ঢাকার ধামরাইয়ে পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আলাদীনস পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত জখম হয়েছে। হামলাকারীরা শিক্ষার্থীদের আটটি বাসে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বুধবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীনস পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মিরপুর থেকে ‘বনফুল আদিবাসী গ্রিন হার্ট স্কুল ও কলেজের’ ছয় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ পার্কে পিকনিকে যায়।

পুলিশ, আহত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনভর হৈ-হুল্লোড়ের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পার্কের সুইমিংপুলে নামে। এ সময় পার্ক কর্তৃপক্ষের লকারে মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে যায় তারা। সুইমিং থেকে উঠে অনেকেই মোবাইল ফোন লকারে পায়নি। এ নিয়ে পার্কের কর্মচারী মো.

রিয়াদের সঙ্গে কয়েক শিক্ষার্থীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। রিয়াদের সহকর্মীরা এসে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সুইমিংপুল-সংলগ্ন ভবনের থাই গ্লাস ভাঙচুর করে। জিনিসপত্র ফেরত না পেলেও শিক্ষকরা বুঝিয়ে ফেরার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাড়িতে ওঠেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় পার্কের কর্মচারীরা জোট বেঁধে লাঠিসোটা, রড নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় এলোপাতাড়ি আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে যায়; পা ভেঙেছে কয়েক শিক্ষার্থীর। আতঙ্কে কান্নাকাটি করে শিক্ষার্থীরা। অনেকে গাড়ির মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শিক্ষকরা চেষ্টা করেও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে পারেননি। তারাও মারধরের শিকার হন। এ সময় পার্কের কর্মচারীরা গাড়িতে থাকা ব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গুরুতর আহত ছয় শিক্ষার্থীকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতাল ও একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

বনফুল আদিবাসী গ্রিন হার্ট স্কুল ও কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মরিয়ম জামিলা বলেন, পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে রেখে যাওয়া জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ছিল। তাৎক্ষণিক বিতণ্ডার সমাধান হলেও পরে এভাবে তারা হামলে পড়বে কল্পনাও করিনি। তারা শিক্ষার্থীদের রড দিয়ে পিটিয়েছে। মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলেও থামেনি। একটার পর একটা বাসে হামলা করেছে। আমরা শিক্ষকরা ঘটনার আকস্মিকতায় বিহব্বল হয়ে পড়ি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না! পুলিশে জানালে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আমরা সন্তানদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকিদুল ইসলাম বলেন, ‘লকার থেকে ছাত্রদের মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে পার্কের কর্মচারীরা স্থানীয়দের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা আটটি বাসে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আমাদের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পার্কের মালিক আলাউদ্দিন বলেন, ‘লকারে রাখা মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ এনে পার্কের কর্মচারী রিয়াদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে কয়েক কর্মচারীকে মারপিট ও পার্কে ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হামলার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’

ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন সপত র পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ