চরের চাষিদের জন্য আশীর্বাদ মিষ্টি আলু
Published: 17th, February 2025 GMT
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে মিষ্টি আলু। এ অঞ্চলে উৎপাদিত আলু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ইতোমধ্যে জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ চাষি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
গোবিন্দঞ্জের রাখালবুরুজ ইউনিয়নটি করোতোয়া নদীঘেঁষা। এ নদী-সংলগ্ন চরাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমে রূপ নেয় ধু ধু মরুভূমিতে। বিস্তীর্ণ চরে শুধু বালু আর বালু। কিছুই জন্মে না। বছরের পর বছর জমি পতিত থাকে। বছর তিনেক আগে এলাকায় আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। অমিত সম্ভাবনা দেখতে পান। পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্যপট।
এখন দিগন্তজুড়ে সবুজ আর সবুজ। থোকায় থোকায় মিষ্টি আলুর গাছ নজর কাড়ে সবার। বিশেষ জাতের এ আলু রপ্তানি হয় জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। দিন দিন চাহিদা বাড়ছে এ আলুর। দ্বার খুলছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়নে প্রকল্প নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে জাপান থেকে আনা হয় ‘কোকেই ১৪জিও’ জাতের মিষ্টি আলুর শাখা বা ডাল। সেই ডাল কেটে চারা তৈরি হয়েছে। সেগুলো রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কুঠিপাড়া, বড়দহ ও নয়াবাজারে, হরিরামপুর ইউনিয়নের নাওভাঙা, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বোচাদহ, বালুয়া, শালমারা এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কৃষকদের উৎসাহ দিতে তৈরি হয় ৪৫টি প্রদর্শনী ক্ষেত। এবার উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার টন। গত তিন বছর এ উপজেলা থেকে ৩৫ টন আলু জাপানে পাঠানো হয়। এতে প্রায় ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে, যা ৩০ লক্ষাধিক টাকার মতো। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
পারসোনাইডাঙ্গা এলাকার কৃষক বিপুল মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বছর ধরে এ আলুর চাষ করছি। এর চাহিদা প্রচুর। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই এবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ১৮০ মণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আড়াই লক্ষাধিক টাকার মতো পেয়েছি। খরচ বাদে অর্ধেকেরও বেশি লাভ হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক সেলিম সরকার বলেন, বালু মাটি ও পতিত জমিতে এই আলু ভালো হয়। একটি মিষ্টি আলুর ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম হয়। বাজারে এর চাহিদাও বেশ। এ কারণে দুই বছর ধরে এলাকার পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসছে। উৎপাদন বাড়াতে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, চরের পতিত জমি বছরের পর বছর অনাবাদি থাকত। সেখানে বিশেষ জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। সেই আলু বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে যায়। তিন বছরে ৩০ হাজার টন আলু জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এতে ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৩০ লক্ষাধিক।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে
খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।
ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।
হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় নাসম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।
খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।
কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’
পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা