খুলনা নগরীতে সন্ধ্যা নামলেই ঘিরে ধরে আতঙ্ক
Published: 25th, January 2025 GMT
খুলনা নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে সন্ত্রাসীরা। প্রায় প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও সংঘাত ও সহিংসতা হচ্ছে। অঘোরে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার। এ নগরীতে সন্ধ্যা নামলেই ঘিরে ধরে আতঙ্ক।
অর্ণব কুমার সরকার হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, এ ঘটনায় থানায় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি। এমনকি হত্যার কারণও জানা যায়নি।
সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক লাভলী বেগম জানিয়েছেন, খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) অর্ণব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
এর আগে সোমবার (২০ জানুয়ারি) ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে এক জন নিহত হয়েছেন। এক জনের আঙুল ও এক জনের কবজি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গুরুতর জখম হয়েছেন অনেক মানুষ। প্রতিটি ঘটনায় মাদক বিক্রেতা ও এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। কিন্তু, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাধারণ মানুষ।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় খুলনা নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। বিকেলে তিনি মারা যান। সন্ধ্যা ৬টায় নগরীর আযম খান কমার্স কলেজের ভেতরে সন্ত্রাসীরা নওফেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে তার আঙুল বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বয়রা শশ্মানঘাট এলাকায় সজীব শিকদার নামে আরেক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
এর আগের দিন রোববার রাতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে সন্ত্রাসীরা। গুলিটি তার ফুসফুসে আটক গেছে। শাহীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। এ সুযোগে পুরনো সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে এসেছে। অনেক সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে তারা সংঘাতে জড়াচ্ছে। বেশিরভাগ থানায় পুলিশের নতুন কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চিনতে তাদের সময় লাগছে। এছাড়া, সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তারে তাদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের বিশেষ অভিযানে কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও উঠতিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কম। এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযানের কথা বললেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। বেশিরভাগ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছে। পুলিশকে জানালেও তারা আসছে দেরি করে।
নগরীর প্রতিটি এলাকায় পুরাতন মাদক বিক্রেতারা ফিরে এসেছে। অলি-গলি সয়লাব হয়ে পড়েছে মাদকে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং পুরনো শত্রুতার জেরে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাড়ছে। ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে এ কারণেই।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেছেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এতে অস্ত্রের মহড়া ও হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, “পুলিশের স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। এ সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নানামুখী তৎপরতা চলছে। ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। বাকিদেরও শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক য় নগর ত নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
ওপেন এপিআই ব্যাংকিং সেবা চালু করল ইউসিবি
ওপেন এপিআইভিত্তিক ব্যাংকিং–ব্যবস্থা চালু করেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। ওপেন এপিআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকটি তৃতীয় পক্ষের যেকোনো ধরনের সেবা, যেমন অন্যান্য অ্যাপ, নতুন ফিনটেক বা স্টার্টআপের সঙ্গে সহজে নিজেদের প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করতে পারবে। এতে গ্রাহকেরা যেমন সহজে তাঁদের লেনদেন করতে পারবেন, একই সঙ্গে নিজের মতো করে আর্থিক সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তৃণমূল পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য বিপণনের কাজ করে, তাদের মধ্যে সংযোগ বা নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য খালাস করতে পারবে। লেনদেনও সহজে করা যাবে। আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওপেন এপিআই অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তি। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওরাকল মাত্র ২৫টি দেশে এই সেবা চালু করেছে। বাংলাদেশে ইউসিবিই প্রথম ওপেন এপিআইভিত্তিক ব্যাংকিং–ব্যবস্থা চালু করেছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গ্রাহকেরা অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ঋণের আবেদন, নিরাপত্তা যাচাইসহ সব ধরনের সেবা দ্রুত ও সহজে পাবেন।
ওপেন এপিআই ব্যাংকিং সেবা চালুর বিষয়ে সম্প্রতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘এটা শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়; বরং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক উদ্যোগ। বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনে আরও বেশি ডিজিটাল সেবা আনার ক্ষেত্রে এটা আমাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউসিবির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অপারেটিং অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ও ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্পের কারিগরি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওরাকলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।