স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে অস্বাভাবিক যৌনতা অপরাধ নয়, আদালতের রায়ে ভারতে বিক্ষোভ
Published: 15th, February 2025 GMT
স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে অস্বাভাবিক যৌনতা অপরাধ নয়। মধ্য ভারতের ছত্তিশগড় হাইকোর্টের এই রায়ে ছাড়া পেয়েছেন ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, জবরদস্তি অস্বাভাবিক বা অপ্রাকৃত যৌনতার পরপরই যাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।
নিম্ন আদালত ওই ব্যক্তিকে ২০১৯ সালে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘অনিচ্ছাকৃত হত্যার’ অভিযোগ আনা হয়েছিল। নিম্ন আদালতের রায়ে সেই ব্যক্তির ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল। গত সপ্তাহে হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি নরেন্দ্র কুমার ব্যাস গত সোমবার ওই রায়ে বলেন, ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ বলে গণ্য হয় না। ফলে স্ত্রীর অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন অথবা অসম্মতিতে অস্বাভাবিক যৌনতার অভিযোগে কোনো স্বামীকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় না।
ওই রায় দেশের বহু মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ, আন্দোলনকর্মী ও আইনজীবীদের এক বড় অংশ নতুনভাবে প্রচার শুরু করেছেন। তাঁরা চান, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনা হোক। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের মতামত তুলে ধরেছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও জেন্ডার অধিকারকর্মী সুকৃতি চৌহান বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই মানুষটির মুক্তি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আইনের চোখে রায় ঠিক হতে পারে, কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে তা জঘন্য। এই রায় আমাদের আইনি ব্যবস্থার অন্ধকার দিকটা ফুটিয়ে তুলেছে।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘এই রায় আমাদের ভেতর ভেতর নড়িয়ে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব, আইন বদল হওয়া উচিত।’
ছত্তিশগড়ের আরেক আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেছেন, ‘এই ধরনের রায় এমন বার্তা পাঠায় যে, তুমি স্বামী বলে যা খুশি করার অধিকার তোমার আছে। এমনকি তুমি খুন করেও পার পেয়ে যাবে।’
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘এমন রায় এই প্রথম হলো না। তবে এবার আক্রোশ বেশি। কারণ, ওই জঘন্য অত্যাচার ওই ব্যক্তির স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ঘটনাটি ২০১৭ সালের। স্বামী একজন গাড়িচালক। সেই বছর ১১ ডিসেম্বর রাতে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি অস্বাভাবিক যৌনতায় মেতে ওঠেন। তারপর কাজে বেরিয়ে গেলে স্ত্রী তাঁর বোন ও অন্য আত্মীয়দের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে যান। সেখানে কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের জবানবন্দিতে ওই নারী বলেন, স্বামীর জবরদস্তি অস্বাভাবিক যৌনতার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নিম্ন আদালত ওই নারীর জবানবন্দি ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে রায় দেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অস্বাভাবিক যৌনতার তীব্রতায় ওই নারীর পায়ুপথ ও তলপেট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই, হাইকোর্টের রায়ে সামান্যতম সহানুভূতিটুকুও দেখা যায়নি।’
পৃথিবীর ৩০টি দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়। ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরব। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ওই ধারা ১৮৬০ সালে চালু হয়েছিল। সেই ৩৭৫ ধারা বাতিল করার জন্য বহু আবেদনও জমা পড়েছে।
ব্রিটিশ সরকার ১৯৯১ সালে ওই ধারা বাতিল করে দেয়। অথচ ভারতে সম্প্রতি যে নতুন ন্যায়সংহিতা তৈরি হয়েছে, তাতে ওই ধারা একই রকম রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি এক সরকারি সমীক্ষায় জানা গেছে, ৩২ শতাংশ বিবাহিত নারী তাঁদের স্বামীদের হাতে শারীরিক, যৌন ও মানসিক সহিংসতা এবং ৮২ শতাংশ শুধু যৌন হিংস্রতার শিকার হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইনজ ব হয় ছ ল অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।