সাড়ে ২৫ লাখ টাকায় অপহৃত ৯ জেলে মুক্ত, ফেরেনি ৬ জন
Published: 13th, February 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরের চিসখালী থেকে ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে অপহরণের ১৭ দিন পর মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে নয়জনকে মুক্তি দিয়েছে বনদস্যু মজনু বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় তাদের জঙ্গল থেকে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় বনদস্যু মজনু বাহিনীর সদস্যরা। জেলেরা বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাড়িতে পৌঁছায়।
গত ২৭ জানুয়ারি ভোরে সুন্দরবনের ডাকাত আব্দুল আলমি ওরফে দয়াল বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরে নিরীহ জেলেদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় জেলেরা আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদের প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একইসঙ্গে দুবলার চরের কোস্টগার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে। হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা একটি বন্দুক ও ৩৬ রাউন্ড গুলিসহ তিন বনদস্যুকে আটক করে। পরে অস্ত্র ও গুলিসহ তাদের সুন্দরবনের কোস্ট গার্ডের কাছে সোপর্দ করে। কিন্তু এ সময় ডাকাতরা সেখান থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে জীবিত উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনা
হরিণের মাংস জব্দ, শিকারি চক্রের ৩ সদস্য শনাক্ত
মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে সাত জনের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। একজনের বাড়ি শ্যামনগরে ও আরেক একজনের বাড়ি খুলনায়।
ফিরে আসা জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আজাহারুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হাফিজুর রহমান, শাহীনুর আলম, রাসেল, শাহাজান ঢালী, নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার শাহ্ আলম। একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে, মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় ছয়জন জেলে বনদস্যু মজনু বাহিনীর কাছে আটক রয়েছে। তাদের মধ্যে আশাশুনির চাকলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের অরাফাত হোসেন ও শাহাজান গাজী।
অপহৃত চাকলা গ্রামের শাহাজান গাজীর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, স্বামী বাড়ি আসছে খবর পেয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে বেড়িবাঁধের উপর বসে ছিলেন। প্রতাপনগরের সাতজন আসলেও চাকলা গ্রামের তিনজন ফিরে আসেনি। এত টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বর গোলাম রসুল জানান, মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার অর্থাৎ মোট প্রায় ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে নয়জনকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতরা। বাকি ছয়জনের মধ্যে আমার গ্রামের তিনজন রয়েছে। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় তাদের এখনো জিম্মি করে রেখেছে ডাকাতরা।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী তার ইউনিয়নের সাতজন জেলে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাকিদের কাছে নৌকা থাকায় এবং মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় ডাকাতরা তাদের ছাড়েনি।
ঢাকা/শাহীন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন স ন দরবন উপজ ল র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস