‘আমাদের দেশে প্রতিবছর দেড় লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাই শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী ক্যানসার–সচেতনতা নিয়ে কাজ করা হয়। যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।’

গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এ উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের ক্যানসার রোগের এমন পরিসংখ্যান দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, ডায়াগনোসিস, রোগনির্ণয়, প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন এই দিবস প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবসের সূচনা ১৯৯৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ক্যানসারের বিরুদ্ধে শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে। সারা বিশ্বে ক্যানসার হলো মানুষের মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ রোগে মারা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ফুসফুস, স্তন, জরায়ুমুখ, গলা-মুখগহ্বর, খাদ্যনালি, কলোরেক্টাল, প্রোস্টেটসহ নানান ক্যানসারের ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। তবে সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় হলে এতে বেঁচে থাকার হার অনেকাংশেই বেশি। এবারের ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য “ইউনাইটেড বাই ইউনিক’’ বা অনন্যতায় ঐকতান।’

ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিতে কারা বেশি? এ বিষয়ে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যাঁরা বয়স্ক এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ তামাক গ্রহণ করেন, তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।’

ক্যানসারের লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যানসারের উপসর্গ বিভিন্ন রকম। যদি আমি মোটাদাগে বলি, সেগুলো হলো কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া, প্রায় সময়ই জ্বরে ভোগা, চরম ক্লান্তি ভাব, যা বিশ্রাম নেওয়ার পরও দূর হয় না, ক্ষুধামান্দ্য, ত্বক পরিবর্তন হয়ে বিভিন্ন রং ধারণ করা, অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন, শরীরের কোনো ক্ষত যা সহজে ভালো হয় না, কাশি-মলদ্বার-প্রস্রাবের রাস্তা-স্তন দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া, শরীরের যেকোনো স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া, ক্রমাগত বদহজম বা কোনো কিছু গিলতে গেলে সমস্যা, টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে কালক্ষেপণ না করে উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।’

ক্যানসারের স্ক্রিনিং ও ডায়াগনসিস কি একই বিষয়? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘না, দুটি আলাদা বিষয়। স্ক্রিনিং হচ্ছে সোশ্যাল মেথডোলজি, যা কোনো উপসর্গ পাওয়ার আগেই নিয়মিত হেলথ চেকআপের জন্য করা হয়। আর ডায়াগনোসিস হচ্ছে উপসর্গ পাওয়ার পর চিকিৎসা শুরু করার প্রক্রিয়া।’ ক্যানসার ছোঁয়াচে কি না—এ প্রসঙ্গে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একদমই না। ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াবাহিত রোগগুলোকে বলা হয় ছোঁয়াচে। সে বিবেচনায় ক্যানসার কখনোই ছোঁয়াচে নয়।’

কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে স্তন ক্যানসারে সুস্থ হওয়ার হার ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ।

বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, ডায়াগনসিস, রোগনির্ণয় ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপসর গ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ