‘লাতিন ইসরায়েল’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বার্তা
Published: 1st, February 2025 GMT
আমেরিকা থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসী বোঝাই দুটি সামরিক উড়োজাহাজ নামতে দেয়নি কলম্বিয়ার সরকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কলম্বিয়া থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ করে কর বসাবেন।
পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ ৫০ শতাংশ কর বাড়াবেন। শুধু তাই নয়, যেসব দেশ কলম্বিয়াকে সহায়তা করবে তাদেরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবেন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কলম্বিয়া। কফির ২০ শতাংশ ছাড়াও কৃষিপণ্যসহ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জোগানদাতা। দেশটির বামপন্থি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোও পাল্টা বলেছেন, তিনিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যে ২৫ শতাংশ কর বসাবেন।
পরে অবশ্য সমঝোতায় পৌঁছান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং গুস্তাভো পেত্রো। হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীবাহী সামরিক উড়োজাহাজ নামতে দেবে কলম্বিয়া। এর বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক আরোপের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে আসবে।
ওদিকে ট্রাম্প বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কসহ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। তিনি গ্রিনল্যান্ডকে উপনিবেশ করতে চান, পানামা খাল দখল করতে চান। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডাকে তাঁর দেশের অংশ এবং মেক্সিকোতেও আগ্রাসন চালাতে চান। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের যাত্রা শুরু করেছেন।
ট্রাম্প যখন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নব্য রক্ষণশীল মার্কো রুবিওকে নির্বাচিত করেছিলেন, তখনই পরিষ্কার হয়েছিল যে তিনি লাতিন আমেরিকার দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছেন। তিনি মার্কিন আধিপত্য আরোপ করে অঞ্চলটিকে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থেকে বিরত রাখতে চান।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইভাবে কিউবা, নিকারাগুয়া ও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য স্বাধীন বামপন্থি সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে প্রথম সপ্তাহেই যে দেশগুলোকে টার্গেট করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম কলম্বিয়া। যদিও ঐতিহাসিকভাবে কলম্বিয়া এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল।
সেই সময় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ কলম্বিয়াকে ‘লাতিন আমেরিকার ইসরায়েল’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল– ইসরায়েল যেমন পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন আধিপত্য সম্প্রসারণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে, একইভাবে কলম্বিয়াও লাতিন আমেরিকাতে মার্কিন স্বার্থের পক্ষের লাঠিয়াল হিসেবে ভূমিকা রাখবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। ২০২২ সালে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় যখন কলম্বিয়ার জনগণ প্রথমবারের মতো বামপন্থি গুস্তাভো পেট্রোকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। গুস্তাভো ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন সরকার নানাভাবে কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাঁকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে।
চীন মেক্সিকো বাদে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। রুবিও চীনের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালে পেট্রো বেইজিং সফর করেছিলেন, যেখানে কলম্বিয়া ও চীনের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। রুবিও টুইটারে ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পেট্রোর নতুন ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ কলম্বিয়াকে তাদের কর্তৃত্ববাদী ও জিম্মি করে রাখবে।” মার্কিন সরকার যখন কলম্বিয়ার তীব্র সমালোচনা করছে তখন চীনের রাষ্ট্রদূত ঝু জিংইয়াং জোর দিয়ে বলেন, ‘চীন ও কলম্বিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা তাদের সেরা সময় পার করছেন।’
অভিবাসী নিয়ে কলম্বিয়ার সঙ্গে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসনকে কেউ কেউ গুস্তাভো সরকারের নতিস্বীকার বলে মন্তব্য করছেন। বিষয়টি কি সেই রকম কিছু? একজন দেশপ্রেমিক ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে গুস্তাভো মার্কিন সরকারের কাছে সম্মানজনক আচরণ আশা করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেটি না পেয়ে তিনি প্রতিবাদ করেছেন; তাদের একটি বার্তা দিয়েছেন যে তারা দুর্বল হলেও প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। তাদের অবহেলা করা চলবে না।
কলম্বিয়ার সরকারের প্রতিবাদ থেকে ছোট, দুর্বল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শেখার আছে অনেক কিছু। বিশ্বের বৃহৎ প্রতিবেশী পরাশক্তির হুমকি ও ধমকিতে ভীত না হয়ে পেত্রো মেরুদণ্ড সোজা করে যে মর্যাদাবোধ প্রদর্শন করেছেন, তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কলম ব য় র কর ছ ল ন সরক র র কলম ব য কর ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।