চাঁদার দাবিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে বোমা নিক্ষেপ, এলাকায় আতঙ্ক
Published: 1st, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি নির্মাণাধীন সেতুর শ্রমিকদের রাত্রি যাপনের অস্থায়ী ঘর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় চার-পাঁচটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বোমার শব্দে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের তেকালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে গত দুই মাস ধরে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর তেকালা বেতবাড়িয়া সেতুর কাজ চলছে। সেতুর তেকালা প্রান্তে ঢেউটিনের অস্থায়ী ছাউনি করে সেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা রাত্রি যাপন করেন।
শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ওই ছাউনি লক্ষ্য করে পাঁচ ছয়টি হাত বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় চার-পাঁচটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে নির্মাণ শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। রাতেই স্থানীয় তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক আকরাম হোসেন বলেন, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পরে জানতে পারি ব্রিজের নির্মাণ শ্রমিকদের ঘরে কে বা কারা বোবা হামলা করেছে। এ সময় আশপাশের লোকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।
তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আনিস বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ঘরের টিনের বেড়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো এবং বিস্ফোরিত বোমার আলামত দেখতে পাই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চাঁদা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি এবং আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। দুর্বৃত্তরা কারা এর সাথে জড়িত; তা খুঁজে বের করা হবে।
সেতু নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ব্লাস্ট লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন বলেন, গত দুই মাস ধরে সেতুর কাজ চললেও কোনো বেগ পেতে হয়নি। হঠাৎ করে কেন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো তা তারা নিজেরাও আন্দাজ করতে পারছেন না তিনি।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী তেকালা বেতবাড়িয়া সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।