ঘরে মায়ের রক্তাক্ত লাশ, পুলিশের দাবি একমাত্র ছেলেই খুনি
Published: 15th, February 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নিজ বাড়ির শোবার ঘর থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। একই ঘরে ঘুমিয়েছিলেন তার স্বামী, একমাত্র ছেলে ও এক নাতি। পুলিশ বলছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাসিমা বেগম (৫৫) আনন্দপুর গ্রামের মিজান মোল্লার স্ত্রী। এ ঘটনায় তার ছেলে সিয়াম আটক হয়েছেন। নাসিমা-মিজান দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সিয়াম সবার ছোট।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাতে একই ঘরে নাসিমা তার স্বামী, ছেলে সিয়াম ও এক নাতিকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে মিজান মোল্লা মসজিদে নামাজ পড়তে যান। ৭টার দিকে ঘর থেকে চিৎকার চেচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন এসে দেখেন, খাটের ওপর নাসিমার রক্তাক্ত মরদেহ।
জানা গেছে, সিয়াম মানসিকভাবে অসুস্থ। ছেলেকে চোখে চোখে রাখতেন মা। বাইরে যেতে দিতেন না।
নাসিমার স্বামী মিজান মোল্লা জানান, তিনি সকাল ৬টার দিকে মসজিদে যান। নামাজ পড়ে হাঁটাহাঁটির সময় খবর পান, তার স্ত্রীকে কে বা কারা কুপিয়েছে। বাড়িতে এসে বিছানায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি জানান, তার ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি খুন করতে পারেন না।
একই মন্তব্য করে সিয়ামের বোন নাদিরা বেগম জানান, তার ভাই বোকাসোকা। তিনি ২০ টাকার নোটও চেনেন না। তিনি কীভাবে মাকে খুন করবেন। এটি তার বিশ্বাস হয় না। অন্য কেউ হত্যা করেছে। সকালে খবর পেয়ে তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, তিনিও সকালে খবর পেয়ে সিয়ামদের বাড়িতে যান। সিয়ামের স্বজনেরা দাবি করছিলেন, জমি নিয়ে প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম শাহীন ও এমদাদুলদের সঙ্গে তাদের মামলা চলছে। এ কারণে প্রতিবেশিরা ঘটনাটি ঘটাতে পারেন। তবে সিয়ামের ভাগনে সাত বছরের ওমর ফারুক বলছে, তার মামাই তার নানিকে আঘাত করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুছা মিয়া বলেন, নাসিমার নাতির কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, ছেলেই মাকে হত্যা করেছেন। সিয়াম কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি প্রায়ই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। বারবার তাকে ফিরিয়ে আনা হতো।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমিউদ্দিন বলছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেছেন, তিনি বটি দিয়ে কুপিয়ে মাকে হত্যা করেছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য়
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।