কানাডা যাওয়ার পর ‘নিখোঁজ’ ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়
Published: 10th, February 2025 GMT
কানাডার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৫০ হাজার বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীকে ‘গড়হাজির’ (নো-শো) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা পড়াশোনার অনুমতি (স্টাডি পারমিট) নিয়ে আসার পরও পড়াশোনা শুরু করেননি। ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে প্রকাশিত দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী স্টাডি পারমিট নিয়ে যাওয়ার পরও পড়াশোনা শুরু করেননি।
ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী কানাডায় যাওয়ার পর কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেননি বা পড়াশোনা শুরু করেননি। ভারত সরকারের কাছে এসব শিক্ষার্থীর অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য বা রেকর্ডও নেই। গণমাধ্যমগুলোর প্রশ্ন, এ শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী কানাডায় গিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। কতজন যুক্তরাষ্ট্র চলে গিয়েছে তার হিসাব কানাডার কাছে নেই। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কোথায় আছেন তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।
আরও পড়ুনবিশ্বব্যাংকে ইন্টার্নশিপের আবেদন শুরু, ঘণ্টাপ্রতি বেতন, নেই ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা১৫ জানুয়ারি ২০২৫ভারতের গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, কানাডায় প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী, যাঁদের নাম কর্তৃপক্ষের কাছে অজানা, তাঁরা শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে নিজেদের ভরণপোষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের চাকরি বেছে নিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ভুয়া কলেজের কারণে প্রতারিত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা কানাডায় পৌঁছানোর পর জানতে পেরেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া বা সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। অন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে কানাডায় কাজে প্রবেশের জন্য ছাত্র ভিসাব্যবস্থার অপব্যবহার করেছেন, দেশটির টিউশন ফি আগে থেকে পরিশোধ না করার নীতিকে কাজে লাগিয়েছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন তাঁদের থাকার খরচ বহন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চাকরি শুরু করেছেন। কিছু শিক্ষার্থী যাঁরা সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা করতে চান কিন্তু সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি, তাঁরা কম পরিচিত কলেজ থেকে অফার গ্রহণ করে পড়ছেন।
হরিয়ানার পঞ্চকুলার ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী কানাডার ব্র্যাম্পটনের নামী কলেজে ভর্তি হয়েছেন ভেবে কানাডায় পৌঁছান। কিন্তু ভর্তির চিঠিতে ঠিকানাটি ছিল একটি ছোট অফিসের, সেখানে কোনোও শ্রেণিকক্ষ ছিল না। তিনি বলেন, ‘তারা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) আমাকে বলল ক্লাস শিক্ষার্থীতে পূর্ণ আছে এবং আমাকে তারা অপেক্ষা করতে বলল। সপ্তাহ যখন কেটে গেল, আমি বুঝতে পারলাম কলেজটি ভুয়া। ভাগ্য ভালো ১২ লাখ “টিউশন ফি”র মধ্যে আমি মাত্র ৪ দশমিক ২ লাখ রুপি পরিশোধ করেছিলাম।’
আরও পড়ুনট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে চান, পারবেন কি ১২ জানুয়ারি ২০২৫হরিয়ানার ওই শিক্ষার্থী কেবল ফোনে শিক্ষার্থীদের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই এজেন্ট চার লাখ রুপি দেওয়ার পর তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অতিরিক্ত ঋণ না নিয়ে খণ্ডকালীন কাজের মাধ্যমে বাকি ফি তিনি দিতে পারবেন। এরপর তিনি স্থানীয় একটি পেট্রলপাম্পে কাজ শুরু করেন।
গুজরাটের ভালসাদ এলাকার ২৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী স্বীকার করেছেন, তিনি ২ বছরের জন্য ৭ দশমিক ৫ লাখ রুপি ফি দিয়ে একটি কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কানাডায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রির খরচের চেয়ে এটি গড়ে তিন গুণ কম। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার অনেকেই এটা করেছেন এবং আমিও তা–ই করেছি। এটাই ছিল আমার একমাত্র উপায়। তা ছাড়া যাঁরা ভালো কলেজে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরাও আমার মতো একই কাজ করেছেন। তাঁদের অনেকের ২৫ লাখ বা তার বেশি ঋণ আছে।’ বর্তমানে তিনি দুটি চাকরি করছেন খরচ মেটানোর জন্য। একটি রেস্তোরাঁয় ও অন্যটি রাতে খাবার ডেলিভারির কাজ।
টাইমস অব ইন্ডিয়া যে যে শিক্ষার্থীর খোঁজ পেয়েছে বা তাঁদের সম্পর্কে জানতে পেরেছে, তাঁদের বেশির ভাগই গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। বেশির ভাগেরই গল্প একই ধরনের। তেলেঙ্গানার খাম্মাম এলাকার ২৬ বছর বয়সী যুবক সারেতে একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু কখনো ক্লাসে যাননি। তিনি এখন একটি মুঠোফোনের দোকানে পূর্ণকালীন কাজ করেন, এতে প্রতি ঘণ্টায় মেলে সাত ডলার। একইভাবে অন্ধ্র প্রদেশের ওঙ্গলের ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী টরন্টোতে ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুনকানাডা দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশি শিক্ষার্থী কমাচ্ছে, কমবে ১০ শতাংশ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, কিছু ছাত্র কানাডাকে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দ্বার হিসেবে ব্যবহার করছেন। সাবেক ফেডারেল অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হেনরি লটিন বলেন, নিখোঁজ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই সীমান্ত অতিক্রম করেননি বরং কানাডায় কাজ করছেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করছেন। গত বছর কানাডায় আশ্রয় দাবি করা বিদেশি ছাত্রদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমপক্ষে ১০ শতাংশ ছাত্র ভিসাধারীর হিসাব পাওয়া যায়নি।
কানাডা ২০১৪ সালে চালু হওয়া International Student Compliance Regime-এর অধীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বছরে দুবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে স্টাডি পারমিটের শর্ত মেনে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে কি না, তা নিশ্চিত করা যায়। ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘নো-শো’ হার ভিন্ন। ফিলিপাইনের নো-শো হার ২ দশমিক ২ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ইরানের ১১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং রুয়ান্ডার ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে এ সময় পড়তে যাওয়া মোট ১১ হাজার ৯৪৮ জন। যার মধ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কানাডায় এসে ইউনিভার্সিটি বা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি অর্থাৎ তাঁরা পড়াশোনার জন্য সেখানে যাননি। ভারতের ক্ষেত্রে প্রায় ২০,০০০ শিক্ষার্থী নো-শো হিসেবে রিপোর্ট হয়েছে, যা তাদের মোট শিক্ষার্থীর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
আরও পড়ুনকানাডায় পড়তে আসা ৫০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ‘গরহাজির’, কোন দেশের কত১৬ জানুয়ারি ২০২৫অনেকেই ধারণা করছেন, স্টাডি পারমিটের আসা শিক্ষার্থীরা বড় বড় শহরগুলোতে অবৈধভাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। উল্লেখ্য, কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট না থাকলে বৈধভাবে কোথাও কাজ করা সম্ভব না। এ বিরাট সংখ্যার বিদেশে শিক্ষার্থীদের আগামীতে বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কানাডার চিকিৎসাব্যবস্থা সরকারি। সে কারণে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁকে সরকারি চিকিৎসা নিতে যেতে হবে, তখন পুলিশ ধরে ফেলতে পারে। অন্যদিকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কানাডা খুব শিগগিরই কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
দেশটির সাবেক অর্থনীতিবিদ হেনরি লোটিন প্রস্তাব দিয়েছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের কানাডায় আসার আগেই পূর্ণ টিউশন ফি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা উচিত, যাতে ভুয়া আবেদনকারীদের সংখ্যা কমানো যায়। রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেন পুলিশ (আরসিএমপি) এই ইস্যুতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তদন্ত চালাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০ হ জ র ক জ কর কর ছ ন র জন য ধরন র সরক র দশম ক করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।