নয়াদিল্লি-ঢাকার ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। দুই দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত মতামত কলামে এ কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার কলামটি প্রকাশিত হয়েছে।

কলামে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে একটি কার্যকর ও ইতিবাচক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। আমরা আশা করি ভারতও এই ইচ্ছায় সায় দেবে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট। ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানবোধের ভিত্তিতে একটি ইতিবাচক ও কার্যকর সম্পর্ক চাই আমরা। আমরা আশা করি, ভারতও আমাদের এই ইচ্ছার সঙ্গে সুর মেলাবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ভুল বোঝাবুঝি ও অস্থিরতার জায়গাগুলো নিরসনের মাধ্যমে সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগানোর কথাও বলেন তিনি।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতে বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে অনেক উচ্চবাচ্য হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ক্ষমতা শূন্যতার সময়টুকুতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যার ফলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তবে যারা এতে প্রভাবিত হয়েছেন, তারা সবাই আগের সরকারের সুবিধাভোগী এবং বেশিরভাগই মুসলমান। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকি সারাদেশের জনগণও সাহসিকতার সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাদের পরিবার ও মন্দিরের সুরক্ষা দিতে এগিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের গণমাধ্যম ও সাইবারস্পেস বড় আকারে অতিরঞ্জিত ও প্রায়শই পুরোপুরি ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে, যোগ করেন তিনি।

উপদেষ্টা দাবি করেন, সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষের অধিকারের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অন্য সব নাগরিকের সমান অধিকার ভোগ করে থাকেন। আমরা দক্ষিণ এশিয়া তথা সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হতে চাই। বাংলাদেশে এখন কী হচ্ছে তা নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমরা ভারতের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাই। ভারতের জনগণ তাদের পক্ষপাতহীন তদন্ত থেকে প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।

বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গেছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। উদাহরণ হিসেবে তিনি নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ও দুই দেশের জেলে-বিনিময়ের ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন।

তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এই ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে এমন একটি অংশীদারিত্ব তৈরি হবে, যা দুই দেশের মানুষ, এই অঞ্চল ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য মঙ্গলজনক। এ ক্ষেত্রে একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষদের গুলি করে হত্যার ধারা থেকে বের হয়ে আসা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: