সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলসহ সাত দফা দাবি
Published: 13th, February 2025 GMT
সুন্দরবন রক্ষায় বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র’ (রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র) বাতিলসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ওই দাবিতে খুলনা নগরে ‘নাগরিক পদযাত্রা’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কৃষি-শিল্প-পাট ও পরিবেশ রক্ষায় গঠিত নাগরিক কমিটি। পরে একই দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নাগরিক কমিটির দাবিগুলো হচ্ছে সুন্দরবন ধ্বংসকারী ‘রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র’ অবিলম্বে বন্ধ করা; বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা; সুন্দরবন বাঁচাতে এখনই বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারী শিল্প স্থাপনা নিষিদ্ধসহ পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) নীতিমালার বাস্তবায়ন; সুন্দরবনে যারা বিষ দিয়ে মাছ ধরছে, দ্রুত তদন্ত করে সেই সব অপরাধীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা ও খুলনায় একটি পরিবেশ আদালত স্থাপন করা; সুন্দরবন ও সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করা; সুন্দরবন রক্ষায় যুগোপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক ‘সুন্দরবন রক্ষায় বিশেষ আইন’ তৈরি করা এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা।
১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ উপলক্ষে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাগরিক পদযাত্রা শুরু হয় নগরের শহীদ হাদিস পার্ক থেকে। ওই পদযাত্রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। ওই কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ওই কমিটি।
সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সভাপতি কুদরত-ই-খুদা ও সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ। সমাবেশ শেষে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা এবং খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোর মাধ্যমে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সুন্দরবনের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে প্রকৃতিবিধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আশপাশে গড়ে উঠেছে ভারী শিল্পকারখানা। নদীতে বিষ ঢেলে শিকার করা হচ্ছে মাছ। পর্যটকেরা প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্য বন ও বনসংলগ্ন নদীতে ফেলছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারি যথেষ্ট নয়। এভাবে চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতেই সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই সঙ্গে তলিয়ে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন কৃষিজমি ও বসতভিটা।
ইতিমধ্যে এ ধরনের আলামত শুরু হয়েছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বনের উপকূলবর্তী বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রতিটি জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড়ের পর কিছু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বহুল আলোচিত পরিবেশবিধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হওয়ার পর যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লাসংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার বন্ধ হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে মাছ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় নদীতে মাছ কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কারণে চারণভূমির পরিমাণ কমে গেছে, এতে গবাদিপশু পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকার একটি বড় ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে, বাধ্য হয়ে দূরদূরান্তে কাজে যেতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।
স্মারকলিপি পেশ করার সময় কৃষি-শিল্প-পাট ও পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসীন, মনোজ দাশ, গাজী নওশের আলী, তসলিমা খাতুন, সহসভাপতি এস এ রশীদ, মুনীর চৌধুরী সোহেল, মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র স ম রকল প উপদ ষ ট পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ
জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।
গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি।
উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।