আমেরিকা থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসী বোঝাই দুটি সামরিক উড়োজাহাজ নামতে দেয়নি কলম্বিয়ার সরকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কলম্বিয়া থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ করে কর বসাবেন। 

পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ ৫০ শতাংশ কর বাড়াবেন। শুধু তাই নয়, যেসব দেশ কলম্বিয়াকে সহায়তা করবে তাদেরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবেন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কলম্বিয়া। কফির ২০ শতাংশ ছাড়াও কৃষিপণ্যসহ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জোগানদাতা। দেশটির বামপন্থি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোও পাল্টা বলেছেন, তিনিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যে ২৫ শতাংশ কর বসাবেন। 
পরে অবশ্য সমঝোতায় পৌঁছান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং গুস্তাভো পেত্রো। হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীবাহী সামরিক উড়োজাহাজ নামতে দেবে কলম্বিয়া। এর বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক আরোপের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে আসবে।

ওদিকে ট্রাম্প বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কসহ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। তিনি গ্রিনল্যান্ডকে উপনিবেশ করতে চান, পানামা খাল দখল করতে চান। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডাকে তাঁর দেশের অংশ এবং মেক্সিকোতেও আগ্রাসন চালাতে চান। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের যাত্রা শুরু করেছেন। 
ট্রাম্প যখন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নব্য রক্ষণশীল মার্কো রুবিওকে নির্বাচিত করেছিলেন, তখনই পরিষ্কার হয়েছিল যে তিনি লাতিন আমেরিকার দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছেন। তিনি মার্কিন আধিপত্য আরোপ করে অঞ্চলটিকে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থেকে বিরত রাখতে চান। 

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইভাবে কিউবা, নিকারাগুয়া ও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য স্বাধীন বামপন্থি সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে প্রথম সপ্তাহেই যে দেশগুলোকে টার্গেট করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম কলম্বিয়া। যদিও ঐতিহাসিকভাবে কলম্বিয়া এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। 

সেই সময় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ কলম্বিয়াকে ‘লাতিন আমেরিকার ইসরায়েল’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল– ইসরায়েল যেমন পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন আধিপত্য সম্প্রসারণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে, একইভাবে কলম্বিয়াও লাতিন আমেরিকাতে মার্কিন স্বার্থের পক্ষের লাঠিয়াল হিসেবে ভূমিকা রাখবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। ২০২২ সালে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় যখন কলম্বিয়ার জনগণ প্রথমবারের মতো বামপন্থি গুস্তাভো পেট্রোকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। গুস্তাভো ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন সরকার নানাভাবে কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাঁকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। 

চীন মেক্সিকো বাদে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। রুবিও চীনের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালে পেট্রো বেইজিং সফর করেছিলেন, যেখানে কলম্বিয়া ও চীনের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। রুবিও টুইটারে ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পেট্রোর নতুন ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ কলম্বিয়াকে তাদের কর্তৃত্ববাদী ও জিম্মি করে রাখবে।” মার্কিন সরকার যখন কলম্বিয়ার তীব্র সমালোচনা করছে তখন চীনের রাষ্ট্রদূত ঝু জিংইয়াং জোর দিয়ে বলেন, ‘চীন ও কলম্বিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা তাদের সেরা সময় পার করছেন।’

অভিবাসী নিয়ে কলম্বিয়ার সঙ্গে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসনকে কেউ কেউ গুস্তাভো সরকারের নতিস্বীকার বলে মন্তব্য করছেন। বিষয়টি কি সেই রকম কিছু? একজন দেশপ্রেমিক ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে গুস্তাভো মার্কিন সরকারের কাছে সম্মানজনক আচরণ আশা করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেটি না পেয়ে তিনি প্রতিবাদ করেছেন; তাদের একটি বার্তা দিয়েছেন যে তারা দুর্বল হলেও প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। তাদের অবহেলা করা চলবে না।
কলম্বিয়ার সরকারের প্রতিবাদ থেকে ছোট, দুর্বল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শেখার আছে অনেক কিছু। বিশ্বের বৃহৎ প্রতিবেশী পরাশক্তির হুমকি ও ধমকিতে ভীত না হয়ে পেত্রো মেরুদণ্ড সোজা করে যে মর্যাদাবোধ প্রদর্শন করেছেন, তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে।

ড.

মঞ্জুরে খোদা: লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কলম ব য় র কর ছ ল ন সরক র র কলম ব য কর ছ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কোটি টাকা ছিনতাই করতে সড়কে অপেক্ষায় ছিল দুর্বৃত্তরা: পুলিশ  

রাজধানীর উত্তরায় এক কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগে থেকে ব্যাগভর্তি টাকা ছিনতাই করতে সড়কে অপেক্ষায় ছিল দুর্বৃত্তরা। 

পুলিশ জানিয়েছে, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও প্রযুক্তিগত তদন্ত করছে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের মোড়ে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, দুটি মোটরসাইকেলে থাকা চার আরোহীকে গতিরোধ করে একটি মাইক্রোবাস। র‌্যাবের পোশাক পরিহিত তিনজন মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহীদের দু’জন ভয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা ভর্তি দুটি ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেন। তাদের পিছু নেয় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেলের এক আরোহীকে ধরে এনে মাইক্রোবাসে তুলে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উত্তরায় ছিনিয়ে নেওয়া টাকা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের এক এজেন্টের।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, দুটি মোটরসাইকেলে যখন নগদের এজেন্টের লোকজন টাকা নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থল অতিক্রম করছিল তখন তাদের ব্যারিকেড দেওয়া হয়। মাইক্রোবাস থেকে নেমে র‌্যাবের পোশাক পরিহিত তিনজন মোটরসাইকেল আরোহীদের গতিরোধ করে। ঘটনাস্থলে আগে থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে দুর্বৃত্তরা অপেক্ষা করছিল। এটি পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ক্লু ধরেই তদন্ত চলছে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোনো প্লট রয়েছে কি–না সেটিও দেখা হচ্ছে।  

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলছেন, ছিনতাইকাণ্ডে যে গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে সেটির নম্বর প্লেট ভুয়া ছিল। পেশাদার অপরাধী চক্র, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স নাকি অন্য কোনো গ্রুপ এর সঙ্গে জড়িত তা বের করার চেষ্টা চলছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছুটির দিন সকালে ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা আগেভাগে হাজির হয়। এরপর কোটি টাকা ছিনতাই করে ১৭ নম্বর সেক্টর হয়ে তুরাগের দিকে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।   

নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় টাকা জমা দেওয়া যায়নি। ছুটির মধ্যে ব্যবসার টাকা আমার বাসায় রাখা ছিল। শনিবার উত্তরার ইসলামী ব্যাংক শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা ছিল। তাই ব্যাংকে এবং বুথে জমা দেওয়ার জন্য চার কর্মচারীকে দিয়ে ওই টাকা অফিসে পাঠানো হচ্ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ