আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে খুলনার ৯ উপজেলার অন্তত ২৪ ইউপি চেয়ারম্যান চলে গেছেন আত্মগোপনে। কারাগারে রয়েছেন চারজন। এসব ইউনিয়নের কোথাও সরকারি কর্মকর্তা আবার কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারাও ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। ফলে বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে লুকিয়ে আছেন ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা ও অপহরণ মামলা রয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তৌহিদ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও যান না তিনি। 

স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। 
লুকিয়ে আছেন উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দে। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন কবিরাজ কোনো রকম পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। 

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় বিএনপির লোকজনের হুমকি-ধমকির কারণে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। 

ডুমুরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, দু’জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে জানানো হয়েছে।

দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিহির মণ্ডল আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। শুরুতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.

জাহাঙ্গীর জুবায়েরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে গত ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম হালদারকে।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল পলাতক থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। প্রায় ২৯ হাজার মানুষের বাস এ ইউনিয়নটিতে। ইউপি সচিব সঞ্জয় মণ্ডল জানান, চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি বদলি হওয়ায় দায়িত্ব পান 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তিনি উপজেলার প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সব কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। 

ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কোহিনুর আলম বলেন, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়নপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এ ছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম না চলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বিকল্প হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। 

এ ছাড়া বটিয়াঘাটার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান বিধান রায়, সুরখালির জাকির হোসেন লিটু, ভান্ডারপাড়ার ওবায়দুল হক, আমিরপুরের জি এম মিলন ও বালিয়াডাঙ্গার আসাফুর রহমান আত্মগোপনে রয়েছেন। 

রূপসার ৫ চেয়ারম্যানের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা পলাতক। আইচগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ, শ্রীফলতলা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক সরদারের জায়গায় ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে প্রশাসন। 

নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস শেখ, টিএসবি ইউনিয়ন পরিষদের মো. জাহাঙ্গীর শেখের বদলে ইউপি সদস্য আসাবুর রহমান, ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মিজানের জায়গায় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম নন্দুকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ মেনন রায়, বারাসাতের কে এম আলমগীর হোসেন, ছাগলাদাহের দ্বীন ইসলাম, ছাচিয়াদাহের বুলবুল আহমেদ ও মধুপুরের শেখ মো. মহসীন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম ওয়াহিদুজ্জামান।

দিঘলিয়ার সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, গাজীরহাটের ঠান্ডা মোল্লা, বারাকপুরের পাভেল গাজী, যোগীপোলের সাজ্জাদুর রহমান লিংকন পলাতক রয়েছেন। ফুলতলার আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।

পাইকগাছার গদাইপুরের  চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম, কপিলমুনির চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার ও লতার কাজল কান্তি বিশ্বাস কারাগারে রয়েছেন। সোলাদানার চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী, চাঁদখালীর শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস ও লস্করের কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আত্মগোপনে রয়েছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ল ইসল ম সদস য আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ