জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলা একাডেমি এবং নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ সোমবার দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, বাংলা একাডেমিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় জানা যায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৮০টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন আহ্বান করা হলে ৫০ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ৪ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়; কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় মাত্র ৫০০ জনকে ডাকা হয়। এরপর ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে দেখা গেছে। এ ছাড়া চাকরিতে যোগ দেওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৪৫ জনই আগে থেকেই বাংলা একাডেমিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযানকালে নিয়োগ–সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ব্যক্তিরা নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত অংশে কম নম্বর পেলেও ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার তাঁদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া চূড়ান্ত ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে গোপনে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, যা স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় বলে দুদক দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

এদিকে বিসিএসআইআরে নানা আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানের সময় ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি’ অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে নিজস্ব ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন, ‘স্পেসিফিকেশন’ ও বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী কেনাকাটা না করে অর্থ উত্তোলনসহ অন্যান্য অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক দল।

সরেজমিনে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিসিএসআইআরের জন্য বিভিন্ন মেশিনারিজ কেনাকাটার টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই ওইসব মেশিনারিজ কিনে স্থাপন করা হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরে ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে টেন্ডার বাস্তবায়ন করে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদক টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই প্রকল্পের আওতায় রাসায়নিক কেনা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকার; কিন্তু পরে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার টেন্ডার দেখানো হয়েছে। ফলে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। দুদকের দল অভিযানের সময় ১১টি যন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পায়, যেগুলো কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেনা হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এগুলো আগামী অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হবে, যা সম্পূর্ণভাবে নিয়মবহির্ভূত।

এ ছাড়া টাঙ্গাইলে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ইনভয়েস’ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট ইনভয়েস চালানের ছায়ালিপিসহ অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। ইনভয়েসে অগ্রিম স্বাক্ষরের মাধ্যমে গুদামের কোনো চাল আত্মসাৎ হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দুদক টিমের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা গুদামগুলোতে যৌথ স্বাক্ষরে সিলগালা করেন। রেকর্ডপত্রের সঙ্গে গুদামে মজুত করা চালের পরিমাণের হিসাব যাচাই করে দুদক দল বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।

ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।

রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।

হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।

শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।

হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।

এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না