সোনারগাঁও পৌরসভার নোয়াইল সড়কের বেহাল দশা, জনদূর্ভোগ চরমে
Published: 23rd, January 2025 GMT
সোনারগাঁও পৌরসভার নোয়াইল গ্রামের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন অংশের মাটি ও ইটের সলিং সরে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছেন। ফলে প্রায় সময়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
এ নিয়ে সোনারগাঁও পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ এর বরাবর লিখিত আবেদন করেও কোন ফল হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। স্থানীয়দের দাবী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে পৌর প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের স্বেচ্ছা চারিতার কারনে সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না।
সরেজমিন পৌরসভার নোয়াইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র এ সড়কের প্রায় দেড়শ থেকে দুই’শ মিটার জুড়ে মাটি ও ইটের সলিং সরে গিয়ে একপাশে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি পৌর কার্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারনে সড়কটির সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ।
এব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মোতাহারা নামের এক গৃহিণী খুব প্রকাশ করে বলেন, আমরা পৌরসভা কার্যালয়ের খুব কাছাকাছি হয়েও প্রয়োজনীয় সেবা টুকু পাচ্ছিনা। আশে পাশে উন্নয়ন হলেও এ সড়কটির উন্নয়ন হচ্ছে না।
সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পৌর কার্যালয়ের উপস্থিত হলে কথা হয় কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ এ পৌর কার্যালয়ে একাধারে তার কর্মজীবনের দীর্ঘ সাত বছর অতিবাহিত করেছেন। বিগত সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো এক নেতার পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের মনমর্জি মত তিনি অফিস করেছেন।
পৌর কার্যালয়ে অবৈধ ভাবে বসবাসও করেছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তিনি পৌর সাবেক প্রশাসকের কাছে থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে কার্যালয়ে থাকার অনুমতি পাস করেন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের পর আবারও ভোল পাল্টে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন এ প্রকৌশলী। তার কাছে কোন সেবার জন্য আসলে ঠিকমতো তাকে অফিসেও পাওয়া যায় না।
পৌরসভা কর্মস্থলে একাধারে দীর্ঘ সাত বছর অতিক্রম হওয়ায় এই প্রকৌশলীর সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ফলে তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না বলে জানান।
পৌরসভার এক কর্মচারী নাম প্রকাশে জানান, প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। অধনস্থ হওয়ার তার অন্যায় কাজের কোনো প্রতিবাদ করতে পারছি না। তিনি আরও জানান, পৌরসভার অন্যসকল কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী হলেও প্রভাব খাটিয়ে তিনি একই কর্মস্থলে দীর্ঘ সাত বছর অতিক্রম করেছেন।
এব্যাপারে পৌরসভার প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সড়কের সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কিভাবে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণের কাজ চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সোনারগাঁও পৌরসভার প্রশাসক ও সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এতো দিনেও কেনো রাস্তাটির সংস্কার করা হয়নি তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ও প রসভ র কর ছ ন হওয় য় সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।
বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।
কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।
একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।
শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক