নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার হইতে বাংলাদেশে আশ্রয় লওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি মার্কিন অনুদান বন্ধ-সংক্রান্ত সংবাদে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষমাত্রই উদ্বিগ্ন হইবে। আমাদের জন্য উদ্বেগ, তৎসহিত উৎকণ্ঠাও কম নহে। কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয়প্রাপ্ত। উহাদের মধ্যে ২০১৭ সালে রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ-নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ পরিহারে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গার অধিকাংশই কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকে। ২০১৭ সাল হইতে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকল্পে যুক্তরাষ্ট্র ২৫০ কোটি ডলারের অধিক দিয়াছে, তন্মধ্যে বাংলাদেশে আসিয়াছে প্রায় ২১০ কোটি ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ঘাটতি পূরণ প্রায় অসম্ভব। কারণ, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামরত বাংলাদেশের যদ্রূপ রোহিঙ্গাদের জন্য সামান্য বাড়তি অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য নাই, তদ্রূপ বিদ্যমান বিশ্ব-বাস্তবতায় ইউরোপ বা অন্য কোনো উন্নত রাষ্ট্রও অগ্রসর হইবে বলিয়া মনে হয় না। এহেন পরিস্থিতিতে পরিবেশ-প্রতিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাজুকতা যে বৃদ্ধি পাইতে পারে, তাহা অস্বীকার করা যায় না।
সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরূপে শপথ লইয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশে নূতন অনুদান ৯০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করিয়াছেন, যাহার আওতায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউএসএআইডির সহায়তাও রহিয়াছে। আমরা জানি, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য যেই সকল দেশ অনুদান প্রদান করে, উহাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে। দেশটি রোহিঙ্গা বাবদ মোট অনুদানের প্রায় অর্ধেকই দিয়া থাকে। মার্কিন এই সহায়তা আসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে। ফলে এই অনুদান বন্ধ হইলে টেকনাফে শরণার্থী শিবিরে থাকা কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গার খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হইতে পারে। তাহাদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটিতে পারে। শুধু উহাই নহে, রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারাও বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়িয়াছেন বলিয়া অনুদানে তাহাদের জন্যও বরাদ্দ থাকে। অতএব অনুদান প্রবাহ হ্রাস পাইবার কারণে রোহিঙ্গা, তৎসহিত টেকনাফের স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনও রুক্ষ হইয়া উঠিতে পারে।
মার্কিন সহায়তা বন্ধের এই ঘোষণা এমন সময়ে আসিল যখন সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা হ্রাস পাইতেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি বরাদ্দ হ্রাস করিয়াছিল ৯ টাকা। অনেকের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান হ্রাস পাইলে ডব্লিউএফপির বরাদ্দ আরও হ্রাস পাইতে পারে। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না– রোহিঙ্গাদের সহায়তা হ্রাস পাইলে উহার বিরূপ প্রভাব পড়িবে আর্থ-সামাজিক অন্যান্য ক্ষেত্রে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলি মিয়ানমার হইতে পাচারকৃত মাদক কারবারিদের আখড়ায় পরিণত হইবার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাইতে পারে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিবরগুলিতে মিয়ানমারভিত্তিক বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের যেই অপতৎপরতা, সেইখানেও যোগদানের হার বৃদ্ধি পাইতে পারে। এইদিকে রাখাইন রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে যাইবার কারণে নূতন করিয়া রোহিঙ্গা-ঢল সৃষ্টিরও আশঙ্কা করা হইতেছে। বিদ্যমান রোহিঙ্গাদের বরাদ্দই যেইখানে হ্রাস পাইতেছে; নূতনদের ভরণপোষণ হইবে কী প্রকারে? যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বার্তায় সহায়তা বন্ধের বিষয়টি তিন মাস কার্যকর থাকিবার ধারণা প্রদান করা হইয়াছে; বসিয়া থাকিবার অর্থ নাই। অন্তত ট্রাম্প প্রশাসনের চরিত্র এবং বিগত প্রথম মেয়াদের ট্র্যাক রেকর্ড এমন বার্তাই দেয়। তাই অবিলম্বে বিকল্প চিন্তা করাই বাংলাদেশের জন্য সমীচীন বলিয়া আমরা মনে করি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র হ ঙ গ দ র জন দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একইসঙ্গে ইউক্রেনকে স্বৈরশাসনের (রাশিয়ার পুতিন সরকার) বিরুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বুধবার উইন্ডসর ক্যাসেলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন রাজা।
এদিকে রাজার এ বক্তব্যের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এ ভোজসভায় রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
রাজা চার্লস বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য আমাদের জনগণ একসঙ্গে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে।’
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদে পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়