ধামরাইয়ে পিকনিকে গিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষের হামলায় রক্তাক্ত ২০ শিক্ষার্থী
Published: 12th, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আলাদীনস পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত জখম হয়েছে। হামলাকারীরা শিক্ষার্থীদের আটটি বাসে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীনস পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মিরপুর থেকে ‘বনফুল আদিবাসী গ্রিন হার্ট স্কুল ও কলেজের’ ছয় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ পার্কে পিকনিকে যায়।
পুলিশ, আহত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনভর হৈ-হুল্লোড়ের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পার্কের সুইমিংপুলে নামে। এ সময় পার্ক কর্তৃপক্ষের লকারে মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে যায় তারা। সুইমিং থেকে উঠে অনেকেই মোবাইল ফোন লকারে পায়নি। এ নিয়ে পার্কের কর্মচারী মো.
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় পার্কের কর্মচারীরা জোট বেঁধে লাঠিসোটা, রড নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় এলোপাতাড়ি আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে যায়; পা ভেঙেছে কয়েক শিক্ষার্থীর। আতঙ্কে কান্নাকাটি করে শিক্ষার্থীরা। অনেকে গাড়ির মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শিক্ষকরা চেষ্টা করেও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে পারেননি। তারাও মারধরের শিকার হন। এ সময় পার্কের কর্মচারীরা গাড়িতে থাকা ব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গুরুতর আহত ছয় শিক্ষার্থীকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতাল ও একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
বনফুল আদিবাসী গ্রিন হার্ট স্কুল ও কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মরিয়ম জামিলা বলেন, পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে রেখে যাওয়া জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ছিল। তাৎক্ষণিক বিতণ্ডার সমাধান হলেও পরে এভাবে তারা হামলে পড়বে কল্পনাও করিনি। তারা শিক্ষার্থীদের রড দিয়ে পিটিয়েছে। মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলেও থামেনি। একটার পর একটা বাসে হামলা করেছে। আমরা শিক্ষকরা ঘটনার আকস্মিকতায় বিহব্বল হয়ে পড়ি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না! পুলিশে জানালে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আমরা সন্তানদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকিদুল ইসলাম বলেন, ‘লকার থেকে ছাত্রদের মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে পার্কের কর্মচারীরা স্থানীয়দের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা আটটি বাসে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আমাদের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পার্কের মালিক আলাউদ্দিন বলেন, ‘লকারে রাখা মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ এনে পার্কের কর্মচারী রিয়াদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে কয়েক কর্মচারীকে মারপিট ও পার্কে ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হামলার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।