নিয়মের বেড়াজাল আর যান্ত্রিক চাপের মধ্যে শিক্ষা সফরের আয়োজন স্বস্তির শীতল বাতাস বইয়ে দেয় মনে। এমনই এক স্মরণীয় শিক্ষা সফর আয়োজন করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল শেষ শিক্ষা সফর। এ সফরের গন্তব্য ছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ। আমরা বিকেল ৪টায় আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। ক্যাম্পাসের সীমানা পেরিয়ে বাস যখন পথচলা শুরু করল, তখন থেকেই নাচ-গান আর হাসি-আনন্দে ভরপুর এক মুহূর্তে পরিণত হলো পুরো বাস। আমাদের আনন্দমুখর যাত্রায় সঙ্গী হলেন আইন বিভাগের শিক্ষিকা অধ্যাপক ড.
প্রায় ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর আমরা পৌঁছে যাই কক্সবাজার। ক্লান্ত চোখ আর অবসন্ন শরীরে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার পরই শুরু হয় নতুন উচ্ছ্বাস। সমুদ্রের ডাক উপেক্ষা করা যে অসম্ভব! হোটেল থেকে বেরিয়ে খালি পায়ে সবাই নেমে পড়ি সৈকতের নরম বালুচরে। প্রথম স্পর্শেই যেন সব ক্লান্তি মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। ঢেউয়ের মৃদু স্নিগ্ধতায় আমাদের মিতালি গড়ে ওঠে সমুদ্রের সঙ্গে। কখন যে ঘড়ির কাঁটা বেলা ২টায় পৌঁছেছে তা যেন বুঝতেই পারিনি।
খাবার শেষে যার যার মতো আবার ছুটে গেলাম সৈকতে। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম সূর্যাস্তের সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটির জন্য। নীল আকাশ ধীরে ধীরে রং বদলাতে শুরু করল। সূর্যের সোনালি আভা লালচে কমলাতে রূপ নিয়ে এক অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি করল। রাত ১০টায় সবাই একত্র হয়ে খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম। আমরা পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে চাঁদের গাড়িতে করে রওনা হলাম মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফের উদ্দেশে। মেরিন ড্রাইভ রোডের একপাশে সমুদ্রের গর্জন ও অন্যপাশে সবুজে মোড়ানো উঁচু পাহাড় থেকে দিচ্ছে সবুজের হাতছানি। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে যে কেউই বাধ্য। মেরিন ড্রাইভ সড়কে আমাদের এই যাত্রা যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক অপূর্ব সংলাপ। এই পথে যেতে আমরা কয়েকটি স্পটে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য অবলোকন করেছিলাম। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে দাঁড়িয়ে সাগর আর আকাশের মিলনরেখায় চোখ রেখে মুক্তির এক অনির্বচনীয় অনুভূতি হলো। সবশেষে ফেরার পথে হিমছড়িতে পাহাড়ের চূড়া থেকে রক্তিম আলোয় ঢেউ খেলা সাগর দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। আমরা পর দিন ভোরে উঠেই রওনা হলাম জাহাজ ঘাটের উদ্দেশে। ৯টার কিছুক্ষণ পর জাহাজ ছাড়ল। আমরা জাহাজের ডেকে এসে দাঁড়ালাম। খোলা আকাশ, মৃদু হাওয়া আর বিস্তৃত সমুদ্র এক অনন্য অনুভূতির সৃষ্টি করল। আমাদের কেউ কেউ খোলা ডেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত আবার কেউ গান ও আড্ডায় মেতেছে। আমরা জাহাজ থেকে নেমে নির্ধারিত রিসোর্টে পৌঁছে দ্রুত খাওয়া-দাওয়া সেরে বের হয়ে পড়লাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নীল আকাশ আর সমুদ্রের সঙ্গম যেন দিগন্তজুড়ে সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত রঙের খেলা। সেই নীল জলে ডুব দেয় ভ্রমণপ্রেমীদের দল। অনেকে সাইকেলে চড়ে ঘুরে দেখছে দ্বীপের সৌন্দর্য। বাতাসের ঠান্ডা শীতল পরশ আর সাগরের গর্জন সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি! কখন যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে টেরই পাইনি। লালচে আলোয় সেন্টমার্টিন তখন এক মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে। দ্বীপের নির্জনতা, জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো আর সাগরের গুঞ্জন মিলে এক সম্মোহনী আবহ সৃষ্টি করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ রমণ স ন দর য সব জ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।