্রায় ১ হাজার সংবাদকর্মীর পাওনা না দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন।”
সাবের হোসেন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে করে ডিইউজের সভাপতি বলেন, “আপনারা গণভবনে দিয়ে দেখুন। শেখ হাসিনার অন্যায়ের জন্য সেখানকার প্রত্যেকটি ইট মানুষ খুলে নিয়ে গেছে। শুধু এইচআর ভবন নয়, আপনার প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ইট এদেশের জনগণ খুলে নিয়ে যাবে।”
“আপনারা ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পত্রিকাটি খুলে দিন। তাদের দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দিন। তা না হলে সামনের দিনে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিব।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, “এভাবে বিনা নোটিশে একটা পত্রিকা অফিস বন্ধ করা যায় না।”
“আপনারা জানেন দীর্ঘদিন এদেশে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। সেই নিপীড়ন থেকে আমরা মাত্র বেরিয়ে এসেছি। এখন আমাদের কাজের স্বাধীনতা, লেখার এবং বাকস্বাধীনতার সুযোগ এসেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একজন ফ্যাসিস্ট সাবের হোসেন এভাবে তার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক।”
তিনি বলেন, “আমরা সাবের হোসেন চৌধুরীকে বলতে চাই, আপনি দীর্ঘদিন এই পত্রিকাকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। সংবাদপত্রের আইন অনুযায়ী পত্রিকার সব কর্মীদের পাওনা পরিশোধ করে দিন। আর যদি পাওনা পরিশোধ না করেন, তাহলে এখানে আপনার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে দেওয়া হবে না।”
এ সময় ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, নির্বাহী সদস্য আব্দুল্লাহ মজুমদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আবু বক্কর মিয়া, ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক কবি সালেক নাছির উদ্দিন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মুকুল শাহরিয়ারসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ভোরের কাগজের সম্পাদকীয় বিভাগের ইনচার্জ সালেক নাসির উদ্দিন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন হাশিম, স্টাফ রিপোর্টার এস এম মিজান, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেস্ক নির্বাহী মো.
এছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সার্কুলেশন বিভাগের ইনচার্জ তসলিম চৌধুরী, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেপুটি ম্যানজার নুর মোহাম্মদ স্বপন, কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া, স্পোর্টস ইনচার্জ শামসুজ্জামান শামস, আইটি বিভাগের ইনচার্জ মেহেদী হাসান, উৎপাদন বিভাগের ইনচার্জ শরণ হাওলাদার প্রমুখ।
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ভ গ র ইনচ র জ কর ম র কর ছ ন আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।