কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসকের হিসাব শাখার গুদাম ও ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে শহরের আলোর মেলা এলাকায় জেলার পুরোনো কালেক্টরেট ভবনে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ ও করিমগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। 
প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, তিনিসহ ট্রাফিকের এসআই বিপ্লব, এএসআই সুরুজ্জামান ও কনস্টেবল মো.

ফারুক ট্রাফিক অফিসের একটি কক্ষে বাস করেন। গত রাতেও তারা ওই কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন। ভোর ৪টার দিকে লম্বা টিনশেড ভবনের দক্ষিণ প্রান্তে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে তারা চারজন ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তাদের পাশের কক্ষেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব শাখার সব নথিপত্র সংরক্ষিত ছিল। এগুলোও পুড়ে গেছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা বুঝতে পারছেন না তিনি। 
সরেজমিন দেখা গেছে, লম্বা টিনশেড ভবনটির বিভিন্ন কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের পানিতে ভিজে বিনষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের চাল দেবে গেছে।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার 
আবুজর গিফারি জানান, তাদের ভোর ৪টা ২০ মিনিটে আগুনের খবর জানানো হয়। এর পর কিশোরগঞ্জ ও করিমগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস দল প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। 
গত কয়েক মাসের মধ্যে জেলা শহরে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবুজর গিফারি। তিনি বলেন, তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তাঁর কাছে মনে হয়েছে শর্টসার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। তিনি জানান, প্রায় ২০ দিন আগে তিনি জেলা প্রশাসকের পরামর্শে পুরোনো কালেক্টরেটের রেকর্ড রুমসহ কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তাতে ওই ভবনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সংস্কারে তাঁর কিছু সুপারিশ ছিল।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাস: আইন উপদেষ্টা

হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাসকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তবে মিথ্যা মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কাজ হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে সেসব তুলে ধরেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা মামলা নিয়ে আমার বিরক্তি ও আপত্তি বহুবার প্রকাশ করেছি। বারবার আপনাদের বলি, আমাদের সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, একটা হচ্ছে মিথ্যা মামলা, মামলা হতে পারে, কিন্তু মিথ্যাভাবে লোককে ফাঁসানো, মানে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা; আরেকটা হচ্ছে জব জাস্টিস। মব সন্ত্রাস আমি বলি। এই দুইটা আমাদের খুবই পীড়িত করে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলা ঠেকানোর জন্য বা এই মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করে একটা প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দেবেন। আদালত যদি দেখেন, এখানে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য আছে, বাকিদের বিরুদ্ধে নেই, তাহলে আদালত তখনই ছাড় করে দিতে পারবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্যও আইন মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্য কারও ব্যর্থতার জন্য আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমরা টিম হিসেবে কাজ করি এটা সত্যি, কিন্তু এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’

নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাস্ট অপেক্ষা করেন, কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে।

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি ‘স্পিচ অফেন্স’–সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা তাঁর মন্ত্রণালয়ের এক বছরের কাজের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি, দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন, ফৌজদারি বিধি সংশোধন, মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান সংযোজন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি, বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫ এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাস: আইন উপদেষ্টা