কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি নির্মাণাধীন সেতুর শ্রমিকদের রাত্রি যাপনের অস্থায়ী ঘর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় চার-পাঁচটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বোমার শব্দে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের তেকালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  

প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে গত দুই মাস ধরে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর তেকালা বেতবাড়িয়া সেতুর কাজ চলছে। সেতুর তেকালা প্রান্তে ঢেউটিনের অস্থায়ী ছাউনি করে সেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা রাত্রি যাপন করেন।

শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ওই ছাউনি লক্ষ্য করে পাঁচ ছয়টি হাত বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় চার-পাঁচটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে নির্মাণ শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। রাতেই স্থানীয় তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক আকরাম হোসেন বলেন, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পরে জানতে পারি ব্রিজের নির্মাণ শ্রমিকদের ঘরে কে বা কারা বোবা হামলা করেছে। এ সময় আশপাশের লোকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।

তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আনিস বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ঘরের টিনের বেড়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো এবং বিস্ফোরিত বোমার আলামত দেখতে পাই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চাঁদা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি এবং আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। দুর্বৃত্তরা কারা এর সাথে জড়িত; তা খুঁজে বের করা হবে।

সেতু নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ব্লাস্ট লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন বলেন, গত দুই মাস ধরে সেতুর কাজ চললেও কোনো বেগ পেতে হয়নি। হঠাৎ করে কেন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো তা তারা নিজেরাও আন্দাজ করতে পারছেন না তিনি।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী তেকালা বেতবাড়িয়া সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ