আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে খুলনার ৯ উপজেলার অন্তত ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন চারজন। এসব ইউনিয়নের কোথাও সরকারি কর্মকর্তা আবার কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে তারা সময় দিতে না পারায় সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক লাখ মানুষ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বটিয়াঘাটার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান বিধান রায়, সুরখালির জাকির হোসেন লিটু, ভান্ডারপাড়ার ওবায়দুল হক, আমিরপুরের জিএম মিলন ও বালিয়াডাঙ্গার আসাফুর রহমান আত্মগোপনে রয়েছেন।

রূপসার ৫ চেয়ারম্যানের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্টের পর থেকে তারাও পলাতক। আইচগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ, শ্রীফলতলা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক সরদারের জায়গায় ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে প্রশাসন।

নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মো.

ইলিয়াস শেখ, টিএসবি ইউনিয়ন পরিষদের মো. জাহাঙ্গীর শেখের বদলে ইউপি সদস্য আসাবুর রহমান, ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মিজানের জায়গায় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম নন্দুকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ মেনন রায়, বারাসাতের কে এম আলমগীর হোসেন, ছাগলাদাহের দ্বীন ইসলাম, ছাচিয়াদাহের বুলবুল আহমেদ ও মধুপুরের শেখ মো. মহসীন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম ওয়াহিদুজ্জামান।

দিঘলিয়ার সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, গাজীরহাটের ঠান্ডু মোল্লা, বারাকপুরের পাভেল গাজী, যোগীপোলের সাজ্জাদুর রহমান লিংকন পলাতক রয়েছেন। ফুলতলার আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।

অপরদিকে, পাইকগাছার গদাইপুরের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম, কপিলমুনির চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার ও লতার কাজল কান্তি বিশ্বাস কারাগারে রয়েছেন। সোলাদানার চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী, চাঁদখালীর শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস ও লস্করের কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আত্মগোপনে রয়েছেন।

ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা ও অপহরণ মামলা রয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তৌহিদ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও যান না তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

একইভাবে লুকিয়ে আছেন উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দে। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন কবিরাজ কোনো রকম পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় বিএনপির লোকজনের হুমকি-ধমকির কারণে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। 

ডুমুরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, দু’জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে জানানো হয়েছে।

অপরদিকে, দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিহির মণ্ডল আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। শুরুতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর জুবায়েরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে গত ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম হালদারকে।

একইভাবে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল পলাতক থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। প্রায় ২৯ হাজার মানুষের বাস এ ইউনিয়নটিতে। ইউপি সচিব সঞ্জয় মণ্ডল জানান, চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি বদলি হওয়ায় দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তিনি উপজেলার প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সব কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কোহিনুর আলম বলেন, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়নপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এ ছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম না চলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বিকল্প হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

নূরুজ্জামান//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ল ইসল ম সদস য আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ