অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় দুজন নারী নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। তাঁদের একজন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

ওই শরণার্থীশিবিরে ফিলিস্তিনি পরিবারের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল রোববার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, অভিযানে সোন্দস জামাল মুহাম্মদ শালাবি নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁর স্বামী।

২৩ বছর বয়সী শালাবি ও তাঁর গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো যায়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আহত দম্পতিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাহাফ ফৌয়াদ আবদুল্লাহ আল-আশকার নামের ২১ বছর বয়সী আরেক নারী ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিজ বাড়িতে নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানায়, রোববার দিনের শুরুতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারেম অঞ্চলে শরণার্থীশিবিরে ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার নিয়ে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় নজরদারির বিমানগুলো খুব নিচ দিয়ে উড়ে যায় এবং হামলা চালায়।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই এলাকাটিতে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ আর বিস্ফোরণের জোরালো শব্দ শোনা গেছে।

ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের তুলকারেম ব্যাটেলিয়ন জানায়, নুর শামস এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এর আগে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, হতাহতের খবর জানার পরও ওই শরণার্থীশিবিরে সোসাইটির চিকিৎসা দলকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা ওই শরণার্থীশিবিরে ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে’ জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। ওই এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিন, তুলকারেম ও তুবাসের ফারা এলাকায় থাকা শরণার্থীশিবিরগুলোতে কয়েক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় নুর শামস এলাকায় শরনার্থীশিবিরেও অভিযান চালানো হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজায় ‘জাতিগত নির্মূল’ চালানোর ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কি সম্ভব২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননেতজারিম করিডর ছেড়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী১০ ঘণ্টা আগে

কয়েক সপ্তাহের অভিযান আর হামলায় জেনিন ও তুলকারেম এলাকা থেকে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় গত মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে হামলার তীব্রতাও।

আরও পড়ুন ইসরায়েলের কাছে ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র–সরঞ্জাম বিক্রিতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদন০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শরণ র থ শ ব র ত হয় ছ ন ইসর য় ল এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘হাউসে কাউসার’ উম্মতের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

হাউসে কাউসার হলো একটি পবিত্র পানির কূপ, যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে। যে ব্যক্তি এটি থেকে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কিয়ামতের দিনে বিশেষ উপহার হিসেবে উপস্থাপিত হবে। সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সুরা কাউসার, আয়াত: ১)

তাফসির অনুসারে, ‘কাউসার’ শব্দটি বহু অর্থ বহন করে, যার মধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাতের একটি নদী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত।

যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে।হাদিসে হাউসে কাউসার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০)

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোক আমার হাউসের কাছে আসবে, আমি তাদের চিনব এবং তারাও আমাকে চিনবে। কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি বলব, ‘তারা আমার উম্মত।’ ফেরেশতারা বলবে, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন আমি বলব, ‘যারা আমার পরে দ্বীন বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,০৫১)

সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা অজুর কারণে দীপ্তিমান হবে, এমন চিহ্ন অন্য কোনো উম্মতের হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯)

হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একটি নহরের তীরে পৌঁছালাম, যার পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘এটি হাউসে কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬; তিরমিজি, হাদিস: ২,৫৪৪)

হাউসে কাউসারের বৈশিষ্ট্য

অবস্থান: হাউসে কাউসার কিয়ামতের দিন মিজানের আগে বা পরে মুমিনদের জন্য উপস্থাপিত হবে। কিছু হাদিসে এটি জান্নাতের প্রবেশপথে অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রশস্ততা: এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অত্যন্ত বিশাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর দৈর্ঘ্য আদন (ইয়েমেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও বেশি এবং প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৮১)।

পানির গুণাগুণ: পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে শুভ্র এবং মধু ও দুধের চেয়ে মিষ্টি। এর সুগন্ধ মিশকের (কস্তুরির) চেয়ে অধিক মনোমুগ্ধকর। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

পাত্র: হাউসের পানি পানের জন্য পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো অসংখ্য ও উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)।

পাড়ের সৌন্দর্য: এর পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত, যা এর শোভা বৃদ্ধি করে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬)।

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫কারা পান করতে পারবেন

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে অজুর কারণে চিনতে পারবেন, কারণ তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিমান হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)

তবে কিছু লোক হাউসের কাছে এলেও ফেরেশতারা তাদের তাড়িয়ে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করলেও ফেরেশতারা বলবেন, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন রাসুল (সা.) বলবেন, ‘যারা আমার পরে দ্বীনকে বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়০২ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ