গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে মিষ্টি আলু। এ অঞ্চলে উৎপাদিত আলু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ইতোমধ্যে জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ চাষি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
গোবিন্দঞ্জের রাখালবুরুজ ইউনিয়নটি করোতোয়া নদীঘেঁষা। এ নদী-সংলগ্ন চরাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমে রূপ নেয় ধু ধু মরুভূমিতে। বিস্তীর্ণ চরে শুধু বালু আর বালু। কিছুই জন্মে না। বছরের পর বছর জমি পতিত থাকে। বছর তিনেক আগে এলাকায় আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। অমিত সম্ভাবনা দেখতে পান। পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্যপট।
এখন দিগন্তজুড়ে সবুজ আর সবুজ। থোকায় থোকায় মিষ্টি আলুর গাছ নজর কাড়ে সবার। বিশেষ জাতের এ আলু রপ্তানি হয় জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। দিন দিন চাহিদা বাড়ছে এ আলুর। দ্বার খুলছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়নে প্রকল্প নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে জাপান থেকে আনা হয় ‘কোকেই ১৪জিও’ জাতের মিষ্টি আলুর শাখা বা ডাল। সেই ডাল কেটে চারা তৈরি হয়েছে। সেগুলো রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কুঠিপাড়া, বড়দহ ও নয়াবাজারে, হরিরামপুর ইউনিয়নের নাওভাঙা, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বোচাদহ, বালুয়া, শালমারা এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কৃষকদের উৎসাহ দিতে তৈরি হয় ৪৫টি প্রদর্শনী ক্ষেত। এবার উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার টন।  গত তিন বছর এ উপজেলা থেকে ৩৫ টন আলু জাপানে পাঠানো হয়। এতে প্রায় ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে, যা ৩০ লক্ষাধিক টাকার মতো। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
পারসোনাইডাঙ্গা এলাকার কৃষক বিপুল মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বছর ধরে এ আলুর চাষ করছি। এর চাহিদা প্রচুর। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই এবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ১৮০ মণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আড়াই লক্ষাধিক টাকার মতো পেয়েছি। খরচ বাদে অর্ধেকেরও বেশি লাভ হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক সেলিম সরকার বলেন, বালু মাটি ও পতিত জমিতে এই আলু ভালো হয়। একটি মিষ্টি আলুর ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম হয়। বাজারে এর চাহিদাও বেশ। এ কারণে দুই বছর ধরে এলাকার পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসছে। উৎপাদন বাড়াতে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, চরের পতিত জমি বছরের পর বছর অনাবাদি থাকত। সেখানে বিশেষ জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। সেই আলু বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে যায়। তিন বছরে  ৩০ হাজার টন আলু জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এতে ২৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৩০ লক্ষাধিক। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র উৎপ দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ