যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের ১০৪তম সভায় তাকে এ বরখাস্ত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে যবিপ্রবিতে আওয়ামীপন্থি সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড.

সৈয়দ মো. গালিব। তিনি নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচন করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের ছত্রছায়ায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন বলে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন। 

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হওয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করে নিজের স্ত্রী ডা. নুসরত জাহানকে ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে বিধি বর্হিভুতভাবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি সবাই জানলেও তৎকালীন উপাচার্য ও তার ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি কেউ। বিষয়টি ইউজিসিতে তদন্তধীন রয়েছে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ১৪টি লিফট ক্রয় প্রকল্পে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে নিম্নমানের লিফট স্থাপন। এ প্রকল্পে কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। দরপত্রের একাধিক শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪টি লিফটের এ মালামাল সরবরাহ করা হয় বলে জানা যায়।

সূত্র জানায়, ‘মেশিনরুম টাইপ’ এর পরিবর্তে ‘মেশিনরুম-লেস টাইপ’ লিফট সরবরাহ করা হয়। ‘মেশিনরুম টাইপ’ লিফটের দাম ৭০ লাখ টাকার বেশি। এর বিপরীতে ‘মেশিনরুম-লেস টাইপ’ লিফটের দাম প্রায় অর্ধেক। এ ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব। লিফটগুলো স্থাপনের ১ বছরের মধ্যে ১০টি অচল হয়ে পড়ে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ কাজে কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের একটি অংশ।

করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে যবিপ্রবি প্রশাসন ২০২০ সালের অক্টোবরে নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) চালু করে। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি এ সফটওয়্যারটি শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি, ক্লাসের রেকর্ডিং ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোডের সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এ প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। এর পেছনে যাবতীয় ব্যায়ের হিসাব পাওয়া যায়নি। যার দায়িত্বেও ছিলেন এ অধ্যাপক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব বলেন, “শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভুল বুঝছে অথবা এর পিছনে ভিন্ন কোন কারণ থাকতে পারে। তবে আমার বিরুদ্ধে যে ডকুমেন্টগুলো রয়েছে, তা বানোয়াট। আমি মনে করি, আমার বিরুদ্ধে কারও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আজকাল তো এআই দিয়ে কত কিছু করা যায় “

স্ত্রীর নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী এখনো নিরপরাধ। সরকার তদন্ত করছে, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অপরাধী বলা ঠিক না। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ দিয়েছে। তাহলে আমি অপরাধী হই কীভাবে?”

কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা ৩০ বছর উল্লেখ থাকলেও তার স্ত্রী ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে যবিপ্রবিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বয়সের শর্ত নিয়ে তিনি বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। সে আবেদন করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিয়েছে।”

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তাদের নামে দুদকে একাধিক মামলাও চলমান।”

তিনি বলেন, “ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও যোগসূত্র থাকার প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সম্পূর্ণ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আমরা সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র উপ চ র য বরখ স ত এক ধ ক তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ