উধাও পপির দেখা মিলল, সঙ্গে স্বামী-সন্তান
Published: 4th, February 2025 GMT
গত কয়েক বছর ধরেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। সোশ্যাল মিডিয়া বা মুঠোফোনেও তার সাড়া মিলেনি। হঠাৎ অন্তরালে চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্র পাড়ায় গুঞ্জন উঠেছিল— বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন পপি। যদিও বিষয়টি নিয়ে পপির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অবশেষে আড়াল ভেঙে স্বামী-সন্তান নিয়ে দেখা দিলেন এই নায়িকা।
২০২১ সালের অক্টোবরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন পপি। বিয়ে করে এখন পুরোদস্তুর সংসারী হয়েছেন। শোবিজের কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। এদিকে, পপির স্বামীর পরিচয়, ছবি ও সন্তানের নাম জানা গেল। একটি ছবিতে দেখা যায়, সন্তানের জন্মদিন পালন করছেন পপি ও স্বামী।
জানা গেছে, নায়িকা তার সন্তানের নাম রেখেছেন আয়াত। সন্তানের বয়স প্রায় চার বছর। আর পপির স্বামীর নাম আদনান উদ্দিন কামাল। তিনি জান্নাত গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর; রয়েছে জাহাজের ব্যবসা। তিনি লালবাগ কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন পপি। তবে এই মুহূর্তে নায়িকা খুলনায় অবস্থান করছেন।
আরো পড়ুন:
বাপ্পারাজের ‘হেনা’ নাঈমের ঘরে
অর্ধ-নগ্ন ছবি নিয়ে মুখ খুললেন সন্ন্যাসিনী মমতা
এদিকে, অভিনেত্রী পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন নায়িকার বোন ফিরোজা পারভীন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পপির মা ও বোন ফিরোজা পারভীন।
জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি, ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।
বিষয়টি নিয়ে পপির মা মরিয়ম বেগম বলেন, “আমার মেয়েটা আগে ভালোই ছিল। কিন্তু বিয়ের পর ৫-৬ বছর ধরে স্বামীর প্ররোচনায় আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রেখেছে। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব?”
পপির মেজবোন ফিরোজা পারভীন বলেন, “আমরা ৪ বোন, ২ ভাই। পপি সবার বড়। সে আমাদের বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে অনেক বছর ধরেই। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি পপির মাধ্যমে। পপি ছাড়া আমরা সবাই এক আছি। আগেও আমাদের পেশিশক্তির ভয় দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নায়ক আলমগীর, জায়েদ খানসহ আরো দুয়েকজন জানেন। সব জানার পরও আলমগীর সাহেব পপিকে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পপি কোনো কিছুতেই থাকছে না। সবার জমি সে একাই দখল করতে চায়।”
পপি বর্তমানে খুলনায় অবস্থান করছেন। তা জানিয়ে ফিরোজা পারভীন বলেন, “স্বামীসহ পপি খুলনায় অবস্থান করছেন। আমাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।”
১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানী। সিনেমাটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে মাইলফলক করে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র ন করছ ন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের ব্যালট পেপার হবে রঙিন
এর আগে গতকাল দুপুরে গণভোট অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণভোট অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এর আগে ১৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ওই ভাষণের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ আদেশ জারি করেন। তাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে করার কথা জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ আইনি ভিত্তি পায়।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয় জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সংক্রান্ত। তবে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত আছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সনদ ও গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। গত ২৮ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এখন গণভোট আয়োজনের লক্ষ্যে এ–সংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশ জারি করল সরকার।
গণভোটে প্রশ্ন কী হবে
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, চার বিষয়ে গণভোটে প্রশ্ন থাকবে একটি। প্রশ্নটি হলো ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার–সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’ যাঁরা সম্মতি জানাবেন তাঁরা ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন এবং যাঁরা সম্মতি জানাবেন না তাঁরা ‘না’ ভোট দেবেন।
যে চারটি বিষয়ের ওপর গণভোট হবে সেগুলো হলো:
ক. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ. সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
অধ্যাদেশে জুলাই সনদ অনুসারে যে ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো তফসিল আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যতবারই হোক, সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এ জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এ রকম ঐকমত্য হওয়া অন্যান্য প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
আরও যেসব বিধান আছে
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে, সেগুলোতেই গণভোট হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি করা ভোটার তালিকাই হবে গণভোটের ভোটার তালিকা। সংসদ নির্বাচনের সময়ই হবে গণভোটের সময়। তবে গণভোটের ব্যালট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে পৃথক হবে। গণভোটের ব্যালট হবে ভিন্ন রঙের; যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়।
আসিফ নজরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বা পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, তাঁরা গণভোটেও দায়িত্ব পালন করবেন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি কোনো কারণে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনে করেন ভোট নেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে তিনি তা স্থগিত করতে পারবেন। এ–সংক্রান্ত অন্যান্য নিয়মকানুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই থাকবে।
গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল একই দিনে হবে বলে জানান উপদেষ্টা। আর গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।
ভোটের মহড়া শনিবার
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, এখন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, সব ঠিকমতো চললে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা সম্পন্ন হয়ে যাবে। সেই তালিকা অনুযায়ী তাঁরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, দুই ধরনের ব্যালট পেপার থাকবে, দুই রঙের ব্যালট পেপার হবে। প্রথাগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার হয় সাদা-কালো। এ ক্ষেত্রে গণভোটের জন্য একটা রঙিন কাগজ ব্যবহার করা হবে।
যে চার শ্রেণির নাগরিকেরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তাঁরা হলেন প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা কর্মসূত্রে নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেন, যাঁরা আইনি হেফাজতে আছেন এবং যাঁরা নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করেন।
গণভোটের কারণে ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ২৯ নভেম্বর শনিবার একটা রিহার্সাল (মহড়া) করবেন। তারপর সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে কি না।
প্রসঙ্গত, ইসি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ (বুথ) নির্ধারণ করেছে। ইসি এবার গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি করে ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করেছে।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের হিসাব করা হয়েছিল শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করতে ভোটকেন্দ্র না হলেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা বাড়াতে হতে পারে। কারণ, দুটি ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ বাড়ানো হলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে।