বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি ও আলু সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে বাররুন এগ্রো ফার্ম নাম একটি প্রতিষ্ঠান। এ সব সবজি রপ্তানিতে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

শিবগঞ্জ বাজারে মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের আড়তে এ সব সবজি কেনা হচ্ছে। কৃষক তাদের ক্ষেত থেকে আলু, বাঁধাকপি ও মিষ্টি কুমড়া এ আড়তে নিয়ে আসছে। পাইকারি বাজার থেকে এখানে কৃষকেরা মণপ্রতি ১০০ টাকা বেশি দাম পাচ্ছে। বাজারে প্রতি মণ আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর সাগর ট্রেডার্সে এসব কেনা হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে।

চলতি রবি মৌসুমে সাগর ট্রেডার্স এ উপজেলার প্রায় ১ হাজার কৃষকের কাছ থেকে আলু, মিষ্টি কুমড়া ও বাঁধাকপি কিনছেন। এসব সবজি বাররুন এগ্রো ফার্ম নামের ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। কৃষকদের সুবিধার্থে মাঠ থেকে আলু গাড়িতে লোড করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আলু, মিষ্টি কুমড়া ও বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং ভালো দাম পাওয়ায় খুশি উপজেলার কৃষকেরা।

আলু চাষি মোকারম হোসেন বলেন, ‘‘এবার আমি ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে কিন্তু বাজারে দাম নেই। আমরা লোকসানের আশঙ্কা করছি। তবে বর্তমান আমরা অনেক খুশি, কেননা আমাদের উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাজারের চেয়েও এখানে মণে ১০০ টাকা বেশি দাম পাচ্ছি।’’

বেলাল, একাবুলসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এভাবে প্রতি বছর ফসল বিদেশে রপ্তানি করা হলে ভালো দাম পাওয়ায় ফসল ফলাতে আগ্রহ বাড়বে।

মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের মালিক সাগর আহমেদ বলেন, ‘‘শিবগঞ্জ উপজেলার মাটি উর্বর। এখানে সব ধরনের সবজির চাষ হয় এবং ফলনও ভালো হয়। অনেক সময় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পান না। তাই আমি ক্ষেত থেকে বেশি দামে আলু, বাঁধাকপি ও মিষ্টি কুমড়া কিনছি। এ সব পণ্য বাররুন এগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি।’’ 

বাররুন এগ্রো ফার্মের নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আমরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যে দেশের বিভিন্ন কাঁচা পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। আমরা আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, টমেটো ও কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন সবজি রপ্তানি করি। এ সব সবজি সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায় কাতারসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করছি। বর্তমান এ সব আলু চট্টগ্রাম হয়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হবে।’’ 

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘‘চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৪০০ হেক্টরে। ইতোমধ্যে ৮২০ হেক্টর জমির আলু তোলা হয়েছে। সাগর ট্রেডার্স আমাদের কাছ থেকে এর আগে মিষ্টি কুমড়া ও বাঁধাকপি রপ্তানির প্রত্যয়ন নিয়েছে। বর্তমান তারা আলু বিদেশে রপ্তানি করছে। এ উপজেলায় পর্যাপ্ত আলু চাষ হয়ে থাকে।’’

তিনি আরও বলেন, যদি প্রতি বছর এভাবে আলু বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে তাহলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ বগঞ জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ