শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে ১০ বছরের নাহিদ
Published: 16th, February 2025 GMT
তিন বছর ধরে নিজ বাড়িতেই শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে ১০ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু নাহিদ হোসেন। টাকার অভাবে তার বাবা-মা তাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, এমনকি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডও পাননি।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের দিনমজুর রুহুল আমিন ও সীমা খাতুনের প্রথম সন্তান নাহিদ। ছোটবেলায় স্বাভাবিক থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মানসিক ভারসাম্য হারানোর লক্ষণ দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য যা কিছু ছিল, তা বিক্রি করেও কোনো উন্নতি হয়নি।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, গ্রামবাসীর অভিযোগ ও বিরক্তির মুখে পড়ে নাহিদকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তার বাবা-মা। প্রতিবেশীদের মতে, সে মাঝে মাঝে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যদের ধাওয়া করে, তাই তাকে আটকে রাখা হচ্ছে।
নাহিদের বাবা রুহুল আমিন জানান, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হননি। স্থানীয় সমাজসেবা অফিসের এক কর্মচারী তাকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বলেছিলেন, যা দিতে না পারায় নাহিদ ভাতার কার্ড পায়নি।
নাহিদের মা সীমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একজন মা হয়ে নিজের সন্তানকে শিকলে বেঁধে রাখা কতটা কষ্টের, তা বোঝানোর ভাষা নেই। চিকিৎসার অভাবে সে দিন দিন আরও অসহায় হয়ে পড়ছে। আমি যদি মরে যাই, তখন কে দেখবে আমার ছেলেকে?
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এই ঘটনার বিষয়ে অবগত নন। তবে যদি কারো বিরুদ্ধে টাকা দাবির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, এখন শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং নাহিদকেও দ্রুত এই সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে, রাজশাহী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ কল্পনা রায় ভৌমিক জানান, কোনো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে শিকলে বেঁধে রাখা আইনত অপরাধ। এটি শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চরম নির্যাতন। তিনি অনুরোধ জানান, দ্রুত নাহিদের শিকল খুলে তার যথাযথ চিকিৎসা ও যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ কল
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহের শিকলবন্দী বিনন্দের জীবন
বিনন্দ ঋষির বয়স ২২ বছরের মতো। রুগ্ণ শরীর, এক পায়ে পরানো লোহার শিকল। মন চাইলেও কোথাও ছুটতে পারেন না। শিকলে সীমাবদ্ধ জায়গাতেই তাঁর হাসি-কান্না। ছয় বছর বয়স থেকেই বিনন্দকে শিকলবন্দী করে রাখতে হয়েছে পরিবারের। অর্থাভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারেননি বাবা। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়।
ফুলবাড়িয়া পৌরসভার হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা নিমাই চন্দ্র ঋষির ছেলে বিনন্দ ঋষি। নিমাই চন্দ্র কামারের কাজ করে জীবন চালান। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম বিনন্দ। তাঁকে বাড়ির আঙিনায় শিকলে আটকে রাখতে হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিনন্দ অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছিল। বয়স যখন তিন বছর, তখন হঠাৎ মুখে একধরনের ঘা দেখা দেয়। এর পর থেকে ক্রমাগত মুখ থেকে লালা পড়তে শুরু করে। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। একসময় অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। নিজের বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর, অন্যের বাড়িতে গিয়ে জিনিসপত্রের ক্ষতি করা এবং বাড়ি থেকে চলে যেত। ছেলের এমন আচরণের কারণে ছয় বছর বয়স থেকে তাঁকে শিকলবন্দী করে রাখতে শুরু করেন মা–বাবা। আর রাতের বেলায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। শিকল ছাড়া থাকলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় চলে যান, পরে খুঁজে আনতে হয়।
বিনন্দের মা চাম্মুনি ঋষি বলেন, ছেলের যখন চার বছর, তখন থেকেই তাঁর আচরণ কেমন জানি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সারা দিন শুধু চিল্লাচিল্লি করে। মানুষরে মারধর করে, ভাঙচুর করে, বাড়ি থেকে চলে যায়। তখন ছেলেকে শিকল দিয়ে রাখতে শুরু করেন। দরিদ্র বলে ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।
বাবা নিমাই চন্দ্র ঋষি বলেন, কামারের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। ছেলের চিকিৎসা করানোর টাকা তাঁদের নেই। সরকারিভাবে চিকিৎসার কোনো সুযোগ থাকলে তার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘ছেলেটি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ার পর থেকেই শিকলবন্দী অবস্থায় কাটাচ্ছে। বছর দু-এক আগেও শারীরিকভাবে হৃষ্টপুষ্ট ছিল, এখন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু বিনন্দের পরিবার খুবই দরিদ্র।’
বিনন্দের বিষয়টি নজরে আনা হলে ফুলবাড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিকলবন্দী তরুণের খোঁজ নেব। স্থানীয় ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে গেলে আমরা আর্থিক সহযোগিতা করব। এ ছাড়া যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা বা অন্য কোথাও নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে যে ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’