সাগরদাঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০
Published: 12th, February 2025 GMT
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলামকে দায়িত্ব পালন করতে না দিতে কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন এই তালা ভাঙতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে ইউপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাঁরা বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের সহযোগী মোস্তাফিজুল ইসলামকে কোনোভাবেই চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁরা মেনে নেবেন না। তাঁরা কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকে এই চেয়ারে বসতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তালা খুলে না দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন তালা ভেঙে ফেলেন। অন্য পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলামের পক্ষের মুজাহিদুল ইসলাম (৪৪), মাজাহারুল ইসলাম (৪২) ও গোলাম মোস্তফাকে (৪৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের কারও মাথা ফেটে গেছে, কারও হাত–পা ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলাম ৫ আগস্টের পরে ওই চেয়ারে বসে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত আছেন। বিভিন্ন সময় তিনি বিএনপিসহ এই সরকারের নামে বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ছিল। সে কারণেই তাঁকে দায়িত্ব পালন করতে না দিতে এলাকার মানুষজন ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ওই তালা চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন ভেঙে ফেলতে গেলে তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
মোস্তাফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কেশবপুর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপরও দলীয় মনোনয়নে তিনি নির্বাচিত হননি। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরকার পরিবর্তনের পরে বিএনপির লোকজন তাঁকে কোনোভাবেই চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিতে চান না। এ নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তিনি অভিযোগ করেন, আজকের মারামারিতে তাঁর বাবাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চিংড়া বাজারে অবস্থিত। এই সংঘর্ষের সময় বাজারে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তখন মানুষ ভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এখন এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার এমদাদুল হক বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কেশবপুরের ইউএনও জাকির হোসেন বলেন, সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। একটি গন্ডগোলও হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত।
এর আগে গত সপ্তাহে কেশবপুরের বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগসমর্থিত চেয়ারম্যান হওয়ায় সেখানেও বিএনপির কর্মীরা তালা ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক শবপ র স ঘর ষ স গরদ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।