পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তঃসত্ত্বাসহ দুই নারী নিহত
Published: 10th, February 2025 GMT
অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় দুজন নারী নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। তাঁদের একজন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
ওই শরণার্থীশিবিরে ফিলিস্তিনি পরিবারের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল রোববার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, অভিযানে সোন্দস জামাল মুহাম্মদ শালাবি নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁর স্বামী।
২৩ বছর বয়সী শালাবি ও তাঁর গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো যায়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আহত দম্পতিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাহাফ ফৌয়াদ আবদুল্লাহ আল-আশকার নামের ২১ বছর বয়সী আরেক নারী ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিজ বাড়িতে নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানায়, রোববার দিনের শুরুতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারেম অঞ্চলে শরণার্থীশিবিরে ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার নিয়ে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় নজরদারির বিমানগুলো খুব নিচ দিয়ে উড়ে যায় এবং হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই এলাকাটিতে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ আর বিস্ফোরণের জোরালো শব্দ শোনা গেছে।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের তুলকারেম ব্যাটেলিয়ন জানায়, নুর শামস এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এর আগে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, হতাহতের খবর জানার পরও ওই শরণার্থীশিবিরে সোসাইটির চিকিৎসা দলকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা ওই শরণার্থীশিবিরে ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে’ জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। ওই এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিন, তুলকারেম ও তুবাসের ফারা এলাকায় থাকা শরণার্থীশিবিরগুলোতে কয়েক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় নুর শামস এলাকায় শরনার্থীশিবিরেও অভিযান চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজায় ‘জাতিগত নির্মূল’ চালানোর ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কি সম্ভব২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননেতজারিম করিডর ছেড়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী১০ ঘণ্টা আগেকয়েক সপ্তাহের অভিযান আর হামলায় জেনিন ও তুলকারেম এলাকা থেকে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় গত মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে হামলার তীব্রতাও।
আরও পড়ুন ইসরায়েলের কাছে ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র–সরঞ্জাম বিক্রিতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদন০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শরণ র থ শ ব র ত হয় ছ ন ইসর য় ল এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।