রাজশাহীতে পদ্মা নদীর চরের খাঁড়ি। চারপাশে ঘন নলবনের মধ্যে বসে আছে লাল মুনিয়া। পাখিপ্রেমী একটি দল সন্তর্পণে নলবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে লাল মুনিয়া দেখছে। মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই হুট করে পাখিগুলো ‘অ্যালার্ম কল’ দিয়ে লুকিয়ে গেল।

ওই দলের সদস্যরা ধারণা করলেন, আশপাশে হয়তো কোনো শিকারি প্রাণী হাজির হয়েছে। সেটা দেখার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকলেন। এরপর তাঁরা দেখলেন, ধীরগতিতে বাতাসে ভর করে উড়ে আসছে মুরগি কাপাসি পাখি।

ওই দলে ছিলেন সেভ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচারের রাজশাহী শাখার সভাপতি ইমরুল কায়েস। তিনি জানান, সম্প্রতি শিকারি পাখি মুরগি কাপাসির হাত থেকে লাল মুনিয়ার আত্মরক্ষার ওই দৃশ্য দেখেছেন। সেই সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী করেছেন মুরগি কাপাসির আকাশ থেকে নেমে আসার ছবি।

মুরগি কাপাসি বাংলাদেশে বিরল পরিযায়ী পাখি। এর ইংরেজি নাম  ‘Hen Harrier’। শীতে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের হাওর ও প্রত্যন্ত এলাকায় পাওয়া যায়। উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি। তবে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে মুরগি কাপাসি পাওয়া যায় না।

ইমরুল কায়েস জানান, সেদিন পাখি দেখার জন্য সেভ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। তাঁরা রাজশাহী শহরের আইবাঁধের নিচে নৌকায় পদ্মা নদী পার হয়ে চরের মধ্যে নেমে যান। উদ্দেশ্য পদ্মার চরের কিছু লাজুক পাখি দেখা, যারা দূরের একটি খাঁড়িতে থাকে। তাঁরা প্রায় ১৫ কিলোমিটার হেঁটে ওই খাড়ির কাছে পৌঁছান। সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। চরের মাঝখানে তাঁরা প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা একটা খাড়ির কাছে পৌঁছান। সামনেই পেয়ে যান কিছু অপূর্ব সুন্দর লাল মুনিয়া। কিছুক্ষণ পর পাখিগুলো ছোটাছুটি করে একটা সতর্কডাক (অ্যালার্ম কল) দিয়ে লুকিয়ে যায়। তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন, পাখিগুলো শিকারি প্রাণী উপস্থিতি টের পেয়েছে। এবং সত্যিই দেখা গেল আকাশ থেকে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে নেমে আসছে একটি মুরগি কাপাসি। এরা ছোট পাখি পেলেই ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু লাল মুনিয়া সতর্ক হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে ফিরে যেতে হয়। মুরগি কাপাসি খাঁড়ির এমাথা থেকে অপর মাথা পর্যন্ত একবার চক্কর দেয়। তাঁদের দিকেও একবার তাকায়। তারপর পাখিটি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়।

মুরগি কাপাসি জলাভূমি, পানির ধারের খোলা মাঠ, তৃণভূমি, আবাদি জমি ও পাহাড়ের পাদদেশে বিচরণ করে। সচরাচর একা থাকে। পরিযানের সময় অন্য কাপাসির সঙ্গে দেখা যেতে পারে। শিকারের সন্ধানে এরা বালিয়াড়ি, খোলা মাঠ, জলাভূমি ও জলাশয়ের সামান্য ওপরে উড়ে বেড়ায়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বললেন, মুরগি কাপাসি শিকারি পাখি। এদের কম দেখা যায়। তবে এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত। এর আগে তিনিও রাজশাহীতে পদ্মার চরে মুরগি কাপাসি দেখেছেন। বাংলাদেশ বন্য প্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি।

এ পাখি সম্পর্কে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ-পাখি (খ-২৬)’ বলছে, ‘ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা ভিন্ন। ছেলেপাখির লেজ, মাথা, বুক ও পিঠ কালচে ধূসর।  ডানার প্রান্ত-পালকের আগা ব্যাপক কালো। লেজ-ঢাকনির সরু ফিতা সাদা, পেট ও ডানার নিচের অংশ সাদা। মেয়েপাখির পিঠ কালচে বাদামি, ঘাড় ফিকে ও লেজউপরি-ঢাকনিতে স্পষ্ট সাদা ফিতা। পেটে মোটা লম্বালম্বি বাদামি দাগ ও ডানার নিচে ডোরা থাকে। ছেলে ও মেয়েপাখি উভয়ের চোখ সবুজে-হলুদ। ঠোঁট শিঙ-কালো। ঠোঁটের ঝিল্লি হালকা হলুদ। মুখ পাটকিলে এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে লম্বালম্বি দাগ ও চোখ বাদামি। ২টি উপপ্রজাতির মধ্যে সি সি সায়ানিয়াস বাংলাদেশে পাওয়া যায়।’

শিকারি পাখি মুরগি কাপাসি জলাভূমি, পানির ধারের খোলা মাঠ, তৃণভূমি, আবাদি জমি ও পাহাড়ের পাদদেশে বিচরণ করে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ